উত্তরকাশী (উত্তরাখণ্ড), 28 নভেম্বর: অবশেষে উদ্ধার হল উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সিল্কায়ারা টানেলে আটকে পড়া 41 জন শ্রমিক ৷ এটাই দেশের দীর্ঘতম উদ্ধার অভিযান ৷ এর আগে এত সময় ধরে কোনও উদ্ধার অভিযান হয়নি ৷ সময়ের সঙ্গে লড়াই করে যেভাবে উদ্ধারকারীরা টানেলের মধ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করলেন, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয় ৷ ভারতে এই ধরনের দীর্ঘ অভিযান প্রথমবার হলেও বিদেশে এর থেকে বেশিদিন অভিযান চালিয়ে উদ্ধারের নজির রয়েছে ৷
চিলির খনিতে 69 দিনের উদ্ধার অভিযান: কোথাও কেউ আটকে পড়ার জেরে সবচেয়ে বেশিদিন চলা অভিযানের নজির এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতেই হয়েছে ৷ সেই অভিযান চলেছিল 69 দিন ধরে ৷ সেখানে একটি সোনার খনিতে 33 জন শ্রমিক আটকে পড়েছিলেন ৷ 2010 সালের 5 অগস্ট ঘটনাটি ঘটে ৷ যে পথে খনিতে প্রবেশ করা ও বের হওয়া হত, সেই পথই ধস নেমে বন্ধ হয়ে যায় ৷ প্রায় 2300 ফুট নিচে আটকে পড়েন শ্রমিকরা ৷
উদ্ধার অভিযান শুরু হওয়ার পর 22 অগস্ট প্রথম আশার তৈরি হয়, যখন আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে সংযোগস্থাপন সম্ভব হয় ৷ খনির ভেতরে 33 জনই ভালো আছেন বলে জানান ৷ যদিও তাঁদের কাছে খাবার সামান্যই ছিল ৷ আর চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জামের একটি বাক্স ছিল ৷ তাও সেটা খালি ছিল ৷ প্রায় 18 দিন ধরে অভুক্ত ছিলেন ওই শ্রমিকরা ৷
এর পর উদ্ধার অভিযানে গতি আনা হয় ৷ উদ্ধারকারীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে ওই শ্রমিকরা এভাবে আটকে পড়ে থাকলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন ৷ সেই কারণে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে সংযোগস্থাপন করা হয় ৷ শ্রমিকদের কুড়ি সেকেন্ড করে সময় দেওয়া হয়, তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলার জন্য ৷ এর ফলে তাঁরা মানসিকভাবে ভালো থাকার রসদ পেয়ে যান ৷
ওই শ্রমিকদের মেডিটেশন বা যোগাসন করতে পরামর্শ দেওয়া হয় ৷ ভিতরে যে অংশে তাঁরা ছিলেন, সেখানে শারীরিক কসরৎ করতেও বলা হয় ৷ তাঁদের মানসিক ও শারীরিকভাবে চাঙ্গা রাখতেই এই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ৷ এভাবেই চলে 69 দিন ৷ ইতিমধ্যে অন্য একটি টানেল তৈরি করা হয় ৷ তার পর সেখানে ক্রেন দিয়ে ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয় ৷ এর মাধ্যমে শেষ হয় বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ উদ্ধার অভিযানের ৷
থাইল্যান্ডে গুহা থেকে 18 দিনের উদ্ধার অভিযান: দ্বিতীয় দীর্ঘতম উদ্ধার অভিযান হয়েছিল থাইল্যান্ডের থামল্যাং গুহায় ৷ 2018 সালের 23 জুন ওই ঘটনাটি ঘটে ৷ হঠাৎ তৈরি হওয়া বন্যা পরিস্থিতির জেরে ওই এলাকায় জলস্তর বেড়ে যায় ৷ এর জেরে বন্ধ হয়ে যায় ওই গুহার প্রবেশপথ ৷ সেই সময় গুহার মধ্যেই ছিলেন 12 জন ফুটবলার ও একজন কোচ (বয়স 25)৷ ফুটবলারদের বয়স 11 থেকে 16-র মধ্যে ৷
এই পরিস্থিতে ফুটবলারদের নিয়ে কোচ একাপোল ‘আকে’ চান্টাওং গুহার আরও গভীরে প্রবেশ করেন ৷ গুহার মধ্যে যে জায়গাটা পাটায়া সৈকতের কাছে, সেখানে শুকনো জায়গা খুঁজে পান তাঁরা ৷ সেখানেই আশ্রয় নেয় ওই দলটি ৷ কোনও খাবার ছিল না ৷ জলও ছিল না ৷ শেষে গুহার দেওয়াল বেয়ে নেমে আসা জল খেয়ে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা ৷ তবে ফুটবল দলের ওই কোচ আগে সন্ন্যাসী ছিলেন ৷ তাই তিনি ফুটবলারদের মেডিটেশন শেখাতে শুরু করেন ৷ যা থেকে তারা মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠে ৷