পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

উত্তরকাশীর ঘটনা ফিরিয়ে আনল চিলি-থাইল্যান্ডে দুঃসাহসিক উদ্ধার অভিযানের স্মৃতি - থাইল্যান্ডে গুহা থেকে 18 দিনের উদ্ধার অভিযান

Epic Rescue Stories: উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে সিল্কায়ারা টানেলে কাজ করার সময় আটকে পড়েন 41 জন শ্রমিক ৷ ধসের কারণেই তাঁরা সেখান আটকে পড়েন ৷ দীর্ঘ 17 দিনের চেষ্টায় ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করা গিয়েছে ৷ এই ধরনের উদ্ধার অভিযানের নজির আগে বিদেশে দেখা গিয়েছে ৷ সেই নিয়েই এই প্রতিবেদন ৷

Epic Rescue Stories
Epic Rescue Stories

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 28, 2023, 8:00 PM IST

উত্তরকাশী (উত্তরাখণ্ড), 28 নভেম্বর: অবশেষে উদ্ধার হল উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সিল্কায়ারা টানেলে আটকে পড়া 41 জন শ্রমিক ৷ এটাই দেশের দীর্ঘতম উদ্ধার অভিযান ৷ এর আগে এত সময় ধরে কোনও উদ্ধার অভিযান হয়নি ৷ সময়ের সঙ্গে লড়াই করে যেভাবে উদ্ধারকারীরা টানেলের মধ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করলেন, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয় ৷ ভারতে এই ধরনের দীর্ঘ অভিযান প্রথমবার হলেও বিদেশে এর থেকে বেশিদিন অভিযান চালিয়ে উদ্ধারের নজির রয়েছে ৷

চিলির খনিতে 69 দিনের উদ্ধার অভিযান: কোথাও কেউ আটকে পড়ার জেরে সবচেয়ে বেশিদিন চলা অভিযানের নজির এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতেই হয়েছে ৷ সেই অভিযান চলেছিল 69 দিন ধরে ৷ সেখানে একটি সোনার খনিতে 33 জন শ্রমিক আটকে পড়েছিলেন ৷ 2010 সালের 5 অগস্ট ঘটনাটি ঘটে ৷ যে পথে খনিতে প্রবেশ করা ও বের হওয়া হত, সেই পথই ধস নেমে বন্ধ হয়ে যায় ৷ প্রায় 2300 ফুট নিচে আটকে পড়েন শ্রমিকরা ৷

উদ্ধার অভিযান শুরু হওয়ার পর 22 অগস্ট প্রথম আশার তৈরি হয়, যখন আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে সংযোগস্থাপন সম্ভব হয় ৷ খনির ভেতরে 33 জনই ভালো আছেন বলে জানান ৷ যদিও তাঁদের কাছে খাবার সামান্যই ছিল ৷ আর চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জামের একটি বাক্স ছিল ৷ তাও সেটা খালি ছিল ৷ প্রায় 18 দিন ধরে অভুক্ত ছিলেন ওই শ্রমিকরা ৷

এর পর উদ্ধার অভিযানে গতি আনা হয় ৷ উদ্ধারকারীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে ওই শ্রমিকরা এভাবে আটকে পড়ে থাকলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন ৷ সেই কারণে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে সংযোগস্থাপন করা হয় ৷ শ্রমিকদের কুড়ি সেকেন্ড করে সময় দেওয়া হয়, তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলার জন্য ৷ এর ফলে তাঁরা মানসিকভাবে ভালো থাকার রসদ পেয়ে যান ৷

ওই শ্রমিকদের মেডিটেশন বা যোগাসন করতে পরামর্শ দেওয়া হয় ৷ ভিতরে যে অংশে তাঁরা ছিলেন, সেখানে শারীরিক কসরৎ করতেও বলা হয় ৷ তাঁদের মানসিক ও শারীরিকভাবে চাঙ্গা রাখতেই এই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ৷ এভাবেই চলে 69 দিন ৷ ইতিমধ্যে অন্য একটি টানেল তৈরি করা হয় ৷ তার পর সেখানে ক্রেন দিয়ে ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয় ৷ এর মাধ্যমে শেষ হয় বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ উদ্ধার অভিযানের ৷

থাইল্যান্ডে গুহা থেকে 18 দিনের উদ্ধার অভিযান: দ্বিতীয় দীর্ঘতম উদ্ধার অভিযান হয়েছিল থাইল্যান্ডের থামল্যাং গুহায় ৷ 2018 সালের 23 জুন ওই ঘটনাটি ঘটে ৷ হঠাৎ তৈরি হওয়া বন্যা পরিস্থিতির জেরে ওই এলাকায় জলস্তর বেড়ে যায় ৷ এর জেরে বন্ধ হয়ে যায় ওই গুহার প্রবেশপথ ৷ সেই সময় গুহার মধ্যেই ছিলেন 12 জন ফুটবলার ও একজন কোচ (বয়স 25)৷ ফুটবলারদের বয়স 11 থেকে 16-র মধ্যে ৷

এই পরিস্থিতে ফুটবলারদের নিয়ে কোচ একাপোল ‘আকে’ চান্টাওং গুহার আরও গভীরে প্রবেশ করেন ৷ গুহার মধ্যে যে জায়গাটা পাটায়া সৈকতের কাছে, সেখানে শুকনো জায়গা খুঁজে পান তাঁরা ৷ সেখানেই আশ্রয় নেয় ওই দলটি ৷ কোনও খাবার ছিল না ৷ জলও ছিল না ৷ শেষে গুহার দেওয়াল বেয়ে নেমে আসা জল খেয়ে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা ৷ তবে ফুটবল দলের ওই কোচ আগে সন্ন্যাসী ছিলেন ৷ তাই তিনি ফুটবলারদের মেডিটেশন শেখাতে শুরু করেন ৷ যা থেকে তারা মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠে ৷

তবে এই ঘটনাটি প্রথমে নজরে আসেনি ৷ প্রথমে ওই কিশোরদের মা-বাবারা সন্তানদের নিখোঁজের অভিযোগ করেন ৷ তার পর সন্ধান শুরু হয় ৷ সংশ্লিষ্ট গুহার বাইরে ওই কিশোরদের সাইকেলগুলি মেলে ৷ তখনই সন্দেহ হয় যে গুহার মধ্যেই হয়তো ওই কিশোররা আটকে রয়েছে ৷ তখন চারিদিকে হইচই পড়ে যায় ৷ শুরু হয় উদ্ধার অভিযান ৷

প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে গুহার ভিতরে আটকে পড়া সদস্য়দের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম ৷ কারণ, বাইরে থেকে এটা বোঝা গিয়েছিল যে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে গুহার মধ্যে অনেক অংশে জল জমে গিয়েছিল ৷ ফলে উদ্ধার অভিযানের শুরুতেই কঠিন সমস্যার মুখে পড়তে হয় থাই নেভি সিলকে ৷

পরিস্থিতি কঠিন বুঝে থাইল্যান্ডের তরফে আন্তর্জাতিক সাহায্য নেওয়া হয় ৷ মার্কিন বিমানবাহিনীর উদ্ধারকারী বিশেষজ্ঞরা আসেন ৷ ব্রিটেন, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, স্ক্যান্ডেনেভিয়া থেকে কেভ ডাইভার্সরা আসেন ৷ আরও অনেক দেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ৷ জুলাই মাসের 2 তারিখ প্রথম ওই ফুটবল দলের হদিশ মেলে ৷ তাঁদের খুঁজে বের করেন দু’জন ব্রিটিশ কেভ ডাইভার্স জন ভোলানদেন ও রিক স্ট্যানটন ৷

এখানে লড়াই শুধু সময়ের সঙ্গে ছিল না, প্রকৃতির সঙ্গে লড়তে হয়েছে উদ্ধারকারীদের ৷ কারণ, গুহার মধ্যে জল ছিল ৷ থাই নেভি সিলের তরফ থেকে আটকে পড়া ফুটবলারদের ও কোচকে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময় পরপর ৷ ঘটনার 18 দিন পর, 10 জুলাই উদ্ধার করা হয় ওই ফুটবলারদের এবং কোচকে ৷

তাসমানিয়ার সোনার খনিতে উদ্ধার অভিযান: এই দু’টি ঘটনার আগে 2006 সালে তাসমানিয়ায় এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল ৷ ওই বছর 25 এপ্রিল ভূমিকম্পের জেরে একটি সোনার খনিতে দু’জন শ্রমিক আটকে যান ৷ ভূমিকম্পের সময় খনির ভিতরেই ছিলেন টড রাসেল (34) ও ব্র্যান্ট ওয়েব (37) নামে দুই শ্রমিক ৷ তাঁরা ভূপৃষ্ঠ থেকে এক কিলোমিটার গভীরে ছিলেন ৷ প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে তাঁরা হয়তো বেঁচে নেই ৷ কিন্তু থার্মাল ক্যামেরায় পাঁচদিন পর ধরা পড়ে যে ওই দু’জন জীবিত রয়েছেন ৷ তখন তাঁদের জন্য খাবার, জল, ওষুধ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় ৷ 40 ফুটের একটি পাইপ ভিতরে পাঠিয়ে তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়া হয় ৷ প্রায় সপ্তাহখানেকের চেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করা হয় ৷

এই দুঃসাহসিক ও সফল উদ্ধার অভিযানের ঘটনাগুলি ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে ৷ এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল সিল্কায়ারা টানেলের ঘটনা ৷

আরও পড়ুন:

  1. 'আঁধার' সুড়ঙ্গে আশার আলো, প্রায় 50 মিটার পাথর খুঁড়ে টানেলে প্রবেশ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর
  2. প্রকাশ্যে সিল্কিয়ারা টানেলে আটকে থাকা 41 জন শ্রমিকের ছবি-ভিডিয়ো

ABOUT THE AUTHOR

...view details