নিউ দিল্লি, 26 এপ্রিল : অবশেষে বরফ গলল ৷ ভারতকে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাঠাতে রাজি হল আমেরিকার জো বাইডেন সরকার ৷
আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার জ্যাক সুলিভান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে রবিবার নিশ্চিত করেছেন যে, "তাঁর দেশ ভারতের চিকিৎসায় দরকারি ওষুধ, ব়্যাপিড পরীক্ষার টেস্ট কিট, ভেনটিলেটর আর পিপিই সুট তৈরি করে দ্রুত পাঠাবে ভারতে ৷"
জ্যাক সুলিভানের টুইট-
কোভিড প্যানডেমিক শুরুতে যখন আমেরিকার হাসপাতালগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছিল, সেই সময় ভারত আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল ৷ এখন এই সংকটে ভারতের পাশে থাকবে আমেরিকা ৷ কোভিডের মোকাবিলায় দরকারি ভ্যাকসিন আর সব ওষুধের অভাবে ভারতে হাজারে হাজারে কোভিড-পজিটিভ মানুষের জীবন বিপদের মুখে ৷ তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অক্সিজেন আর ভ্যাকসিন তৈরির দরকারি ওষুধগুলো পাঠাবে আমেরিকা ৷
জো বাইডেন ও জ্যাক সুলিভানের টুইট আরও পড়ুন: সপ্তম দফায় কোভিড বিধি মেনে ভোটদানের আবেদন মোদির
কেন এই পদক্ষেপ?
গত সপ্তাহে আদার পুনেওয়ালা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ট্যাগ করে একটি টুইট করেন ৷ ভারতে ভ্যাকসিন তৈরির কাঁচামাল পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য সেখানে অনুরোধ করেন প্রেসিডেন্টকে ৷ আমেরিকায় তৈরি হয় ফাইজার ভ্যাকসিন ৷ প্রতিটি মার্কিন নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য বাইডেন সরকার ফাইজারের উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দেন, আর দেশের বাইরে কাঁচামাল পাঠানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ৷
ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সর্ববৃহৎ সংস্থা ৷ নিজের দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলিতেও এই সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ড সরবরাহ করেছে মোদি সরকার ৷ এ ছাড়া ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনও রয়েছে ৷ কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে এই দুই ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থাই ৷
1 মে থেকে 18 বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে মোদি সরকার ৷ এর ফলে 18-44 বছরের 101 কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে ৷ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে দরকার হবে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন ৷
ভারতের ভয়াবহ করোনাপরিস্থিতির কথা জেনেও নিজের দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়াই প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ, সেই প্রয়োজন না মিটিয়ে ভারতে ভ্যাকসিন বা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাঠানো আইনত সম্ভব নয়, স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন জো বাইডেন ৷ এমনকি সেরাম-এর সিইও আদার পুনেওয়ালা, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও বিষয়টি শুধুমাত্র গুরুত্ব দিয়ে দেখবে বলে দায় এড়িয়েছিল বাইডেন সরকার ৷
এই দায় এড়ানো নিয়ে নিজের দেশেই ইউএস চেম্বার্স অফ কমার্স-সহ বিভিন্ন মহলের প্রবল চাপের মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৷ একদিনের করোনা সংক্রমণের সংখ্যায় ভারত বিশ্বরেকর্ড গড়েছে, সঙ্গে অভাব অক্সিজেন, ভ্যাকসিন, রেমডেসিভির ইনজেকশনের ৷ এই দুঃসময়ে ব্রিটেনের বরিস জনসন সরকার ভারতে জীবন-দায়ী ওষুধ, সরঞ্জাম, ভেন্টিলেটর অক্সিজেন পাঠানোর কথা জানায় ৷ মঙ্গলবারই প্রথম দফায় দিল্লি পৌঁছাবে 695 টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, 120 টি নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর আর 20 টি ম্যানুয়াল ভেন্টিলেটর ৷ এর পর আরো বেশ কয়েক দফায় প্রয়োজনীয় ওষুধ, সরঞ্জাম আসবে দেশে ৷ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও ভারতের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে ৷
হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে উদ্বৃত্ত ভ্যাকসিন পাঠানো বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি ৷ ভারতের ভাঁড়ারে এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় সেরামের উৎপাদিত 3 কোটি কোভিশিল্ড রয়েছে ৷
প্রথম টুইট জো বাইডেনের-
জো বাইডেন ডেলাওয়ারের বাড়িতে উইকেন্ডে ছিলেন ৷ কিন্তু ছুটির মেজাজেও তিনি নাকি নজর রাখছিলেন ভারতের ভয়ঙ্কর করোনা সংক্রমণের উপর ৷ আর হয়তো বাকি দুনিয়ার প্রতিক্রিয়াতেও ৷ ব্রিটেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাহায্যের আশ্বাস দেখে, নিজের দেশে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে শেষমেশ ভারতের সংকটে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাঠানোর কথা জানিয়ে এত দিন পর প্রথম টুইট করলেন রবিবার ৷ টুইটে তিনি জানিয়েছেন, ভারত যেমন প্যানডেমিকের গোড়ার দিকে আমেরিকার সংকটে পাশে ছিল, তেমনই আমেরিকাও ভারতের সংকটে তাকে সাহায্য করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ৷
কমলা হ্যারিস-
টুইট করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও ৷ তিনি টুইটে লিখেছেন, "আমেরিকা ভারতের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে আর কোভিড-19 মহামারি রুখতে যা যা দরকার সব পাঠানো হবে ৷ আমরা সাহায্য পাঠাচ্ছি যেমন, তেমনই ভারতের সাহসী স্বাস্থ্যকর্মী-সহ সব নাগরিকদের জন্য প্রার্থনা করছি ৷"
প্রতিক্রিয়া-
এই খবর স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের জন্য আশার আলো ৷ আমেরিকার ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের তরফে জো বাইডেনের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করা হয়েছে ৷ ইন্ডিয়াস্পোরার তরফে টুইট "সংকটের সময়ে ইউএস-ভারত পার্টনারশিপ দেখে ভালো লাগছে ৷"
ভারতীয়-আমেরিকান ডেমোক্র্যাট শেকর নরসিমহান টুইটে লেখেন "প্রথম পদক্ষেপটি ভালো ৷ ছুঁচ সরলো ৷"
আরেক ভারতীয়-আমেরিকান কংগ্রেস সদস্য রো খান্না বাইডেন সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে জানান এটা উন্নত বিদেশ নীতির মাইলফলক ৷ তাঁর মতে, জো বাইডেন আরও অনেক কিছুই করতে পারেন, ভারতকে "আমাদের ভাঁড়ারের জমে থাকা" অ্যাস্ট্রেজেনেকা ভ্যাকসিন দিয়ে দিতে পারেন ৷ ইতিমধ্যে মেক্সিকো আর কানাডায় পাঠানো হয়েছে ওই ভ্যাকসিন, তাই ভারতেও পাঠানো যায় ৷ "আমরা আমেরিকায় ভারতীয় অভিবাসীদের জন্য সুবিধাজনক ব্যবস্থা করব, যাতে ভারতের হাসপাতালগুলিতে সাহায্য পাঠানো যায় ৷"
এমনকি আমেরিকার প্রশাসনের ফাইজার আর মডার্নাকে ভারতে ভ্যাকসিন বিক্রির অনুমতি দেওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন ৷