হায়দরাবাদ, 15 ফেব্রুয়ারি: ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার ৷ এই ভোটকে কেন্দ্র করে তাই শেষ মুহূর্তে উত্তেজনায় ফুটছে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্য ৷ দেশের এই অংশের আরও দুই রাজ্য মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে 27 ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচন দওয়ার কথা ৷ ভোট গণনা 2 মার্চ ৷ এই প্রতিটি রাজ্যের বিধানসভায় আসনসংখ্যা 60 (Tripura Assembly Polls) ৷
ত্রিপুরার নির্বাচনে এবার ভোট ময়দানে আছেন বিজেপি, তৃণমূল ও বাম জোটের প্রার্থীরা ৷ থাকছে তিপরা মোথাও ৷ দীর্ঘ 25 বছরের বাম শাসনকে সরিয়ে 2018 সালে এই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি ৷ গেরুয়া শিবিরের কাছে তাই এবার এটা ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই ৷ এই নির্বাচনকে অবশ্য 2024 লোকসভা ভোটের আগে সেমিফাইনাল হিসেবেই দেখা হচ্ছে ৷
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এবারও এই রাজ্যে বিজেপির ভালো ফল সম্পর্কে আশাবাদী ৷ উত্তর-পূর্বের অন্য দুই রাজ্যও দল ভালো ফল করবে বলে তাঁর দাবি ৷ ত্রিপুরায় এবার দলের পক্ষে ভোটের সুনামি হবে বলে মনে করেন তিনি যা 2018 এর থেকেও বেশি ৷ তাঁর কথায়, 'আপনারা সুনামির কথা শুনেছেন... সেরকমই কিছু একটা হবে ৷ অনেককিছুই হতে পারে, তবে তা 2018 এর থেকে কমকিছু হবে না ৷ গতবার আমরা 36টি আসন পেয়েছিলাম । আমাদের জোটসঙ্গীরা পেয়েছিলেন 8টি আসন ৷ এবার তার থেকে বেশি আসন আসবে ৷"
আরও পড়ুন:হার নিশ্চিত জেনে তৃণমূলের প্রার্থী-নেতাদের ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি, অভিযোগ রাজীবের
ত্রিপুরায় ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হবে সকাল 7টায় ৷ বিকেল 4টে পর্যন্ত ভোট নেওয়া হবে ৷ এই ভোটে ভাগ্য নির্ধারণ হবে 259 জন প্রার্থীর, তাঁদের মধ্যে 20 জন মহিলা ৷ ভোটার সংখ্যা প্রায় 28 লক্ষ ৷ মোট বুথের সংখ্যা 3 হাজার 328 ৷ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ৷
ত্রিপুরার এবারের নির্বাচনে যে সকল প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে তাঁদের মধ্যে অন্যতম, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, উপমুখ্যমন্ত্রী যিষ্ণু দেববর্মন, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, সিপিএম নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মন ৷ উল্লেখ্য, এখানকার ভোটকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপিও ৷ দলের পক্ষে গুজরাতের মতো রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ৷
তবে ত্রিপুরায় এবারের নির্বাচনে প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার পাশাপাশি, নয়া বিরোধী জোট, বিরোধী দলগুলিরও মুখোমুখি হতে হবে গেরুয়া শিবিরকে ৷ ভোটের 10 মাস আগেই এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে পদ্ম শিবির ৷ কিন্তু এই ফর্মুলায় গুজরাতের মতো এই রাজ্যেও সুবিধা মিলবে কি না তা জানা যাবে ফল প্রকাশের পর ৷ এখানে 'ডবল ইঞ্জিন' সরকার অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্যে একই দলের সরকার থাকলে উন্নয়ন আরও দ্রুত হবে বলে দাবি বিজেপির ৷
আবার ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস ৷ 2018 সালে 16টি আসনে জিতেছিল বামেরা, কংগ্রেস একটিও আসন পায়নি ৷ তবে 2019 লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট শেয়ার বেড়েছিল ৷ তবে এবারের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দিতা করায় বিরোধী ভোট ভাগ হবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে ৷ বিরোধী ভোট ভাগ হলে বিজেপি তার সুফল পাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷
তবে নতুন শক্তি হিসেবে প্রদ্যুৎ মানিক্য দেববর্মার নেতৃত্বে তিপরা মোথার উত্থান এখানে গেরুয়া শিবিরের অন্যতম মাথা ব্যাথার কারণ ৷ গত বছর ত্রিপুরার আদিবাসী এলাকায় টিটিএএডিসি-এর নির্বাচনে ভাল ফল করে এই দল ৷ 28টির মধ্যে 18টি আসন পায় তারা ৷ তবে এবার তিপরা মোথার সঙ্গে জোট গড়ার চেষ্টা করেও সফল হয়নি বিজেপি ৷ তিপরা মোথার প্রধান প্রদ্যুৎ মানিক্য দেববর্মা জানিয়েছিলেন পৃথক রাজ্যে গঠনের লিখিত আশ্বাস ছাড়া তাঁরা কারও সঙ্গে জোট গড়বেন না ৷ রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে এবার ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ফল ত্রিশঙ্কুও হতে পারে ৷