পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান সংকটের মুখে - বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান

মূল সমস্যাগুলি হল পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে জঙ্গলে জল ও খাবারের অভাব, জঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে বাসস্থানের অভাব এবং জঙ্গলের এলাকায় নতুন করে মানুষের বসবাস শুরু । লিখছেন সিরিপুরম শ্রীনিবাস ৷

threat-to-wildlife-habitats
threat-to-wildlife-habitats

By

Published : Dec 24, 2020, 1:45 PM IST

বনের প্রাণীরা গ্রামে প্রবেশ করছে

জঙ্গলের কাছাকাছি এলাকায় যে সমস্ত গ্রাম ও শহর রয়েছে, সেখানে বন্যপ্রাণী প্রবেশ করার এবং সমস্যা তৈরি করার ঘটনা সাম্প্রতিক কালে ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে । জঙ্গলের আশপাশে যে কৃষক ও গ্রামীণ মানুষেরা বসবাস করেন, তাঁদের কাছে এটা নতুন কোনও সমস্যা নয় । তেলগু রাজ্যগুলিতে বাঘ, ভল্লুক, বন্য শুকর, বাঁদর এবং চিতাবাঘের মতো বন্যপ্রাণীরা মানুষ ও গবাদি পশুর উপর সমস্যা তৈরি করে । ছয় মাস আগে কানাডায় অবস্থিত দ্য সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের তরফে একটি সমীক্ষা করা হয় । সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে গত 20 বছরে সারা দেশে সাপের কামড়ে 12 লাখ মানুষ মারা গিয়েছেন । এর মধ্যে অর্ধেক ঘটনা ঘটেছে 8টি রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় । এর মধ্যে তেলগু রাজ্যগুলিও রয়েছে । জঙ্গলের আশপাশে যে গ্রামগুলি রয়েছে, সেখানে সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটার প্রবণতা অনেক বেশি । কিছু সময় আগে কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রক সাপকে সেই সমস্ত বন্যপ্রাণীর তালিকার আওতায় নিয়ে আসে, যারা মানুষের বাসস্থানের মধ্যে প্রবেশ করে । তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে আমরা এখন নির্দিষ্ট সময় অন্তর বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব ও চলাচল সম্বন্ধে তথ্য পেয়ে যাই । মূল সমস্যাগুলি হল পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে জঙ্গলে জল ও খাবারের অভাব, জঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে বাসস্থানের অভাব এবং জঙ্গলের এলাকায় নতুন করে মানুষের বসবাস শুরু । এর কারণ জানার জন্য বিস্তারিত সমীক্ষা করানোর প্রয়োজন রয়েছে ।

আরও পড়ুন: লকডাউনে অবাধ বিচরণ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে "সমস্যায়" পড়বে বন্যপ্রাণীরা

সাম্প্রতিক কালে গ্রামে বাঘ প্রবেশ করার ঘটনা বেশ চিন্তাজনক । তেলেঙ্গানা রাজ্যের আসিফাবাদে বাঘের আক্রমণে দুইজন ব্যক্তি মারা গিয়েছেন । এই প্রথমবার তেলেঙ্গাবায় মানুষের উপর বাঘের আক্রমণের ঘটনা ঘটল । তার ফলে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়েছে । ভদ্রদ্রিকোট্টাগুডেম জেলার পালভঞ্চ এলাকায় একটি শেয়াল তিনমাসের একটি ছেলের মুখে কামড়ে দেয় । আর তার জেরে ওই শিশুটি মারাত্মক ভাবে জখম হয় । আদিলাবাদের ইন্দ্রাভেলি অঞ্চলে চাষের কাজ করার সময় একজন মানুষ চিতাবাঘের আক্রমণের শিকার হয় । খামারে কাজ করার সময় একজন কৃষক ভল্লুকের দ্বারা আক্রান্ত হন । তিনি মারাত্মক ভাবে আহত হন । করিমনগর, কামারেড্ডি ও অন্যান্য জায়গায় বন্যপ্রাণীদের আক্রমণের ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে । অন্ধ্রপ্রদেশে জঙ্গলের আশপাশে থাকা গ্রামেও বন্যপ্রাণীদের ঢুকে পড়ার ঘটনা মাঝেমাঝেই ঘটতে শুরু করেছে । কোন পরিস্থিতিতে বন্যপ্রাণীরা মানুষ ও গবাদি পশুর উপর আক্রমণ করছে, সেই সমস্যার উৎস খুঁজতে হলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে । বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতনতার অভাব থাকায় সাধারণ মানুষ অহেতুক ভয় পান । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে করিমনগর জেলার রামাডুগু মণ্ডলের একটি গ্রামে একটি খামারের মধ্যে সম্প্রতি একটি প্রাণী ঢুকে পড়ে । সেই প্রাণীটি আফ্রিকা মহাদেশের চিতাবাঘ বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে । কিন্তু আসলে এটা শেষ পর্যন্ত একটা হায়না বলে চিহ্নিত হয় । এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে কোনও খামারের মধ্যে বনবিড়াল ঢুকে পড়েছে । আর মানুষ তাকে বাঘ বলে ভুল করেছে ।

আরও পড়ুন: বাঘ বাঁচান, মানুষও বাঁচবে

বন্যপ্রাণী দ্বারা আহত হলে সঙ্গে সঙ্গে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে, তার পদ্ধতি সাধারণ মানুষের কাছে জানানো উচিত বন বিভাগের । এই তথ্য ফিল্ম, মাল্টি মিডিয়ার মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সকলের কাছে জানাতে হবে । বন দপ্তরকে একটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবে যে কোনও ধরনের বন্যপ্রাণী লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে এবং এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঠিক কী করতে হবে । জঙ্গল নিধন বন্ধ করতে বন দপ্তর যদি ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা ( জিআইএস ) ব্যবহার করে, তাহলে সেটা তাদের পক্ষে লাভদায়ক হবে । পাচারকারী গোষ্ঠী, যারা জঙ্গলের সম্পদ নষ্ট করছে, পশুদের শিকার করছে এবং তাদের চামড়া ও নখ বিক্রি করছে, সেই গোষ্ঠীদের ধরতে হবে । বন্যপ্রাণীরা যাতে তাদের বাসস্থান হারিয়ে না ফেলে, তার জন্য এটাই প্রাথমিক ব্যবস্থা হতে পারে । বন্যপ্রাণীদের উপর চলাচলে নজরদারি প্রয়োজন । এই তথ্য প্রতিটি জেলায় নথিভুক্ত করে রাখতে হবে । বন্যপ্রাণীর আক্রমণে যদি কোনও মানুষ বা গবাদি পশুর কোনও ক্ষতি হয়, তাহলে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বন দফতরের জন্য সরকারকে বিশেষ তহবিলের বরাদ্দ করতে হবে । বন্যাপ্রাণীর আক্রমণে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবার পিছু 15 লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা গত বছর ঘোষণা করে মহারাষ্ট্র সরকার । এর অংশ হিসেবে আক্রান্তের পরিবারকে সঙ্গে সঙ্গে 5 লাখ টাকা দিয়ে দেওয়া হবে । বাকি টাকা পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে রেখে দেওয়া হবে । ওই টাকা পাওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগে তা যদি কেউ ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে নিতে চান, তাহলে তার জন্য বন দপ্তরের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে । জঙ্গলের কাছে যে সমস্ত পরিবার বসবাস করে, তাদের আশ্বস্ত করার জন্য অন্য রাজ্যগুলিরও একই পদক্ষেপ করা উচিত । বন্যপ্রাণীদের ভালোবাসাও জরুরি । কারণ, ওরাই আমাদের সম্পদ । আর তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব ওদের রক্ষা করা ও খেয়াল রাখা । সাধারণ মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের কোনও সমস্যা না করে সরকারের উচিত এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করা ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details