কলকাতা ও নয়াদিল্লি , 9 অগস্ট :সামনের সারিতে শতাব্দী রায়, কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের মতো তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট সাংসদরা ৷ আর তাঁদের ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি ৷ হাতে ধরে থাকা কালো রঙের প্ল্যাকার্ডে হলুদ আর সাদা হরফে জ্বলজ্বল করছে চারটে শব্দ ৷ তাতে লেখা, ‘‘ত্রিপুরায় স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক’’ ৷ বাকি সাংসদদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে স্লোগানও তুলছেন ৷ ইস্যু, ত্রিপুরায় তৃণমূলের যুব নেতাদের উপর হামলা ৷ নিশানায়, ত্রিপুরা তথা কেন্দ্রের প্রধান শাসকদল বিজেপি ৷ সোমবার দিল্লির সংসদ ভবন চত্বরে আবারও একবার কেন্দ্রবিরোধী ভূমিকায় সক্রিয় হলেন বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল (Sunil Mondal) ৷ আর সংবাদ মাধ্যমে সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সুনীলের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ফের শুরু হল জলঘোলা ৷
আরও পড়ুন :Sunil Mondal : ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে, বিজেপি হয়ে আবারও কি ‘দিদি’র দলে সুনীল মণ্ডল ?
একটা সময় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুনীল ৷ তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ৷ পালাবদলের পর ভোল বদলে হয়ে যান তৃণমূলী ৷ নতুন দলের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেও যান বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র থেকে ৷ এরপর একুশের ভোটের আগে রাজ্য়ে গেরুয়া হাওয়ার দাপট বাড়তেই সুনীলও রং বদলে বিজেপি হয়ে যান ! ৷ এমনকী, তাঁর বাড়িতেই বসে গোপন বৈঠক ৷ শুভেন্দু অধিকারী থেকে জিতেন্দ্র তিওয়ারি, সকলেই হাজির হন সেখানে ৷ কিন্তু বাংলার ভোটের আগে বিজেপি যতটা গর্জেছিল, ততটা বর্ষায়নি ৷ ফলে আবারও সুনীল পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুলে ৷ যদিও তাঁর নিজের দাবি, তিনি কোনওদিনই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেননি ৷
সম্প্রতি পেগাসাস কাণ্ডে উত্তাল হয় সংসদ ৷ প্রতিবাদের একেবারে সামনের সারিতে আগাগোড়াই থেকেছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা ৷ সেই দলে সুনীলকে দেখে অনেকেই থমকে গিয়েছিলেন ৷ প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি মোদিকে ছেড়ে আবারও দিদির সৈনিক হয়ে উঠতে চাইছেন সুনীল ? সোমবার আবারও একই ঘটনা ঘটায় সেই সম্ভাবনাই আরও পোক্ত হল ৷ এই বিষয়ে সরাসরি সুনীলের সঙ্গে কথা বলেছেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ তাঁকে সুনীল জানান, তিনি তৃণমূলের ছিলেন, তৃণমূলেই আছেন ৷ তাই দলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে থাকাটাই তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক ৷ এমনকী, নিজের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্কই মানতে রাজি হননি সুনীল ৷
অন্যদিকে, গেরুয়া শিবির বিষয়টি আমল দিতে নারাজ ৷ বিজেপির অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘সুনীল মণ্ডল ইতিমধ্যেই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছেন ৷ দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি ৷ তাই তিনি যদি তৃণমূলের ধরনা কর্মসূচিতে সামিল হন, তাতে বিজেপি নেতৃত্বের কিছু বলার থাকে না ৷’’ একইসঙ্গে সায়ন্তনের কটাক্ষ, সাধারণ মানুষের কাছে এই ধরনের সাংসদদের কোনও গ্রহণযোগ্যতাই নেই ৷ তাই তিনি কী করলেন, তাতে কারও কিছু যায় আসে না ৷
আরও পড়ুন :কাটোয়ার তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিদান সাংসদের, পুলিশে অভিযোগ দায়ের
সায়ন্তন বসুর মন্তব্য যে খুব একটা অযৌক্তিক নয়, সেই প্রমাণ কিন্তু ইতিমধ্যেই মিলেছে ৷ সূত্রের খবর, সুনীলের বারবার রং বদলে তিতিবিরক্ত তাঁর এলাকার তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীরা ৷ তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা তো তাঁকে দলে দেখতেই চান না ৷ এমনকী, তাঁর নামে এলাকায় পোস্টারিং পর্যন্ত হয়েছে ৷ তবে, খাতায়-কলমে তিনি যে এখনও তৃণমূলের প্রতিনিধি, সেটাও অস্বীকার করা জায়গা নেই ৷ এই অবস্থায় সুনীলকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়াতে চাইছেন না তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ৷ যেমন, বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়কে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷