নয়া দিল্লি, 27 জুন : ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে বিজেপির আইটি সেল, পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি... একাধিক বিষয়ে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তিনি ৷ ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন ৷ দেশের জাতীয় সংগীতের শব্দ পরিবর্তনের দাবি থেকে সম্প্রতি কাশ্মীর বৈঠক ৷ মোদি বিরোধী মন্তব্যে বারবার চর্চায় থেকেছেন তিনি ৷ তিনি বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ৷ ইটিভি ভারতের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ফের একাধিক ইশু নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করলেন তিনি ৷ উঠে এল চিন, জম্মু-কাশ্মীরের প্রসঙ্গ ৷ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চিন নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ করছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি ৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, আমাদের সরকারের চিনের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত ৷ এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক নিয়ে তাঁর মন্তব্য, আমেরিকার চাপে এই বৈঠক করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি, দেশে জরুরি অবস্থা ও বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ ৷
প্রশ্ন : জরুরি অবস্থা নিয়ে আপনি কী বলতে চান ?
উত্তর : জরুরি অবস্থার জন্য তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধিই দায়ী ৷ কারণ, তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা হেরে গিয়েছিলেন এবং কোর্ট তাঁকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচন লড়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ৷ সুপ্রিম কোর্টে যেতে তাঁর অনেকটা সময় লেগে যায় ৷ এইসময় জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলন ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷ ঘাবড়ে গিয়ে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন ৷ এইসময় 1 লাখ 40 হাজার লোককে কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল ৷ অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যায় ৷ তার মধ্যে আমিও ছিলাম ৷ আমি ছদ্মবেশ বদল করে প্রথমে দিল্লি থেকে মুম্বই ৷ তারপর আমেরিকায় যাই ৷
প্রশ্ন : বিরোধীরা ইন্দিরা গান্ধির জারি করা জরুরি অবস্থার কথা তো মেনে নেয় ৷ কিন্তু, তাদের বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিও একইরকম...
উত্তর : জরুরি অবস্থার মতো কোনও পরিস্থিতি নেই ৷ আমরা স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারি ৷ কেউ আমাদের জেলে বন্দী করবে না ৷ ওই সময় তো আমাদের কোনও অধিকারও ছিল না ৷ আমি বিজেপি করি ৷ সেক্ষেত্রে, দলের কোনও নীতি যদি আমার পছন্দ না হয়, তাহলে তারও সমালোচনা করি আমি ৷ কিন্তু, কংগ্রেসের কেউ এরকম করতে পারবে না ৷ বর্তমান পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থার সঙ্গে এক করে দেওয়া উচিত নয় ৷
প্রশ্ন :কাশ্মীরকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর আপনার প্রত্যাশা কী? বিরোধীরা বলছে, কাশ্মীরের নেতাদের নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে ৷
উত্তর : এটা ঠিক নয় ৷ এই নেতাদের আদালতে যাওয়ার অধিকার ছিল ৷ কয়েকজন গিয়েওছিলেন ৷ কাশ্মীর আমাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ৷ আমাদের অনেক পবিত্র স্থান আছে ৷ ধর্ম পরিবর্তন করে কাশ্মীরকে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে ৷ জম্মুতে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ও লাদাখে বৌদ্ধরা ৷ আমাদের সংবিধানে যখন 370 ধারা আনা হয়েছিল, তখন এর বিরোধিতা করা হয়েছিল ৷ সেইসময় সর্দার প্যাটেল বলেছিলেন, এটা অল্প সময়ের জন্য ৷ সংবিধানেও এটি অস্থায়ী হিসাবে ছিল ৷ এখন 70 বছর পরে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পূরণ করেছি । কিন্তু, কাশ্মীরি পণ্ডিত, শিখ মিলিয়ে 5 লাখ লোককে কাশ্মীর থেকে তাড়ানো হয়েছিল । প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক করা উচিত ছিল না ৷ তবে আমেরিকার চাপ ছিল ৷
প্রশ্ন : কংগ্রেস কি তাহলে আবার ভুল করছে? তারা পুরনো কাশ্মীর ফিরে পাওয়ার দাবি তুলছে ৷
উত্তর : কংগ্রেস আত্মহত্যার পর্যায়ে রয়েছে ৷ তাই এইধরনের কথা বলছে ৷ কংগ্রেস চিনকে নিয়ে কোনওদিন নিন্দা করেনি ৷ হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন যে চিন ভারতের সীমানার মধ্যে আসেনি ৷ কিন্তু, বিজেপি আওয়াজ তুলছে ৷ আমি তো রোজ বলছি চিনকে ঠিক করো ৷ চিন আমাদের জমি দখল করে ভুল করেছে ৷
প্রশ্ন : চিনকে নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, তাতে কি আপনি সন্তুষ্ট ?
উত্তর : আমি একেবারেই সন্তুষ্ট নই ৷ আজকের পরিস্থিতিতে সম্ভব নয় ৷ কিন্তু তাও ৷ যেসময় চিন অনুপ্রবেশ করেছিল, সেইসময় আমাদের কোনও পদক্ষেপ করা উচিত ছিল ৷ গালওয়ান, কৈলাস রেঞ্জে আমরা তা করে দেখিয়েছি ৷ কিন্তু,আবারও তা আলোচনার পর্যায়ে চলে গিয়েছে ৷ কেন এই আলোচনা চলছে? আমি এটা বুঝতে পারি না ৷ ওরা আমাদের জমিতে আমাদের জায়গায় বসে রয়েছে, আমরা কি তাদের সঙ্গে কথা বলব নাকি আমরা আগে তাকে সেখান থেকে উৎখাত করব, তাড়াব ? তাড়াতেও পারতাম ৷
প্রশ্ন : সরকার কি দেরি করে ফেলেছে ?
উত্তর : আমাদের সরকার ভুলের তুষ্টিকরণ করছে ৷ চিনের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত ৷ বিশ্বকে দেখাতে হবে যে, 1962 আর কোনওদিন হবে না ৷ আমাদের ছোট করার জন্য চিন এটা করেছিল এবং সফলও চেয়েছিল ৷
প্রশ্ন : উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার ৷ বিজেপি সরকার থাকা সত্ত্বেও এত মানুষের ধর্মান্তকরণ করা হয়েছিল ৷ আর এখন সরকার তা জানতে পেরেছে ৷ এতে কি রাজ্য সরকারের অবহেলা ছিল ?