তেলেঙ্গানা, 12 সেপ্টেম্বর:পাঁচটি ডিগ্রি । তিনটি পিজি, পিএইচডি এবং দশটি দেশে উপস্থাপনা । সম্প্রতি গিনেস রেকর্ডও হয়েছে । ড. শেখ জাহেদা বেগম ৷ যাঁর ঘর থেকে বের হওয়াই ছিল কঠিন ৷ তা সত্ত্বেও কীভাবে এই সাফল্য ? আসুন জেনে নিই তাঁর সংগ্রামের কথা ৷
ড. শেখ জাহেদা বেগমের বাড়ি নালগোন্ডা জেলার হাজারিগুড়েম গ্রামে । একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের কন্যা জাহেদারা চার বোন ৷ তিনি জানালেন,
"আমাদের পরিবার মেয়েদের বাইরে যেতে দিতে রাজি ছিল না । আমি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়িতে শিক্ষকতা করেছি । পরে বাবা দস্তগিরি সরকারি চাকরি পাওয়ার পর আমি স্কুলে ভর্তি হই । ছোট সাইকেলে স্কুলে যেতাম । ওসমানিয়া ক্যাম্পাসে থাকার সময় আমি 5টি ডিগ্রি (বিএ, বিএড, এলএলবি, উর্দু, হিন্দি), 3টে স্নাতকোত্তর (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, এলএলএম, এমএড) এবং পিএইচডি (রাজনীতি বিজ্ঞান) করেছি । তারপর নেট পাশ করে সরকারি চাকরি পাই । বর্তমানে হায়াতনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছি ।"
তাঁর পড়াশোনা ও কৃতিত্ব সম্পর্কে শেখ জাহেদা বেগম বলেন, "যদিও পিএইচডিতে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি প্রথমে বেছে নিয়েছিলাম । অপ্রত্যাশিতভাবে 2011 সালে মুম্বইয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলা আমার পথ পালটে দিয়েছে । জঙ্গিরা ছোট নৌকায় করে এসে সেই হামলা চালায় । তখনই আমার মাথায় আসে উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপত্তার ফাঁকফোকর নিয়ে গবেষণা শুরু করে সেগুলোকে শক্তিশালী করা । 'উপকূলীয় এলাকার সংরক্ষণ - উপকূলীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভূমিকা' বিষয়ে গবেষণাপত্র জমা দিই । আমি 2016 সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত 'ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স'-এ এই বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দিয়েছিলাম এবং সেখান থেকে পুরস্কার পেয়েছি । এছাড়া আমি জাপান, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে দশটি দেশের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছি ।"
আরও পড়ুন:কৃতী বাঙালিদের জীবনের গল্প নিয়ে হাজির 'একান্তে বিশিষ্ট বাঙালি'
জাহেদা আরও বলেন, "2020 সালে ইএসএন প্রকাশনা সংস্থা একইসঙ্গে একটি 150-ঘণ্টা অনলাইন উপস্থাপনা প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিল । আমিও এতে অংশ নিই । এটা একটা রেকর্ড ছিল । সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইয়ের ডিজাইন করা শুরু করি । এতে আটজন লেখক অংশ নেন । তেলুগু রাজ্য থেকে আমিই একমাত্র । তাছাড়া লেখক ও সম্পাদক দুটি ভূমিকাই পালন করেছি ৷ নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নের উপর প্রতিবেদন লিখেছি এবং অন্যদের প্রতিবেদন সংশোধন করেছি । আমরা মোট এক লাখ পৃষ্ঠার বইটির নাম দিয়েছি 'ওয়ার্ল্ড 2023'। আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ সম্প্রতি গিনেস রেকর্ড অর্জন করা একটি অবিস্মরণীয় অনুভূতি ৷"
জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠে কীভাবে এগিয়ে গিয়েছেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে জাহেদা বলেন, "আমি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার অনেক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠেছি । আমার উচ্চ পর্যায়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল ৷ চাকরি করতে করতে পড়ালেখা করেছি, কারও উপর নির্ভর করিনি । এখন আমি ফেস এনজিওতে কাজ করছি । দুর্যোগের সময় আমরা সাহায্য করি । এই বিষয়ে, আমি এশিয়া আরব সামিটে 'সুপার উইমেন' খেতাব, শিটিম থেকে মার্গদর্শন এবং রাজ্য ও জাতীয় স্তরে আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছি । সম্প্রতি তেলেঙ্গানা থেকে সেরা শিক্ষক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছি । একজনও আমার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, তাহলে খুবই ভালো লাগবে ৷"