বাঁকা(বিহার), 14 ডিসেম্বর:মন্দিরের শিবলিঙ্গের পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে বিধস্ত বছর 80'র বৃদ্ধা ৷ ভগবানকে দেওয়া প্রসাদ ও গঙ্গাজল খেয়ে করছেন দিন গুজরান ৷ শরীর খুবই দুর্বল ৷ ঠিক করে কথাও বলতে পারছেন না তিনি ৷ ঠান্ডায় গায়ে দেওয়ার মতো ভারী কিছুও নেই তাঁর কাছে ৷ যে মা একদিন নিজের সবটুকু দিয়ে বড় করেছে ৷ বৃদ্ধ বয়সে সেই মাকেই রাস্তায় ফেলে দিয়েছে 'কৃর্তীমান' এক ছেলে ৷ তাই মায়ের আশ্রয় হয়েছে শেষে মন্দিরে ৷ 'গুণধর' ছেলে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে গিয়েছে বউয়ের কাছে ৷ ঘটনাটি বিহারের বাঁকা জেলার শম্ভুগঞ্জ ব্লকে অবস্থিত বীরনৌধা গ্রামের ৷
একদিকে প্রবীণদের ভরণ-পোষণ নিয়ে আইন করছে বিহার সরকার । অন্যদিকে সরকারের এই আইনের কোনও প্রভাবই পড়ছে না কিছু মানুষের ওপর । বাঁকা জেলার এই ঘটনায় তেমনই ছবি উঠে আসছে ৷ বৃদ্ধাকে তাঁর ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে । ছেলে ও পুত্রবধূর অত্যাচারে 80 বছর বয়সি বাসন্তী দেবী গত তিন দিন ধরে মহাদেবের মন্দিরে জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছেন । তিনি ঠাকুরকে দেওয়া প্রসাদ ও গঙ্গাজল খাচ্ছেন । মাকে তাড়িয়ে দিয়ে ঘরে তালা মেরেছে ছেলে ৷ গিয়েছে স্ত্রীর কাছে ৷ বৃদ্ধার বউমা কাটিহারের কোনও এক হাসপাতালে এএনএম নার্স ৷
এই বৃদ্ধা হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে ছেলের জন্য তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তার জন্মের পরে বাড়িতে উৎসব হয়েছিল, সেই ছেলেই একদিন তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে ৷ তাঁর বৃদ্ধ বয়সের আশ্রয় হয়ে ওঠার বদলে তাঁর জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে ।
জানা গিয়েছে, যখন বৃদ্ধার ছেলে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় প্রতিবেশীরা তাঁকে সাহায্য করেছিল । তাদের দেওয়া খাবার খেয়ে তিনি জীবনযাপন করতেন ৷ তবে পুত্রবধূ ও ছেলের এমন মনোভাব দেখে প্রতিবেশীরাও এখন চাইলেও তাঁকে সাহায্য করতে পারছে না । তাই অবশেষে মহাদেব মন্দিরে বাকি জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন বৃদ্ধা । শিবভক্ত রাজেশ নিরালা ও রূপেশ কুমার সিং-সহ অন্যরা জানান, এই বৃদ্ধা শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল । খাবারের অভাবে কথাও ঠিকমতো বের হচ্ছে না । তবে তাঁর আত্মসম্মান এত বেশি যে তিনি কারও কাছে খাবারের ভিক্ষা করছেন না ৷ কেউ খাবার দিলেও গ্রহণ করছেন না । বরং তিনি কেবল শিবলিঙ্গে দেওয়া প্রসাদ খেয়ে এবং গঙ্গাজল পান করে বেঁচে রয়েছেন ।