মুম্বই, 3 এপ্রিল:প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডিগ্রির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরের মুখপত্র সামনা ৷ মোদির ডিগ্রি সরাসরি ভুয়ো বলে দাবি করে তার পেছনে বিভিন্ন যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে সামনার সম্পাদকীয়তে ৷
সেখানে লেখা হয়েছে, দেশের বর্তমান শাসন পদ্ধতির কারণে আমাদের দেশের বদনাম হচ্ছে এবং বিশ্বে গণতন্ত্রের "ছি থু" (অপমান) চলছে । একটি ভুয়ো মামলায় রাহুল গান্ধির দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হওয়া হল গণতন্ত্রের হত্যা ৷ বিশ্বের অনেক দেশ এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । কিন্তু দেশের অসম্মানের চেয়েও বেশি নিজের অসম্মানের শিকার হয়েছেন মোদি । যে প্রধানমন্ত্রী নিজের শিক্ষা লুকিয়ে রেখেছেন, তাঁকে গালি দিতে কেউ কেন বিরক্ত হবে ? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে এই প্রশ্নই ছুড়ে দেওয়া হয়েছে সামনার প্রতিবেদনে ৷
সামনার দাবি, মোদির কর্মফলই তাঁর দিকে বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে ৷ তিনি যে বীজ বপন করেছেন সেটাই অঙ্কুরিত হয়েছে । 'এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স'-এ মোদির ডিগ্রি সেই একই বীজ থেকে বেড়ে উঠেছে । 56 ইঞ্চি ছাতি যাঁর তাঁক কাছে কি এ সব প্রশ্নের জবাব রয়েছে ? সামনায় মোদির বিরুদ্ধে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, মোদির ক্লাস কাঞ্চি ? এর অর্থ হল, কোন ক্লাসে মোদি শিখেছেন ? প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, এতে লুকনোর মতো কী আছে ?
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, মোদি যে ডিগ্রি দেখাচ্ছেন তা ভুয়ো । গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ডিগ্রি মোদির হিসাবে দেখানো হয়েছে, তার স্ক্রিপ্টে মাস্টার স্টাইলে লেখা আছে । কিন্তু সেই স্ক্রিপ্টটি এসেছে 1992 সালে এবং মোদির ডিগ্রি 1983 সালের । তাই আলোচনা হওয়া উচিত ।
সামনার প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে যে, 1979 সালে মোদি বিএ করেন 1983 এমএ ৷ তাই কেন তিনি 2005 সালে বলেছিলেন, "আমার কোনও শিক্ষা নেই।" এর উত্তর মোদির দেওয়া উচিত ৷ যখন কেউ তাঁর ডিগ্রি ও শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন "দেখুন আমার মানহানি চলছে" এমনটা বলার অর্থ হল তিনি ভিকটিম কার্ড খেলছেন । শিবসেনার ঠাকরে দলের মুখপত্র সামনায় আরও চোখা চোখা প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে যে, মোদি কি আদৌ গুজরাত স্টেশনে চা বিক্রি করতেন ? নাকি করেননি ? এমন রহস্যের মতোই মোদির ডিগ্রিও এক রোমাঞ্চকর রহস্য বলে দাবি করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন:মোদির ডিগ্রি চেয়ে বিপাকে কেজরি, আদালত জরিমানা করতেই আসরে বিজেপি
সামনার যুক্তি, দেশ 'দেহাতি' প্রধানমন্ত্রী চায় না - দিল্লিতে এমন পোস্টার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তা ছিঁড়ে ফেলল । যাঁরা পোস্টার লাগিয়েছেন, তাঁদের গ্রেফতার করেছে । দেশের একজন শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজন - এই কথায় মোদির কেন মানহানি হবে ? বলা হয় যে, মোদির ডিগ্রি দেখাতে তিনি প্রস্তুত নন । এ দিকে, মজার মজার বক্তৃতা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে কেউ হারাতে পারবেন না । আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও তিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন ।
এ বার ভোপালে গিয়ে আরও একটি কৌতুকের জন্ম দেন মোদি । তিনি বলেন, "কিছু লোক আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন । সে জন্য তাঁরা দেশে ও দেশের বাইরে কয়েকজনের সঙ্গে যোগসাজশ করে সুপারি দিয়েছে । তাঁরা আমার কবর খোঁড়ার চেষ্টা করছেন । আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে ।" সামনায় প্রধানমন্ত্রী মোদির এই বক্তৃতাকে অযৌক্তিকতা এবং মিথ্যার প্রতীক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।
সামনা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদি প্রকাশ্যে একটি সাক্ষাৎকারে এবং একটি ভাষণে বলেছিলেন যে "আমি লেখাপড়া করিনি । আমার কোনও ডিগ্রি নেই এবং তারপর হঠাৎ মোদির এনটায়ার পলিটিক্যাল সায়ান্সে ডিগ্রি উঠে আসে এবং অমিত শাহ দিল্লিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন ও মোদির ডিগ্রির প্রশংসা করেন । তাই মোদির ডিগ্রি আসল না জাল তা নিয়ে জনগণের সন্দেহ, আর মোদির মানহানি হল কী করে ? এ প্রশ্নও করা হয়েছে সামনায় ।