বছর দশেক আগের কথা । ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করার সময় সেই সময়কার চিনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও বলেছিলেন, ‘‘গত দুই হাজার দুশো বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে শতকরা প্রায় 99.9 শতাংশ ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই থেকেছে ।’’ ওয়েন জিয়াবাও বাকি যে 0.9 শতাংশের অবন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন, তা হল 1962 সালের চিন-ভারত যুদ্ধের কথা । এই বেআইনি হামলার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে হওয়া পঞ্চশীল চুক্তি পুরোপুরি ভঙ্গ করেছিল ওয়েন জিয়াবাওয়ের দেশ ।
আবার উহান এবং মহাবলীপুরমে এই দুই দেশের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অমায়িক সম্পর্কের আবহেও দুই দেশের সীমান্ত বরাবর চিনের বিপুল সেনা সমাবেশ দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যুদ্ধের ঘন মেঘের আস্তরণে ঢেকে দিয়েছে । অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় হল এই যে, এর পরেও দুই দেশের মধ্যে ভয়ঙ্কর হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে । কীভাবে সম্ভব হল এই সদর্থক প্রক্রিয়া? কীভাবে এড়ানো গেল হিংসা? এর জন্য গত বেশ কয়েক মাসের নিরলস পরিশ্রমকেই কৃতিত্ব দিতে হবে । বেজিংয়ের আগ্রাসী মনোভাবকে প্রতিহত করতে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দাবি করতে পারে ভারতীয় সেনাবাহিনী । তারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চিন কর্তৃক ছিনিয়ে নেওয়া ভারতীয় ভূখণ্ড পুনরায় দখল করতে সমর্থ হয় । ভারতীয় সেনা উঁচু পার্বত্য এলাকার দখল নিয়ে চিনা দখলদারি মুক্ত করতে সমর্থ হয় ।
সংসদকে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, চিন ও ভারত দুই দেশই নিজেদের সেনা সরাচ্ছে ধাপে ধাপে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে । কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দাবি করেছেন যে, দুই দেশের এই সমঝোতার ফলে সীমান্তে মোটামুটি ভাবে মে মাসের আগের অবস্থা ফিরে আসবে । তিনি আরও দাবি করেন যে, এর ফলে ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চিনা হানাদারদের হাতে থাকবে না । প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন যে, প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ দুই প্রান্ত নিয়ে যত ক্ষণ না পর্যন্ত দুই দেশ নির্দিষ্ট সমঝোতায় পৌঁছবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দুই দেশই সেনা টহল বন্ধ রাখবে ।
যদিও চিন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বহুদিন কাজ করা বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, যে এলাকাকে ভারত এতদিন পর্যন্ত নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে এসেছে, সেই অঞ্চলে সেনা টহল বন্ধ রেখে সামরিক সুবিধা থেকে ভারতই বঞ্চিত হবে । চিন এমন একটি দেশ যারা 18টি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে রয়েছে । চিনের সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিশেষজ্ঞরা ৷ সে দেশের কোনও কথাকে পুরোপুরি বিশ্বাস না করার জন্য ভারতকে সাবধান করছেন । এই ধরনের সাবধানবাণীকে কখনওই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয় ।