হায়দরাবাদ, 24 মে: সেঙ্গল শব্দটির বুৎপত্তি 'সেম্মাই' থেকে । তামিল শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল 'ন্যায়' । সেই ন্যায়ের প্রতীকই এবার শোভা পাবে সেন্ট্রাল ভিস্তায় । আগামী রবিবার এই রাজদণ্ড বসাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । কেন্দ্রের এহেন ভাবনার কারণ কী ? দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং স্বাধীনতার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত প্রতীক তুলে ধরা, নাকি তা নিছকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার হাতিয়ার ?
সেঙ্গল প্রতীকটি অনেকগুলি উদ্দেশ্য পূরণ করে । রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে অন্য যেকোনও নেতার চেয়ে একটি ঘটনা বা বিষয়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারদর্শী । তামিলদের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে সে রাজ্যের সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক এবং ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহারে তাঁর উদ্দেশ্য রাজনীতি-বর্জিত একেবারেই নয় ।
দক্ষিণী কেতায় ধুতি পরা থেকে শুরু করে তামিলকে দেশের প্রাচীনতম ভাষা বলে দাবি করা, নিজেকে সে রাজ্যের শুভাকাঙ্খী হিসেবে তুলে ধরার কোনও চেষ্টাই তিনি হাতছাড়া করেননি । তারপরেই নতুন সংসদ ভবনে স্থাপিত সেঙ্গল তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ।
সেঙ্গল কী ?
সেঙ্গল দেশের স্বাধীনতার প্রতীক, সার্বভৌমত্বের রাজদণ্ড । যা ইংরেজ শাসনকে শেষ করে দেশের মুক্তির কথা বলে । স্বাধীনতার হস্তান্তরের সময় এই রাজদণ্ড তুলে দিয়েছিলেন শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন । রাজা গোপালাচারীর মস্তিষ্কপ্রসূত ওই প্রতীক তৈরির দায়িত্বে ছিল তিরুভাভাদুথুরাই মঠ । তামিল রাজ্যে গিয়ে ওই মঠের প্রসঙ্গও এসেছে মোদির স্তূতিবাক্যে ।
ইতিহাসের পুনঃপ্রবর্তনের কথাও শুনিয়েছিলেন রাষ্টপ্রধান । রবিবার ওই সেঙ্গলই নতুন সংসদ ভবনে স্পিকারের চেয়ারের সামনে এটি স্থাপন করবেন তিনি । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, এটি মধ্যযুগীয় রাজবংশের সাম্রাজ্যিক চোলদের ঐতিহ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরকে বোঝাতে 14 আগস্ট, 1947-এ নেহরুর 'Tryst with Destiny' ভাষণের আগে উপস্থাপন করা হয়েছিল । সেসময় সেঙ্গলকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, ইতিহাস ভুলে মাতামাতি হয়েছিল ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে । প্রজা অর্থাৎ দেশের জনগণের ক্ষমতার সেই প্রতীক গণতন্ত্রের মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করাই শ্রেয় ।
আরও পড়ুন: মোদির দূরদর্শিতার প্রমাণ নয়া সংসদ ভবন', বিরোধীদের অনুষ্ঠান বয়কটকে গুরুত্বই দিলেন না অমিত শাহ
যদিও শাহের এই দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন বহু বিদ্বজনই । লেখক পিএ কৃষ্ণান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন । 'ক্ষমতা হস্তান্তর' তত্ত্বটিকেই অস্বীকার করেছেন তিনি ৷ তাঁর প্রশ্ন, এটি প্রমাণ করার জন্য কোনও সংবাদপত্রের ক্লিপিং বা দলিল আছে ? এর কোনও প্রমাণ নেই । তাঁর দাবি, নেহেরু কখনই নিজেকে রাজা বলে মনে করেননি । সেসময় তিনি বলেছিলেন, তিনি জনগণের সেবক । তাঁর অভিযোগ, তামিলদের মন পেতেই বিজেপির এই প্রচেষ্টা ।
পন্নিয়িন সেলভান I এবং II-এর চিত্রনাট্যকার জয়মোহন লিখেছেন, এটি 'হোয়াটসঅ্যাপ থেকে প্রাপ্ত ইতিহাস'। তিনি বলেন, “ইতিহাসে এটা খুবই পরিষ্কার। দেশের স্বাধীনতা রচিত হয়েছে । এটা আশ্চর্যজনক যে এই তথ্যের যুগেও এই ধরনের হোয়াটসঅ্যাপ ইতিহাস আমাদের মধ্যে প্রচারিত হচ্ছে ।"