হায়দরাবাদ, 28 জুলাই:ভারতীয় উপমহাদেশে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu) ও নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই (Malala Yousafzai) এমন দুই মহিলা, যাঁরা নিজেদের অধ্যাবশায় ও যোগ্যতার বলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সর্বক্ষেত্রে মেয়েদের সমান অংশগ্রহণের পরিচায়ক ৷ যে পরিস্থিতি ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাঁরা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, সেই পরিস্থিতিই অনেক ক্ষেত্রে সমাজের অপ্রীতিকর কিছু বিষয়কে নগ্নরূপে তুলে ধরে ৷ যদিও এটাই বিবর্তন ও উন্নয়নের নিদর্শনও ৷
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়া রিজিয়নের পাশতুন কন্যা মালালা ইউসুফজাই ৷ ইসলামিক আইনের দোহাই দিয়ে পাশতুন প্রজাতির মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল জঙ্গিরা ৷ এই 'অপরাধে'ই জঙ্গিদের বুলেট নিশানা করে কিশোরী মালালাকে ৷ সেই ঘটনা এখন অতীত ৷ এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে ৷ তবে সেই ঘটনা দমিয়ে দিতে পারেনি মালালার পড়াশোনার ইচ্ছেকে ৷ প্রাণনাশের হুমকি সত্ত্বেও মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে তীব্র লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর একাগ্রতা ও সাহসিকতা তাঁকে এনে দিয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার ৷ পাকিস্তানের এফএটিএ (Federally Administered Tribal Areas) এলাকায় নারীদের উপর চরমপন্থী উপজাতিদের বর্বরতার স্মারক হিসাবে কাজ করেন মালালা ৷
অপরদিকে, আদিবাসী গ্রামের কন্যা মুর্মুর দেশের সর্বোচ্চ পদে উত্থান ভারতের উপজাতি বিবর্তনের জ্বলন্ত উদাহরণ ৷ তিনি সাঁওতাল উপজাতির সদস্য ৷ পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম ও ঝাড়খণ্ডের মতো দেশের কয়েকটি রাজ্যে এই উপজাতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ৷ ভারত এর আগেও মহিলা রাষ্ট্রপতি পেয়েছে ৷ তবে সদ্য রাষ্ট্রপতির পদে অভিষিক্ত দ্রৌপদী মুর্মু একজন সাঁওতাল হওয়ায় তাঁর ক্ষেত্রটা একেবারেই অনন্য ৷ স্কুলের শিক্ষিকার থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, মুর্মুর কেরিয়ারের এই সফর যে দেশের উপজাতি উন্নয়নের প্রতীক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷
যে দিন থেকে শাসক দল বিজেপি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেছে, সে দিন থেকেই গোটা দেশে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে সাঁওতালদের নিয়ে ৷ মুর্মু যেন তাঁদের কাছে এক গৌরবের অধ্যায় ৷ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর শিকড়ের খোঁজ নিতে সাঁওতালদের প্রতি কৌতূহল বেড়েছে মানুষের ৷ দেশের মোট 8 শতাংশ উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বৃহত্তম হল সাঁওতালরা ৷ মুর্মুকে ঘিরেই মানুষের মধ্যে জানার আগ্রহ বেড়েছে তাঁদেরও জীবনযাপন ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ৷
সাহসিকতা ও সংগ্রামের বিচারে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়ার পাশতুনদের সঙ্গে তুলনা টানা হয় সাঁওতালদের ৷ আগের নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স যা এখন কেপিকে হিসেবে পরিচিত, সেখানে খান গফর খানের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্ম দিয়েছে পাশতুনরা ৷ একই রকম ভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন সাঁওতাল বিপ্লবীরাও ৷ অন্যতম সাঁওতাল স্বাধীনতা সংগ্রামী থালাকাল চান্দু কেরালায় তীব্র সংগ্রাম চালিয়ে ব্রিটিশ দুর্গ দখল করেছিলেন ৷ যদিও পরে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয় ৷
আরও পড়ুন:অধীরের 'রাষ্ট্রপত্নী' মন্তব্যের কড়া সমালোচনায় স্মৃতি