পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

National Mathematics Day : জাতীয় গণিত দিবসে ‘অনন্ত-জ্ঞানী’ শ্রীনিবাস রামানুজনকে স্মরণ - December 22 National Maths Day

আজ 22 ডিসেম্বর৷ আজ সারা বিশ্ব গণিতশাস্ত্রে অবদানের জন্য স্মরণ করছেন শ্রীনিবাস রামানুজনকে ৷ কিংবদন্তি এই গণিতজ্ঞ 1887 সালে আজকের দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন ৷ আজকের দিনকেই ভারতে জাতীয় গণিত দিবস হিসেবে পালন করা হয় (National Mathematics Day) ৷

remembering srinivasa ramanujan on national mathematics day
National Mathematics Day : জাতীয় গণিত দিবসে ‘অনন্ত-জ্ঞানী’ শ্রীনিবাস রামানুজনকে স্মরণ

By

Published : Dec 22, 2021, 6:44 PM IST

হায়দরাবাদ, 22 ডিসেম্বর : গণিত হল সেটাই, যেটা আপনি তৈরি করেন ৷ এটা খুবই সত্যি কথা ৷ সম্ভবত গণিত বিজ্ঞানের থেকেও আরও বেশি শৈল্পিক বিষয় ৷ একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা কীভাবে পড়ুয়াকে অঙ্ক শেখাচ্ছেন, তা ওই শিল্পের উপর নির্ভর করছে ৷ শিক্ষক ভাল হলে পড়ুয়ারা অঙ্ককে ভালবাসবে ৷ কিন্তু শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি উদাসীন হন, তাহলে পড়ুয়ারা অঙ্ককে ভয় পেতে শুরু করে ৷

আজ, 22 ডিসেম্বর সারা বিশ্বের গণিতজ্ঞ ও পড়ুয়ারা গণিতশাস্ত্রে অবদানের জন্য স্মরণ করছেন শ্রীনিবাস রামানুজনকে (Remembering Srinivasa Ramanujan on National Mathematics Day) ৷ 1887 সালে এই তারিখে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৷ তাই তাঁর জন্মজয়ন্তীতে ভারতে পালিত হয় জাতীয় গণিত দিবস (National Mathematics Day) ৷ যা একেবারে যথোপযুক্ত ৷ তাঁর কর্মকাণ্ডকে স্মরণ করার, সেই কাজের সম্পর্কে পড়ুয়াদের অবগত করার এবং মহান রামানুজনের মতো তাঁদের গণিতশাস্ত্রে আগ্রহী করে তোলার জন্য আজকের দিনটা আদর্শ ৷

আরও পড়ুন :অঙ্কে ভীতি ? পড়ুয়াদের নতুন দিশা দেখাতে পারে বৈদিক গণিতবিদ্যা

রামানুজন ছিলেন ব্রিটিশ ব়্যায়াল সোসাইটির সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য ৷ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজের প্রথম ভারতীয় অধ্যাপক ছিলেন ৷ গাণিতিক বিশ্লেষণ, ইনফাইনাইট সিরিজ, কন্টিনিউড ফ্র্যাকশন এবং সংখ্যাতত্ত্বে তাঁর অবদান অপরিসীম । নম্বর, ইলিপটিক ফাংশনস, কন্টিনিউড ফ্র্যাকশনস এবং ইনফাইনাট সিরিজ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন রামানুজন ৷

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রামানুজন নিজস্ব উপপাদ্য আবিষ্কার করেছিলেন এবং স্বাধীনভাবে অন্তত 3900 ফল মিশ্রিত করেছিলেন ৷ সারা বিশ্বের গণিতজ্ঞরা স্বীকার করেন যে তাঁর তত্ত্বগুলি বিংশ শতাব্দীতে অঙ্ককে পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল ৷ আর একবিংশ শতাব্দীতে তা একটা আকার পেয়েছে ৷

রামানুজন ছাড়াও ভারত থেকে গণিতশাস্ত্রে আরও বেশ কয়েকজন হিরে উঠে এসেছে ৷ সেই তালিকায় থাকবেন সত্যেন্দ্রনাথ বোস, সিআর রাও, প্রশান্তচন্দ্র মহালনবীস, শকুন্তলা দেবী৷ আর তরুণ মঞ্জুল ভার্গব ৷ যিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে ফিল্ডস মেডেল পেয়েছিলেন ৷ বিংশ শতাব্দীতে নিঃসন্দেহে রামানুজন ছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ ৷ তবে তারে আগেও ভারত সারা বিশ্বের মধ্যে গণিতের আবিষ্কারের মধ্যে সকলের থেকে এগিয়ে ছিল ৷

আরও পড়ুন :পা দিয়ে অঙ্ক শেখান আজকের 'জগন্নাথ'

এই বিষয়ের প্রতি ভারতীয়দের আগ্রহ সেই প্রাচীন যুগ থেকে শুরু হয়েছিল ৷ সিন্ধু সভ্যতার সময় (যা প্রায় 3000 বিসি পর্যন্ত স্থায়ী ছিল) থেকেই গণিতের ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে আবিষ্কারের শুরু ৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হরপ্পা মহেঞ্জোদারের সময় 4:2:1 ভাবে ইঁট তৈরি হত ৷ আর তার ওজন জ্যামিতিক আকারের সঙ্গে একেবারে সমান সমান হত ৷

সিন্ধু সভ্যতার কিছু আগে ভারতে বৈদিক গণিতের সূচনা হয়েছিল ৷ যা ভারতীয়দের আরও একটা আবিষ্কার ৷ পাটিগণিত সহজে কষার জন্য বিশ্বজোড়া সুনাম রয়েছে বৈদিক গণিতের ৷ বৈদিক গণিতে 16টি সূত্র ও 13টি উপ-সূত্র রয়েছে, যা পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, ক্যালকুলাস ও কনিক্স করতে অনেক বেশি সাহায্য করেছে ৷

400 এডি থেকে 1200 এডির মধ্যে আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত, ভাস্কর-2 এবং বরাহমিহিরের মতো ভারতীয় কৃতীরা তাঁদের আবিষ্কারের মাধ্যমে গণিতকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন ৷ এটা বলা হয় যে আর্যভট্ট যদি না থাকতেন, তাহলে এই বিশ্ব 0 (শূন্য) সম্পর্কে জানতেই পারত না ৷ তিনি চার দশমিক পর্যন্ত পাই-এর মানও আবিষ্কার করেছিলেন ৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি প্রথম একটি বছরের পুরোদিনের গণনা করেছিলেন ৷

আরও পড়ুন :ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পছন্দ নয়, অঙ্কের শিক্ষিকা হতে চায় মাধ্যমিকে দশম অঙ্কিতা

পরে ব্রহ্মগুপ্ত ফিবোনাচ্চি পরিচয় আবিষ্কার করেন এবং দ্বিঘাত সমীকরণের পর প্রথম সাধারণ সূত্র খুঁজে বের করেন ৷ একই সঙ্গে তিনি সাইন টেবল ও পিথোগোরিয়ান টেবল একত্র করেন ৷ একই ভাবে গণিতজ্ঞ ও জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ভাস্কর বা ভাস্করাচার্য ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন এবং তিনি পাটিগণিত, বীজগণিত, গ্রহ ও গোলকের অঙ্কে খুবই দক্ষ ছিলেন ৷ ভুলে গেলে চলবে না যে বিখ্যাত জৈন দার্শনিক হেমচন্দ্র ‘এন’ দৈর্ঘ্যের ক্যাডেনস নিয়ে কাজ করেছিলেন এবং ফিবোনাচ্চির আগেই ফিবোনাচ্চি ক্রম বর্ণনা করেছিলেন ।

ভারতের সমস্ত তরুণ পড়ুয়াদের এই সব মেধাবীদের সম্পর্কে জানতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে তাঁদের আবিষ্কার শুধু শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে না বরং দৈনন্দিন জীবনেও প্রয়োগে কাজে লাগবে ৷

দৈনন্দিন জীবনে অঙ্কের ব্যবহার আমরা সবাই জানি ৷ অঙ্ক ছাড়া ব্যবসার কথা ভাবা যায় না, এটুকু তো বলাই যায় ৷ গণিতের সূত্রের আমাদের জীবনে কী ভূমিকা, তা না জেনেই আমরা নিয়মিত কোনও সামগ্রী বা পরিষেবার মূল্য নির্ধারণ করতে পারি এবং তার দাম দিয়েও দিতে পারি ৷ শিক্ষিত, কম শিক্ষিত, এমনকী নিরক্ষরও এই কাজ করে ফেলতে পারেন ৷

আরও পড়ুন :ফেলে দেওয়া বিস্কুট-চিপসের প্যাকেটের ব্যবহার, দিশা দেখাচ্ছেন সিকিমের শিক্ষক

আর একটু এগিয়ে গেলে আমাদের অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ ও গণিতজ্ঞরা গণিতের বিভিন্ন দিককে ব্যবহার করে কোনও সংস্থা, শেয়ার, বন্ড এবং দেশের উন্নতির অঙ্ক কষেন ৷ বাস্তব বিষয়কে বাদ দিন ৷ অবস্তাব বিষয়ও অঙ্কের ভিত্তিতে গণনা করা হয় ৷ যেমন- কোনও সংস্থার সুনাম, কোনও দেশের সুখের সূচক ৷

আরও সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে মহামারী বিশেষজ্ঞরা অত্যাধুনিক গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে কোভিড-19 এর সংক্রমণের বৃদ্ধির বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন ৷ একই ভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরোর বেশ কয়েকটি সফল উৎক্ষেপনও দেখিয়েছে যে গণিতকে কীভাবে সঠিক ভাবে ও মানুষের জীবনকে আরও ভালো করার জন্য ব্যবহার করা যায় ৷ রকেট বিজ্ঞানের সঙ্গে গাণিতিক বিশ্লেষণকে মিশ্রণ করায় ইসরো উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করতে সাহায্য পেয়েছে ৷ যা আমাদের চারপাশ সম্পর্কে তথ্য দেয়, আমাদের শত্রুদের হাত থেকে বাঁচায় এবং যে কোনও প্রাকৃতিক বা মানব-সৃষ্ট দুর্যোগ সম্পর্কে আগাম সতর্ক করে ৷ এছাড়া প্রতিরক্ষা এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে গণিতের ব্যবহারও মারাত্মক ।

আরও পড়ুন :অঙ্কের ক্লাস মিস করছেন উর্বশী !

সম্প্রতি যে জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 বলবৎ করা হয়েছে, সেখানে গণিত, ব্যবহারিক গণিত ও বৈদিক গণিতের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ খসড়ায় লেখা আছে, ‘‘পাঠক্রমের দিক থেকে গণনা, পাটিগণিত এবং গাণিতিক চিন্তাধারায় অনেক বেশি নজর দেওয়া হবে একেবারে প্রাক-প্রাথমিক ও মধ্য স্কুল পর্যায় থেকে ৷’’

ওই খসড়ায় আরও লেখা রয়েছে, ‘‘গণিত নিয়ে ভালমানের দ্বিভাষিক পাঠ্যবই এবং শিক্ষাদান ও শেখার বিষয়ে সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে ৷’’ বাস্তব জীবনের অঙ্কের প্রয়োগ সম্বন্ধে স্কুল জীবনে শেখার শুরু হতে পারে অনেক আগেই কোডিং শেখানোর জন্য জাতীয় শিক্ষানীতিতে থাকা প্রস্তাব ৷

এগুলি যখন প্রাথমিক স্তরের জন্য সঠিক পদক্ষেপ, তখন জাতীয় শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অঙ্কের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর আলোচনাও করা হয়েছে ৷ খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘এটা স্বীকার করা হল যে অঙ্ক ও গাণিতিক ভাবনা ভারতের ভবিষ্যত এবং বেশ কিছু ক্ষেত্র ও পেশার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ যার মধ্যে আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স, মেশিন লার্নিং এবং ডেটা সায়েন্স ইত্যাদি রয়েছে ৷’’

আরও পড়ুন :শুধু গণিত নয়, আজীবন মোহনবাগানি কে সি নাগ লিখেছেন ভক্তিগীতিও

তরুণ পড়ুয়ায় প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, গণিতের এই বিষয় তাঁদের কীভাবে সাহায্য করবে ? আর আমি তাঁদের বলি যে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই অঙ্কের প্রতিটি বিষয়ের অনেক দাম ৷ তাই এটা নির্ভর করছে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর, যাতে তাঁরা অঙ্কের মতো বিষয়কেও পড়ুয়াদের ভালোবাসতে শেখান ৷ জাতীয় শিক্ষানীতি শিক্ষাদানের পদ্ধতিকেও ভূমিকাকেও স্বীকার করেছে ৷ খসড়ায় লেখা হয়েছে, ‘‘শিক্ষকদের অঙ্ক শেখানোর মানের উন্নতি করা হবে ৷’’

এখন বললে বিষয়টি পাগলের প্রলাপ বলে মনে হবে, কিন্তু আমি বলতে পারি যে আগামী প্রজন্মে ভারত থেকেই অনেক আবিষ্কার হবে এবং সেই আবিষ্কারের মূল থাকবে গণিতে ৷ আমাদের দেশের কিছু সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার না করতে চেয়ে অনেকগুলো বছর নষ্ট করেছে ৷ জাতীয় শিক্ষানীতির হাত ধরে সেই বিষয়গুলি আবার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ৷ তাই প্রত্যেক পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবক-অভিভাবিকারদের শিক্ষার বিষয়টি উপভোগ করতে হবে ৷ শিখতে হয়, তা শিখছি বা শেখাচ্ছি, এমনটা যেন না হয় ৷ আর গণিতকে ভালোবাসুন, তাহলে গণিত আপনাদের ভালোবাসবে ৷

(লেখক অভিষেক ট্যান্ডন, ব্যবহারিক গণিতে পিএইচডি করেছেন)

ABOUT THE AUTHOR

...view details