পুণে, 7 নভেম্বর : ‘‘স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা অবশ্যই অর্জন করব ৷’’ যাঁরা ইতিহাস ভালোবাসেন, তাঁদের কারও পক্ষেই লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের এই স্লোগান কোনওদিন ভোলা সম্ভব নয় ৷ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য ৷ কেসরি এবং মাহরাত্তায় তাঁর লেখা যে প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হত, তা অসংখ্য ভারতবাসীকে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল ৷ এই কারণেই ব্রিটিশরা তাঁর গায়ে ‘ভারতীয় অশান্তির জনক’-এর তকমা সেঁটে দিয়েছিল ৷ কিন্তু, তারপরও ভারতীয়দের মধ্যে তিলকের জনপ্রিয়তাকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি ৷
আরও পড়ুন :Independence Special : অসহযোগ আন্দোলনের সন্ধিক্ষণে জন্ম, শতবর্ষ পরও বিপ্লবের প্রতীক জামিয়া মিলিয়া
ভারতীয়দের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সামিল করতে তিলকের অস্ত্র ছিল তাঁর কলম ৷ ঐতিহাসিক মোহন শেট্টের কথায়, ‘‘কলমের ক্ষমতা যে তরোয়ালের থেকেও বেশি, তিলকের লেখাই তার প্রমাণ ৷ সব ভারতীয়ই তিলকের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল ৷ তাঁর নেতৃত্ব ছিল বহুমুখী ৷ ব্রিটিশদের দেশ থেকে তাড়াতে চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি তিনি ৷’’
1856 সালের 23 জুলাই রত্নাগিরিতে জন্ম হয় লোকমান্য তিলকের ৷ 1866 সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে রত্নাগিরি ছেড়ে পুণে চলে আসেন তিনি ৷ এখানেই 1872 সালে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাস করেন তিলক ৷ তার আগে 1871 সালেই কোঙ্কনের বল্লাল বল পরিবারের সত্যভামা বাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর ৷ 1876 সালে ডেকান থেকে স্নাতক হন তিলক ৷ সেখানেই গোপাল গণেশ আগরকরের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর ৷ ব্রিটেন থেকেই তাঁরা দু’জনে একসঙ্গে স্বাধীনতার লড়াইয়ে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷ পরে 1881 সালে তিলক এবং আগরকর দু’টি সংবাদপত্র চালু করেন ৷ মারাঠী ভাষায় কেসরি এবং ইংরেজি ভাষায় মাহরাত্তা ৷ পরে দু’টি কাগজেরই দায়িত্ব নেন তিলক ৷ 1881 থেকে 1920 সালের মধ্যে মোট 513টি প্রবন্ধ লিখেছিলেন তিলক ৷ যা জনমানসে বিরাট সাড়া ফেলেছিল ৷ ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করায় তিলককে কারাবাসও করতে হয় ৷ তবু তাঁকে থামানো যায়নি ৷
বালগঙ্গাধরের কলম ধার বাড়িয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধের আরও পড়ুন :Independence Special : অবিভক্ত ভারতবর্ষের পুজো হয় কাশীর ভারত মাতা মন্দিরে
1905 সালে বঙ্গভঙ্গের পর দেশে দাঙ্গা শুরু হয় এবং দিকে দিকে হিংসাত্মক বিক্ষোভ দানা বাঁধে ৷ এই প্রেক্ষাপটে স্বদেশি, বয়কট, জাতীয় শিক্ষা ও স্বরাজের পক্ষে সুর চড়াতে শুরু করেন তিলক ৷ আজও তিলক বহু মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন ৷ তাঁর প্রোপৌত্র রোহিত তিলক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সারা ভারতে স্বরাজের আলো জ্বালিয়েছিলেন লোকমান্য তিলক ৷ কেসরিতে ব্রিটিশবিরোধী প্রবন্ধ লিখে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল ৷ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধ মানুষকে একজোট করতে স্বরাজের মন্ত্র জপ করেছিলেন তিনি ৷’’ স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তি উপলক্ষে ইটিভি ভারতের তরফ থেকেও এই মহান নেতাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে, যিনি গোটা ভারতকে স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ৷