পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

Ganesh Chaturthi 2022: সুখ, সমৃদ্ধি আর সামঞ্জস্যের কামনাতেই পালিত হয় গণেশ চতুর্থী - গণেশ চতুর্থী 2022

আজ গণেশ চতুর্থী (Ganesh Chaturthi 2022) ৷ কী কারণে ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষে গজাননের আরাধনা করা হয়, আসুন জেনে নিই ৷

Religious importance of Ganesh Chaturthi 2022
Ganesh Chaturthi 2022 সুখ, সমৃদ্ধি আর সামঞ্জস্যের কামনাতেই পালিত হয় গণেশ চতুর্থী

By

Published : Aug 31, 2022, 8:58 AM IST

কলকাতা, 31 অগস্ট: হিন্দু ক্য়ালেন্ডার অনুসারে, ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষে গণেশ চতুর্থী (Ganesh Chaturthi 2022) পালন করা হয় ৷ হিন্দু পুরাণ মতে, এই বিশেষ দিনটিতেই জন্ম হয়েছিল পার্বতী পুত্র গজাননের ৷ তাই গণেশ চতুর্থীর উৎসব আদতে সিদ্ধিদাতার জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান ৷

কিন্তু, শুধুমাত্র গণেশের জন্মজয়ন্তী পালনের জন্যই কি গণেশ চতুর্থীর পুজো করা হয় ? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এর পিছনে একগুচ্ছ ধর্মীয় ও আচার সংক্রান্ত কারণ রয়েছে ৷ তবে, সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু করার আগে জানা দরকার গণেশের জন্মরহস্য এবং হিন্দু দেবকুলে তাঁর অন্তর্ভুক্তির কাহিনি ৷

তখন হিমালয়কন্য়া পার্বতী দেবাদিদেব মহাদেবের ঘরণী ৷ তিনি দেখেন, শিবের সবসময়ের সঙ্গী নন্দী আদতে তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর ৷ প্রভুর জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত নন্দী ৷ পার্বতী চেয়েছিলেন, তাঁরও একান্ত অনুগত এমন কেউ থাকুন ৷ তাই একদিন নিজের ত্বক দিয়ে এক বালকের মূর্তি তৈরি করে তাতে প্রাণ সঞ্চার করেন তিনি ৷ সেই বালক তাঁকে 'মা' বলে সম্বোধন করে ৷ এমন পুত্র পেয়ে আনন্দের সীমা থাকে না পার্বতীর ৷ দেবী বালককে বলেন, তিনি স্নানাগারে যাচ্ছেন ৷ এই সময়টুকুর জন্য কেউ যেন তাঁকে বিরক্ত না করে এবং কেউ যেন পার্বতীর কক্ষে প্রবেশ করতে না পারে ৷ বালককে তাই ঘরের দরজার বাইরে পাহারা দিতে বলেন মাতা পার্বতী ৷

আরও পড়ুন:কীভাবে পালিত হয় গণেশ চতুর্থী, জেনে নিন বিস্তারিত

কিন্তু, ইতিমধ্যে শিব পার্বতীর কক্ষে প্রবেশ করতে আসেন ৷ বালক তাঁকে বাধা দেয় ৷ কারণ, সে তার মা ছাড়া আর কাউকেই চিনত না ৷ এদিকে, মহাদেবও জানেন না এই বালক আদতে তাঁরই পুত্র ৷ দু'জনের মধ্যে বিবাদ শুরু হয় ৷ বালকের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে শিব তার শিরোচ্ছেদ করেন ৷ স্নানাগার থেকে বেরিয়ে এই দৃশ্য দেখে রাগে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন দেবী পার্বতী ৷ তাঁকে শান্ত করতে সকলে মহাদেবের দ্বারস্থ হন ৷ মহাদেব তাঁর অনুচরদের বলেন, চারিদিকে ছড়িয়ে যেতে ৷ নির্দেশ দেন, সবার প্রথম যে প্রাণীর মাথা বা মুণ্ড তাঁরা দেখতে পাবেন, সেটাই যেন কুড়িয়ে তাঁর কাছে নিয়ে আসা হয় ৷ কিন্তু, তার আগেই একটি হাতি হরগৌরীর পুত্রের জীবন ফেরাতে আত্মবলিদান দিতে রাজি হয় ৷ সেই হাতির মুণ্ডই শিবের অনুচররা তাঁর কাছে নিয়ে আসেন ৷ শিব তাঁর দৈবশক্তির সাহায্যে বালকের ধরের সঙ্গে হাতির মুণ্ড জুড়ে দেন ৷ নতুন রূপে জীবন ফিরে পায় বালক ৷ বস্তুত, তার পুনর্জন্ম হয় ৷

পুরাণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা হল, দেবীর পার্বতীর সৃষ্টি করা বালক আদতে মোহের প্রতীক ৷ যা মালিকানার ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করে ৷ অন্যদিকে, মহাদেব হলেন বৈরাগী ৷ তিনি ত্যাগের প্রতীক ৷ প্রকৃত সত্য ও শান্তি পেতে দুঃখ এবং যন্ত্রণার উৎস সমূলে উৎখাত করা দরকার ৷ এক্ষেত্রে গণেশের মাথা ছিল সেই উৎস, যা বহু চিন্তার বশবর্তী হয়ে অশান্তি সৃষ্টি করেছিল ৷ শিব বালক গণেশের শিরোচ্ছেদ করে আসলে সেই ভ্রান্ত চিন্তার উৎসকেই উপড়ে দিয়েছিলেন ৷

এছাড়াও, শিব তাঁর ত্রিশূল দিয়ে গণেশের মুণ্ড ধর থেকে আলাদা করে দিয়েছিলেন ৷ ত্রিশূলের তিনটি ধারাল ফলা মানুষের তিনটি গুণের প্রতীক ৷ এগুলি হল, সত্য (অর্থাৎ ধার্মিক, প্রশান্তি, সামঞ্জস্যপূর্ণ), রজস (অর্থাৎ আবেগ, সক্রিয়তা, গতি) এবং তমস (অর্থাৎ অজ্ঞতা, জড়তা, আলস্য) ৷ যাঁরা এই তিনটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য়ের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করতে পারেন, তাঁরাই জীবনে সফল হন ৷ শিবের সৌজন্যে গণেশ সেই কাজে সফল হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে পেয়েছিলেন প্রথম দেবতার স্বীকৃতি ৷ তাই তাঁর আবির্ভাব তিথিতে পুজো ও উৎসব পালন আদতে মানুষের জীবনকে সঠিকভাবে চালিত করার চেষ্টারই নামান্তর ৷ যা জীবনে সুখ, শান্তি ও সাফল্য নিয়ে আসে ৷

আরও একটা কথা এখানে বলা দরকার ৷ এত পশু, পাখি থাকতে হাতির মাথাই কেন গণেশের জন্য বেছে নেওয়া হল ? পৌরাণিক বর্ণানায় একটি হাতির আত্মত্য়াগের কথা বলা হলেও আসলে হাতি হল মননশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তার প্রতীক ৷ অর্থাৎ, গণেশের পুজো করার অর্থ এই দু'টি গুণকেও আত্মস্থ করা ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details