পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

"স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, উত্তরাখণ্ড বিপর্যয়ের দায় মানুষেরই" - শিশির চট্টোপাধ্য়ায়

প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে গিয়েই বারবার তার রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। তারই আরও একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করল উত্তরাখণ্ডের চামোলির ঘটনা। ই টিভি ভারতের কাছে এমনই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ তথা অধ্যাপক শিশির চট্টোপাধ্য়ায়।

uttarakhand disaster
uttarakhand disaster

By

Published : Feb 7, 2021, 5:56 PM IST

Updated : Feb 7, 2021, 6:21 PM IST

কলকাতা, 7 ফেব্রুয়ারি : 2013 সালের পর 2021। আবারও প্রকৃতির চণ্ডাল রোষে উত্তরাখণ্ড। বারবার কেন ওই পাহাড়ি এলাকার প্রতি বিরূপ হচ্ছে প্রকৃতি? বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কেন বারবার ছারখার হয়ে যাচ্ছে মানুষের প্রাণ, সম্পত্তি? পরিবেশবিদরা এ জন্য সম্পূর্ণ দায়ি করেছেন মানুষকেই। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় বারবার আক্রান্ত প্রকৃতি। সেই কারণেই সে তার স্বাভাবিক নিয়মে চলার পথে সামনে যাকে পাচ্ছে, তাকেই গুঁড়িয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর সব জেনে বুঝেও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা থেকে বিরত হচ্ছে না মানবজাতি।

ভৌগোলিক অবস্থানের নিরিখে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি এই অঞ্চল প্রকৃতির নিজস্ব একটি নিয়মের গণ্ডিতে বাঁধা। প্রবল বৃষ্টি এই অঞ্চলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তার সঙ্গে রয়েছে হিমবাহ গলা জল। সেই জল ধারণ করেই এঁকে বেঁকে এগিয়ে গিয়েছে সেখানকার নদীগুলি। তার উপর এই অঞ্চল নবীন ভঙ্গিল পর্বতের অংশ। সেই কারণে এই অঞ্চলে লেগেই থাকে ভূমিকম্পের আশঙ্কা। লেক গুলির ভাঙা গড়া ক্রমাগত চলতে থাকে। বৃষ্টির তারতম্য কিংবা কম্পনের কারণে হিমবাহ ভেঙে নদীর জল বৃদ্ধি পেলে তা স্বাভাবিক ভাবেই নদীর দু'কূল ছাপিয়ে নেমে আসে।

এই প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতার কোনও বিষয়ই ছিল না। প্রকৃতির এই নিয়ম ভেঙে তাকে নিজের মতো করে চালানোর চেষ্টা করতে গিয়েই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। অধ্যাপক শিশির চট্টোপাধ্য়ায়ের এ ব্যাপারে ইটিভি ভারতকে বলেন, 2013 সালে ঠিক যা হয়েছিল, এ বারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। তাঁর কথায়, ''প্রকৃতি তার পছন্দ মতো সব আয়োজন করে এই সৃষ্টি করেছে। আর মানুষ তাকে তার মতো করে চালানোর চেষ্টা করলেই বাধছে বিরোধ। জল বেরোনোর রাস্তাগুলিকে বন্ধ করে উন্নয়নের নাম করে, পর্যটনের নাম করে মানুষ রাস্তা, বাড়ি ঘর বানাচ্ছে। জনবসতি গড়ে তুলছে। তুষারধসের কারণে যে এলাকা গিয়ে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে, সেখানে কোনও বিদ্যুত্‍‌ প্রকল্প বা জনবসতি তো থাকার কথা ছিল না। তাহলে এই বিপর্যয়ও হত না। জল নিজের নিয়মেই নেমে আসত। নন্দাদেবী হিমবাহে ধসের কারণে ধৌলিগঙ্গার দু পাশ দিয়ে জল প্রবল গতিতে নেমে আসার সময় ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে জনবসতি।''

আরও পড়ুন:8 বছর পর উত্তরাখণ্ডে ফের প্রকৃতির রোষ, কী হয়েছিল 2013 বিপর্যয়ে ?

পর্যটনকে সামনে রেখে বারবার মানুষের সফট টার্গেট হয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী চামোলি। এই চামোলি পরিচিত চিপকু বা গাছ আন্দোলনের জন্য। আগেও এখানে ডালপালা ছড়িয়েছে মানুষ। অধ্যাপক চট্টোপাধ্য়ায়ের মতে, ''পর্যটকদের পরিকাঠামো দেওয়ার নাম করে বাঁধ তৈরি হচ্ছে। নির্মাণকাজ হচ্ছে। বারবার মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বলি হতে হয়েছে চামোলিকে। এখন ওই এলাকায় প্রায় 5 লাখ মানুষের বাস। অলকানন্দা ওই এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী। অথচ মানুষ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে বাঁধ দিয়ে, নদীপথ ঘুরিয়ে ভূমিরূপের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এসবেরই ফল এ দিনের ঘটনা।''

2013 সালের বিপর্যয়ের পরও ভাগীরথী ইকোসেনসিটিভ জোনে জোনাল মাস্টার প্ল্যান নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিবেশবিদদের দাবি, এর মাধ্যমে 900 কিলোমিটারের চারধাম জাতীয় সড়ক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ ও বদ্রিনাথকে সংযোগ করবে। স্বাভাবিকভাবেই বিঘ্নিত হবে প্রকৃতির ভারসাম্য।

প্রকৃতির রোষ থেকে বাঁচতে গেলে মানুষকেই সংযমী হতে হবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। প্রকৃতির উপর চাপ সৃষ্টি করা বন্ধ না-হলে আবারও বড়সড় বিপর্যয়ের সাক্ষী থাকতে হবে দেশকে।

Last Updated : Feb 7, 2021, 6:21 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details