রাহুল, নাড্ডা ও ভাগবত তামিলনাড়ুতে : পোঙ্গলে জুড়ল রাজনৈতিক রং

তামিলনাড়ু ক্রমশ নির্বাচনের দিকে যত এগিয়ে চলেছে, ততই নির্বাচনী প্রচারে কোনও ছেদ পড়ছে না ৷ রাজনৈতিক দলগুলি পোঙ্গল উৎসবকেও ছাড়তে রাজি নয় ৷ পোঙ্গল, তামিলনাড়ুর সংস্কৃতির অন্যতম পরিচয় ৷ এখন বিজেপিও সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৷ তারা তাদের উত্তর ভারতীয় ভাবমূর্তি ঢেকে দিয়ে নিজেদের তামিলদের হিতাকাঙ্খি হওয়ার চেষ্টা করছে ৷ জানুয়ারি মাসের 14 তারিখ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা পোঙ্গল উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ৷ দল তামিল সংস্কৃতির পরিচায়ক হয়ে উঠতে চাইছে বলেও বিজেপির বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছে ৷ আরএসএস - এর প্রধান মোহন ভাগবতও শহরে উপস্থিত থাকবেন এই উৎসব পালন করার জন্য ৷ কংগ্রেসও কিন্তু পিছিয়ে নেই ৷ তারা বরাবর এই উৎসব অনাড়ম্বর ভাবে পালন করে ৷ তবে এবার দক্ষিণের মাদুরাইতে জাল্লিকাট্টু (ষাঁড়ের লড়াই) - তে অংশগ্রহণ করবেন রাহুল গান্ধি ৷ যখন জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলি পোঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে, তখন এই উৎসবকে প্রকাশ্যে পালন করা শুরু করেছিলেন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী ও ডিএমকের সভাপতি এম করুণানিধি ৷ তিনি এই উৎসবের নাম দিয়েছিলেন, 'সামাতুভা পোঙ্গল' (সমানাধিকারের বার্তা নিয়ে পোঙ্গল উদযাপন) ৷ লিখেছেন এম সি রঞ্জন ৷

চেন্নাই : রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের আগে বিজেপি তামিলনাড়ুর জনতার কাছে পৌঁছাতে নিজেদের তামিল হিতাকাঙ্খি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে ৷ সেই কারণে তারা 'নাম্মা ওরু পোঙ্গল' (আমাদের শহরে পোঙ্গল) নামে একটি কর্মসূচিও নিয়েছে ৷ এর আগে কখনও এই গেরুয়া দল এই কাজ করার চেষ্টা করেনি ৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা 14 জানুয়ারি এই ধরনের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন ৷ আর অংশ নেবেন আরএসএস - এর সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ৷ কংগ্রেসও কি পিছিয়ে থাকবে ? একই দিনে মন্দির শহর মাদুরাই - তে উপস্থিত থাকবেন রাহুল গান্ধি ৷ শতাব্দী প্রাচীন দলের প্রথম পরিবারের এই বংশধর হাজির হবেন 'জাল্লিকাট্টু' দেখার জন্য ৷ দুটি রাজনৈতিক দলই নিজেদের স্বার্থে উৎসবকে রাজনীতির হাতিয়ার করছে ৷

বিজেপি তার 'ভেল যাত্রা' (লর্ড মুরুগানের বাসস্থানগুলির সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে একটি যাত্রা) শুরু করার কাছাকাছি চলে এসেছে ৷ যা এখনও প্রত্যাশামতো প্রচার পায়নি ৷ তবে রাজ্যজুড়ে চলচ্চিত্র তারকাদের মাঠে নামানোর বিষয়ে তালিকা তৈরি করেছে বিজেপি ৷ আগেকার দিনের গ্ল্যামার ডল খুশবু ও কলিউডের সেক্স সাইরেন নমিতা সম্প্রতি নিজেদের গেরুয়া শিবিরে অন্তর্ভুক্ত করেছেন ৷ গত দুই দিনে তাঁরা 'নাম্মা ওরু পোঙ্গল' নিয়ে মিডিয়ার আকর্ষণ তৈরি করতে পেরেছেন ৷ প্রত্যাশা মতোই কংগ্রেস অনাড়ম্বর ভাবে এই অনুষ্ঠান পালন করতে চলেছে টিএনসিসি-র সদর কার্যালয় সত্যমূর্তি ভবনে ৷

পোঙ্গলের অনুষ্ঠান ছাড়াও নাড্ডা 'তুঘলক' ম্যাগাজিনের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন ৷ তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর জায়গায় ওই অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন ৷ পূর্বঘোষিত ও সরকারি কিছু কাজের জন্য অমিত শাহ ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারছেন না ৷ তাঁর সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়েছিল ৷ কারণ, বিজেপি শাসক এআইএডিএমকে-র কাছ থেকে একটা বড় অংশের আসনে নির্বাচনে লড়ার জন্য দাবি করছে ৷

এদিকে আরএসএস-এর প্রধান মোহন ভাগবতও চেন্নাইয়ে রয়েছেন ৷ আর তিনিও একটি পোঙ্গলের অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন ৷ আরএসএস-এর সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে তাঁর এই সফর অনেক আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল ৷

অন্যদিকে কংগ্রেসও রাহুলের আগমন ঘিরে খুবই উৎসাহী ৷ তিনি বিদেশ থেকে ফেরার পর এটাই প্রথম সফর ৷ টিএনসিসি-র সভাপতি কে এস আলাগিরি সাংবাদিকদের বলেছেন, “মাদুরাইতে আয়োজিত জাল্লিকাট্টু দেখতে যাওয়া “তামিলদেরই সম্মান” জানানোর সমান ৷ চার ঘণ্টা ধরে এই অনুষ্ঠান চলবে ৷ আর এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের উদ্দেশ্যে পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হবে ৷ এর মধ্যে কোনও রাজনীতির ব্যাপার নেই ৷ তিনি প্রচারের শুরু করবেন ৷” এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “ডিএমকে-র সভাপতি এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গে রাহুলের বৈঠকেরও কোনও সম্ভাবনা নেই ৷”

তবে এই প্রথমবার পোঙ্গলের সময় রাহুল গান্ধি ওই রাজ্যে সফর করতে যাচ্ছেন এবং এর রাজনৈতিক গুরুত্বকে অবহেলা করা যাবে না ৷ কংগ্রেসের ভাগ্য এই রাজ্যে ক্রমশ কমতে শুরু করেছে ৷

এই দ্রাবিড়ভূমে বিজেপি যখন তামিল সংস্কৃতির প্রতি নিজেদের নতুন করে খুঁজে পাওয়া ভালোবাসা তুলে ধরতে মরিয়া, তখন তামিল-পন্থী রাজনৈতিক দল ও সমাজকর্মীরা এর সমালোচনা করছেন ৷ ডিএমকে-ই প্রথমবার পোঙ্গল উৎসবকে প্রকাশ্যে পালন করা শুরু করে ৷ 2007 সালে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী এবং ডিএমকের সভাপতি এম করুণানিধি একটা জনপ্রিয় কর্মসূচি এই নিয়ে নিয়েছিলেন ৷ যার নাম 'সামাতুভা পোঙ্গল' ৷

মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের ড. সি লক্ষ্মনন বলেন, “বিজেপি তাদের উত্তর ভারতীয় ভাবমূর্তিকে আড়াল করতে চাইছে ৷ আর ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে চাইছে ৷ তারা অতীতে এটা কখনওই করেনি এবং তাই তামিল মুখকে একটা মুখোশ হিসেবে পেশ করতে চাইছে ৷ এই রাজ্যে যে হিন্দুত্বের তাস খুব একটা কাজ করবে না সেটা বুঝতে পেরেই তারা এটা করছে ৷ তারা যদিও খুব চেষ্টা করছে, কিন্তু এই তামিল দূর্গে তারা সফল হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৷ দ্রাবিড়ীয় দলগুলি অনেক আগেই এটা দখল করে নিয়েছে ৷”