নয়াদিল্লি, 6 জানুয়ারি: পঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে তাঁর নিরাপত্তায় বড়সড় গলদ ছিল ৷ নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বিক্ষোভ হতে পারে, এই সংক্রান্ত আগাম গোয়েন্দা রিপোর্টে থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত এসপিজি'র নিয়মাবলী (SPG Blue Book Guidelines) সঠিকভাবে মানেনি পঞ্জাব পুলিশ ৷ এমনই মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ৷ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) ৷ এই নিরাপত্তা সংস্থার গাইডলাইন মেনেই প্রধানমন্ত্রীর সফরের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয় ৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, "এসপিজি গাইডলাইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালীন যদি কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় সে কথা মাথায় রেখে বিকল্প আপৎকালীন পথের ব্যবস্থা রাখা নিয়ম ৷ পঞ্জাবে বুধবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হলেও বিকল্প পথ ছিল না ৷"
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো পঞ্জাব পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিল, বিক্ষোভ সম্পর্কে তাদের সতর্কও করা হয়েছিল ৷ পঞ্জাব পুলিশের তরফেও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল আইবি'কে ৷ তারপরেও কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল যে প্রধানমন্ত্রীকে কর্মসূচি বাতিল করে ফিরে আসতে হল সেই প্রশ্ন তুলছে কেন্দ্র ৷
আরও পড়ুন : নিরাপত্তা ইস্যুতে কর্মসূচি বাতিল করে ভাটিন্ডায় ফিরল মোদির কনভয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকদের মতে, এসপিজি বাহিনী মূলত প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের সঙ্গেই থাকে, প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে থাকে তাঁদের নিরাপত্তা বলয় ৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাপথের বাকি নিরাপত্তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্যকেই নিতে হয় ৷ কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে রাজ্য পুলিশই এসপিজে'কে খবর দেয় সেই মতো ভিআইপি রুট বদল হয় ৷ 2021 সালে পঞ্জাব সীমান্তে আনুমানিক 150টি ড্রোনের আনাগোনা লক্ষ্য করা গিয়েছে, তার মধ্যে কিছু ড্রোন থেকে বিস্ফোরক, হ্যান্ড গ্রেনেডও, বন্দুক ও উদ্ধার হয় ৷ তার পরেও কেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে সজাগ হল না পঞ্জাব পুলিশ সেই প্রশ্ন উঠছে ৷
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্য়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে পঞ্জাব পুলিশের থেকে ৷ প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালীন নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, কত পুলিশ পিকেট, ব্যারিকেড রাখা হয়েছিল তা জানতে চেয়েছে কেন্দ্র ৷ প্রধানমন্ত্রীর যাত্রা পথে বহুতলগুলির ছাদে কত বাহিনী মোতায়েন ছিল, নিরাপত্তার আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ৷ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় কোনও খামতি ছিল কিনা তা নিয়ে আলাদা করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিকেও ৷ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট কড়া অবস্থান নিচ্ছে কেন্দ্র ৷ বিষয়টিকে নিরাপত্তার গাফিলতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে ৷ পঞ্জাব সরকারের থেকে আলাদা রিপোর্টও চেয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ৷ রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে এই গাফিলতিতে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে ৷
বুধবার পঞ্জাবের ফিরোজপুর সফরে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৷ সেখানে প্রায় 42 হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ৷ কিন্তু কর্মসূচি স্থলে যাওয়ার পথে প্রায় 30 কিমি আগে একটি উড়ালপুলে আটকে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় ৷ কৃষক বিক্ষোভের জেরে প্রায় 15-20 মিনিট থমকে যায় প্রধানমন্ত্রীর কনভয় ৷ এরপর কর্মসূচি ও জনসভা বালিত করেই ফিরতে হয় নরেন্দ্র মোদিকে ৷