পৃথিবীতে প্রাপ্ত সম্পদের মধ্যে যেগুলি সবচেয়ে শোচনীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তার মধ্যে জল অন্যতম । ভৌমজল, নদী, হ্রদ, পুকুর এবং খালগুলি মানুষের কার্যকলাপের জন্য খুব বেশি দূষিত হয় । বিশ্বজুড়ে জলসম্পদের 60 শতাংশই ইতিমধ্যে দূষিত তথা বিষাক্ত হয়ে পড়েছে । এই পরিস্থিতির যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে আমরা 2050 সালের মধ্যে বিশুদ্ধ জল পুরোপুরি হারিয়ে ফেলব ।
ক্ষতিকারক সব উপাদান যেমন রাসায়নিক যখন কোনও নদী, হ্রদ, ঝরণা, সমুদ্র অথবা অ্যাকুইফারে মিশে যায়, তখনই জলদূষণ হয় । কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হয়েছেন যে, ইলুরু-তে সাম্প্রতিক যে রহস্যজনক অসুস্থতার খবর সামনে এসেছিল, তার পিছনে ছিল এই জলদূষণই । জলের নমুনা গবেষণাগারে পরীক্ষা করার পর তাতে অরগানো-ক্লোরিন কীটনাশক,পারদ, নিকেল এবং সীসার উপস্থিতি মিলেছে এবং তাও আবার অনুমোদিত মাত্রার থেকে অনেকটাই উপরে ।
2013 সালে ওশেন ইনডেক্স হেলথ টিম পৃথিবীর সমুদ্রগুলির বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার উদ্দেশে 171টি দেশের জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছিল । সেই ইনডেক্সে শীর্ষস্থানে ছিল রাশিয়া আর ভারত ছিল 162-তম স্থানে । নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষি ,রাসায়নিক এবং শিল্পাঞ্চলের বর্জ্যই হল দেশে জলদূষণের প্রধান কারণ । কয়েক বছর আগেও কৃষিখালে মরা মাছ ভেসে বেড়ানোর ছবিও ছিল খুবই পরিচিত । জলাশয় লাগোয়া কৃষিজমিতে বহুল পরিমাণে কীটনাশক এবং সারের ব্যবহারের ফলেই জলজ জীব এবং ওই চত্বরের পাখিকূলের মৃত্যু হয়েছে । শামুক, জোঁক এবং এল্ক সাপেরা ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে । দেশের নদীগুলির বেশিরভাগই বিষাক্ত অবশিষ্টে ভরতি হয়ে যাচ্ছে । এই দূষিত জল যখন চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তখন দূষিত পদার্থগুলি খাদ্য শৃঙ্খলেরই অংশ হয়ে পড়ছে । চামড়া, সার, রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক কারখানা থেকে বিষাক্ত জল নদীগুলিতে ফেলা হচ্ছে । গ্রাম এমনকী ছোটো ছোটো শহরগুলিতেও এমনই দূষিত, নিকাশি জল, নিকাশি নালার মাধ্যমে সরাসরি নদীতে গিয়ে ফেলা হচ্ছে । নদী বাঁধগুলিতে প্লাস্টিক কভার আর পৌরসভার কঠিন বর্জ্য পড়ে পড়ে জমছে ।