নয়াদিল্লি, 8 নভেম্বর: সক্রিয় রাজনীতি থেকে বহু দিন ধরেই দূরে । তবে জন্মদিনে কার্যত চাঁদের হাট বসল দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবানির বাড়িতে ৷ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে সকাল সকাল তাঁর বাড়িতে ছুটলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু ৷ সকলের উপস্থিতিতে চলল কেক কাটা, খাওয়া-দাওয়া ৷
সোমবার 94তম জন্মদিন আডবানির ৷ সেই উপলক্ষে সকালেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানান মোদি ৷ টুইটারে লেখেন, ‘‘সম্মানীয় আডবানিজিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ৷ ওঁর দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন কামনা করি ৷ আমাদের ক্ষমতায়ন এবং সাংস্কৃতিক গৌরব বৃদ্ধির যে প্রয়াস উনি করেছেন, তার জন্য দেশ চিরকাল ওঁর কাছে ঋণী থাকবে ৷ পাণ্ডিত্য এবং বুদ্ধিমত্তার জন্যও সমাদৃত উনি ৷’’
আরও পড়ুন:Padma Awards : গুণীজনদের হাতে পদ্ম সম্মান তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি
আডবানিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাজনাথ সিংহ লেখেন, ‘‘আমাদের সকলের প্রেরণা এবং পথপ্রদর্শক, শ্রদ্ধেয় লালকৃষ্ণ আডবানিজিকে জন্মদিনেক হার্দিক শুভেচ্ছা ৷ ভারতের সব থেকে সম্মানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে গণ্য তিনি , যাঁর বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শিতা, বোধশক্তি এবং রাজনৈতিক জ্ঞান সকলের কাছে সমাদৃত ৷ ঈশ্বর ওঁকে সুস্থ রাখুন এবং দীর্ঘায়ু করুন ৷’’
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা টুইটারে লেখেন, ‘‘জনে জনে বিজেপিকে পৌঁছে দেওয়া এবং দেশের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা লালকৃষ্ণ আডবানিজিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই ৷ দলের কোটি কোটি কর্মীর কাছে আডবানিজি অনুপ্রেরণা ৷ ঈশ্বরের কাছে আপনার দীর্ঘায়ু এবং সুস্থ জীবন কামনা করি ৷’’
আরও পড়ুন:CRPF Jawans Killed : সুকমায় সিআরপিএফ ক্যাম্পে এলোপাথাড়ি গুলি, মৃত এক বাঙালি-সহ 4 জওয়ান
টুইটারে আডবানিকে শুভেচ্ছা জানানোর পরই একে একে তাঁর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন মোদি-রাজনাথরা ৷ সেখানে বাগানে আডবানির সঙ্গে পায়চারি করতেও দেখা যায় মেদিকে । এর আগে, গত বছরও জন্মদিনে আডবানিকে ‘জীবন্ত অনুপ্রেরণা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন মোদি ।
1927 সালের 8 নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের করাচিতে জন্ম আডবানির । দেশভাগের পর ভারতে চলে আসে তাঁর পরিবার । 80-র দশকে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের মাধ্যমে বিজেপিকে জাতীয় দলে রূপান্তরিত করায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল তাঁর । অটলবিহারি বাজপেয়ীর সঙ্গে মিলে দেশে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খোলনলচে তৈরি এবং তাকে আকার দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর ।
আরও পড়ুন:Valley of Words :'জয় অফ ওয়ার্ডস'-এর সাহিত্যধর্মী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি, আলোচনায় জনপ্রিয় গল্প ও কবিতা
বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আডবানি দলের সব থেকে দীর্ঘমেয়াদী সভাপতিও । তবে বিজেপিতে মোদি এবং শাহের ক্ষমতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত কয়েক বছরে দলে আডবানির ভূমিকা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে । মোদি-শাহের সঙ্গে আডবানির আদর্শগত ফারাকও রয়েছে বলে মনে করে বিজেপির-ই একাংশ । কারণ বিজেপির সভাপতি থাকাকালীনই, 2005 সালে পাকিস্তান সফরে গিয়ে মহম্মদ আলি জিন্নাকে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির পথপ্রদর্শক বলেও উল্লেখ করেন ।
জিন্নাকে ইতিহাসের নির্মাতা বলেও উল্লেখ করেছিলেন আডবানি । তাতে সঙ্ঘ এবং দলের অন্দরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগও করতে হয় আডবানিকে, যদিও পরে তা প্রত্যাহার করেন তিনি । 2014-র লোকসভা নির্বাচনের সময়ও বিজেপির অন্দরে আডবানিপন্থী এবং মোদী-শাহপন্থীদের মধ্যে স্পষ্ট ফারাক চোখে পড়েছিল । তারপর থেকে ক্রমশ দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি । সেই নিয়ে 2019 সালে মোদী-শাহ সরকারের সমালোচনাও করেন তিনি । নিজদের ব্লগে লেখেন, বিরুদ্ধমত পোষণ করলেই কাউকে দেশদ্রোহী, শত্রু ঘোষণার চল আগে ছিল না । তারপর থেকে ইদানীংকালে বিজেপিতে কোনও ভূমিকাই নেই আডবানির ।