নয়াদিল্লি, 19 জুলাই : পেগাসাস ইস্যুতে এখন উত্তাল গোটা দেশ ৷ রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিচারক, অভিজাত সমাজের একাধিক বিশিষ্টজন, সাংবাদিক... তালিকা অনেক বড় ৷ সত্যিই কি এতগুলি ফোনের উপর আড়ি পাতা হচ্ছিল ? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে সবার মুখে মুখে ৷ এরই মধ্যে বিরোধীদের একের পর এক আক্রমণের মুখে কেন্দ্র ৷
রাহুল গান্ধির দুটি মোবাইল নম্বরও রয়েছে ওই তালিকায় ৷ আজ রাহুল গান্ধি টুইটারে কেন্দ্রকে আক্রমণ শানিয়ে টুইটও করেন ৷ লেখেন, ‘‘আমরা জানি এখন উনি (নরেন্দ্র মোদি) কী পড়ার চেষ্টা করছেন ৷ আপনার ফোনের সব কিছুই দেখছেন ৷" যদিও কেন্দ্র এই ধরনের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে ৷ কেন্দ্রের বক্তব্য, এই ধরনের অভিযোগের কোনও ভিত্তি বা সত্যতা নেই ৷
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এই আড়ি পাতার অভিযোগকে যথেষ্ট গুরুতর এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি একটি উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন তিনি ৷ ঘটনার বিচারবিভাগীয় অথবা সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি তুলেছেন তিনি ৷ শশী থারুরের বক্তব্য, "যদি সরকার এই আড়ি পাতার সঙ্গে জড়িত নাই থাকে, তাহলেও একটি তদন্ত হওয়া উচিত ৷"
পেগাসাস বিতর্ক নিয়ে একটি টুইটও করেছেন তিনি ৷ এক বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা লিখেছেন, "অনুমতি নেই, এমন কোনও ধরনের নজরদারির কথা অস্বীকার করছে কেন্দ্র । যদি পেগাসাস কেবলমাত্র বিভিন্ন দেশের সরকারকে বিক্রি করা হয় তাহলে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি চিন বা পাকিস্তানের মতো অন্য দেশের সরকার যারা পেগাসাস ব্যবহার করে, তারা কি ভারতের বিশিষ্ট নাগরিকদের উপর নজর রাখার জন্য এটি ব্যবহার করছে ? বিষয়টি স্বাধীনভাবে তদন্ত হওয়া উচিত ৷"
2019 সালের অক্টোবর মাসেও পেগাসাস নিয়ে জোর চর্চা হয়েছিল ৷ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ পেগাসাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল ৷ সিপিএমের তরফে সেই অভিযোগ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছিল ৷ আজ যখন পেগাসাস নিয়ে ফের একবার সরগরম গোটা দেশ, তখন সিপিএম নেতৃত্ব সেই কথাই আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ৷ তাদের বক্তব্য, দু'বছর আগেই সংসদে বলা হয়েছিল এই মারাত্মক স্পাইওয়ারের কথা ৷ সিপিএমের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদি সরকারের প্রতিক্রিয়ায় এনএসও (ইজ়রায়েলি প্রযুক্তি সংস্থা, যারা এই স্পাইওয়ারটি তৈরি করেছে) তাদের থেকে পরিষেবা নেওয়ার কথা কখনও স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেনি ৷ বরং বলা হয়েছে, কোনওরকমের অনুমোদনহীন নজরদারি করা হয় না । এই রিপোর্ট ফাঁস হওয়ার ফলে এটি স্পষ্ট যে, এই সরকার তার নিজের নাগরিকদের উপরেই এই জাতীয় নজরদারি করার জন্য এনএসওকে নিযুক্ত করেছে ৷
সিপিএমের বক্তব্য, এনএসও-র সঙ্গে কীধরনের কাজ করছে কেন্দ্র, তা স্পষ্ট করা দরকার ৷ কী কী নিয়ম রয়েছে এবং জনসাধারণের টাকার কতটা এই খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও জানানো দরকার ৷
বিগত প্রায় চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পেগাসাস ইস্যুতে সরগরম জাতীয় রাজনীতির অলিন্দ ৷ অভিযোগ, ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে একাধিক রাজনৈতিক নেতার ৷ তালিকায় নাম রয়েছে রাহুল গান্ধি থেকে শুরু করে একাধিক রাজনৈতিক নেতার ৷ সবার ফোন নাকি ট্যাপ করা হয়েছে ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও পেগাসাসের নিশানায় ৷ অভিষেক বর্তমানে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৷ মমতা জাতীয় স্তরে দলের যে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন, তা মূলত অভিষেককে সামনে রেখেই করা হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ৷ এই পরিস্থিতিতে আজ পেগাসাসের সম্ভব্য নিশানার নতুন যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিঃসন্দেহে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ৷
আর এই নিয়ে বেজায় চটেছে তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ সংসদে এই নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে ৷ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েনের মতে, ‘‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় ৷ মন্ত্রী যখন সংসদে তাঁর বিবৃতি দিচ্ছিলেন, তখনও সরকার যে পেগাসাস ব্যবহার করছে না, এমন কিছু বলেননি ৷ আমরা এই নিয়ে সংসদে আলোচনার জন্য বলব ৷"
তাঁর কথায়, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার সংসদীয় সৌজন্যের সব সীমা পার করে গিয়েছে ৷ বলেন, " এখন তাঁরা দেশের নাগরিকদের শোয়ার ঘরে উঁকি মারার চেষ্টা করছেন ৷ মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে ৷ বিরোধীদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা চলেছে ৷ দেশের জানা উচিত, এই ধরনের অনুমোদনহীন নজরদারি কারা করছে ৷"