নালন্দা, 27 সেপ্টেম্বর: বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করে গত পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালেই থাকেন এক বৃদ্ধ ৷ নিখরচায় তাঁর থাকা-খাওয়া-চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৷ সেই বৃদ্ধই হাসপাতালের মৃতদেহের থেকে গয়না চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লেন ৷ বুধবার সামনে এসেছে বিহারের নালন্দা সদর হাসপাতালের এই লজ্জাজনক ঘটনা ।
গত 25 সেপ্টেম্বর নালন্দায় একটি ভয়ংকর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় চারজনের ৷ তিনজনের অবস্থা গুরুতর ছিল । আহতরা বিহার শরিফ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও পরে তাঁদেরও মৃত্যু হয় ৷ সেই মৃতদেহের থেকেই গয়না চুরির চেষ্টা করছিলেন অভিযুক্ত ৷
গত 5 বছর ধরে হাসপাতালই ঠিকানা: গত পাঁচ বছর ধরে নালন্দা সদর হাসপাতালেই জীবন কাটছে ওই বৃ্দ্ধের । বিনামূল্যে পাচ্ছেন খাবার ও চিকিৎসা ৷ কিন্তু সেই ব্যক্তিই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন যা দেখে হতবাক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । মৃতদেহের থেকে গয়না চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন তিনি ৷
মৃতদেহের গয়না চুরি: কয়েক বছর ধরে হাসপাতালে এই রোগীর জন্য একটি বেড সংরক্ষিত রয়েছে । সদর হাসপাতালের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট বলেন, ওই ব্যক্তি বলেছিলেন যে, তাঁর থাকার ও খাওয়ারের কোনও ব্যবস্থা নেই । গুরুতর অসুস্থ থাকায় তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূ তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ । এ সব শুনে তাঁকে হাসপাতালে বিনা পয়সায় থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয় কর্তৃপক্ষ । কিন্তু সোমবার দেখা যায় যে, ওই বৃদ্ধ পেশাদার চোরের মতো ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে গিয়ে ওয়ার্ডে পড়ে থাকা মৃত যুবকের গলা থেকে সোনার হার চুরি করছেন ৷
নালন্দা হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. অশোক কুমার বলেন, "এই ব্যক্তি তিন-চার বছর ধরে হাসপাতালে ছিলেন । চলে যেতে বললেও তিনি যেতেন না । দু-তিন ঘণ্টার জন্য হাসপাতালের বাইরে গেলেও তিনি ফিরে এসে বলতেন তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে । এ সব বলে হাসপাতালে থাকতেন তিনি । বলতেন, খাবার ও বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই । মৃতদেহ থেকে গয়না চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে । তাঁকে এমন কাজ করতে এই প্রথম দেখা গেল ।"
হাতেনাতে ধরা পড়ল চুরি: ওই ব্যক্তি যখন চুরি করছিলেন তখন সেখানে উপস্থিত লোকজন তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন । পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হয় । চুরির অভিযোগে ধরা পড়া ওই বৃদ্ধের নাম প্রেমচাঁদ প্রসাদ ৷ তিনি হেডকোয়ার্টার বিহার শরিফের 33 নং ওয়ার্ড খন্দক মহল্লার বাসিন্দা ৷ এত বছর হাসপাতালে থাকার কারণ জানতে চাইলে প্রেমচাঁদ দাবি করেন, তাঁর বাড়িতে থাকার জায়গা নেই এবং গুরুতর অসুস্থতার কারণে তিনি সদর হাসপাতালে থাকতেন । ছেলে পুত্রবধূ তাঁকে বাড়িতে থাকতে দেননি । অথচ প্রতি সপ্তাহে প্রেমচাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূ ৷
আরও পড়ুন:উজ্জয়িনীতে আড়াই ঘণ্টা রাস্তায় ঘুরেও সাহায্য পেল না ধর্ষিতা নাবালিকা ! তদন্তে পুলিশ
পাঁচ বছর ধরে জরুরি ওয়ার্ডে:এই রোগীর কাছ থেকে চুরি হওয়া লকেট ও হার বাজেয়াপ্ত করেছেন চিকিৎসকরা । এছাড়াও তাঁকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, গত পাঁচ বছর কীভাবে একজন ব্যক্তিকে হাসপাতালে থাকতে দেওয়া হল ? শুধু তাই নয়, তাঁর থাকা-খাওয়ারই বা ব্যবস্থা করা হল কীভাবে ৷ জরুরি ওয়ার্ডে বেডের সংকটের খবর প্রায়ই সামনে আসে । সেখানে গত পাঁচ বছর ধরে একজন রোগীর জন্য আসন সংরক্ষিত থাকায় প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে ৷ প্রেমচাঁদ এর আগেও এমন কাজ করেছেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ।
সতর্ক করে মুক্তি: জানা গিয়েছে, প্রেমচাঁদকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৷ কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, প্রেমচাঁদকে আর সদর হাসপাতালে যাতে ঢুকতে দেওয়া না হয়। তাঁকে হাসপাতাল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । তবে এই ঘটনায় এখনও মামলা দায়ের হয়নি । রোগীকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ।