নয়াদিল্লি, 3 সেপ্টেম্বর: 'এক দেশ এক নির্বাচন' বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শনিবারই 8 সদস্যের কমিটি গঠনের গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রক ৷ কমিটির প্রধান করা হয়েছে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে ৷ যদিও ইতিমধ্যেই লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে এই কমিটির সদস্য করা হলেও তিনি এই কমিটিতে যোগ দেবেন না ৷
এই কমিটি গঠনের পর থেকেই একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ তবে কী শীঘ্রই দেশে একসঙ্গে হতে চলছে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন? গ্রাম পঞ্চায়েত ও পৌর নির্বাচনগুলিও কী হবে একই সঙ্গে ? কবে হতে পারে এই নির্বাচন? এরফলে 2024 এর লোকসভা নির্বাচন কি এগিয়ে আসতে পারে, ইত্যাদি একাধিক প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করছে রাজনৈতিক মহলে ৷ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে আম জনতার মধ্যেই ৷
এদিন কেন্দ্রের তরফে 'এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে নির্দিষ্টভাবে বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে ৷ আট সদস্যের এই কমিটি কী কী বিষয় খতিয়ে দেখবে তার উল্লেখ রয়েছে এই বিজ্ঞপ্তিতে ৷ ফলে কমিটির কাজ মূলত কী হতে চলেছে তা এই বিজ্ঞপ্তি পড়লেই পরিষ্কার হয়ে যায় ৷ সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সরকারের তরফে কমিটিকে বলা হয়েছে যতদ্রুত সম্ভব এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে ৷ কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোনও দিন বা মাস বেঁধে দিয়ে সময়সীমার উল্লেখ এই বিজ্ঞপ্তিতে নেই ৷
কী কী বিষয় খতিয়ে দেখবে এই কমিটি ?
'এক দেশ এক নির্বাচন' যদি করতে হয় সেক্ষেত্রে সংবিধানে কী কী সংশোধন প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখে সুপারিশ করবে এই কমিটি ৷ এছাড়াও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও নিয়মে কী কী সংশোধন প্রয়োজন তাও খতিয়ে দেখে সরকারকে জানাবে এই কমিটি ৷ একই সময়ে লোকসভা, বিধানসভা, কর্পোরেশন ও পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে হলে বর্তমান পরিকাঠামো ও ব্যবস্থায় কী কী পরিবর্তন আনতে হবে সেই বিষয়টিও এই কমিটি খতিয়ে দেখে তাদের মত জানাবে ৷ যদি একই সঙ্গে এই নির্বাচনগুলি করা না যায়, সেক্ষেত্রে পাশাপাশি কোন সময়ে এই নির্বাচনগুলি করা যেতে পারে, ক'দফায় হবে সেই নির্বাচন তাও জানাবে কমিটি ৷
রাজ্যগুলিকেও এই সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল আলাদা ভাবে পাশ করাতে হবে কি না এই বিষয়টিও দেখবে কমিটি ৷ সংবিধান সংশোধনী বিলের ক্ষেত্রে দেশের অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভার যে সমর্থন প্রয়োজন, সেই বিষয়ে কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন কি না তা দেখবে এই কমিটি ৷ যদি কোনও ক্ষেত্রে নির্বাচনী ফলাফল ত্রিশঙ্কু হয় সে ক্ষেত্রে এবং অনাস্থা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এই 'এক দেশ এক নির্বাচন' এ কী প্রভাব পড়বে তাও খতিয়ে দেখবে এই কমিটি ৷
একই সময়ে সব নির্বাচন করাতে হলে যে অতিরিক্ত লজিস্টিক সাপোর্ট, ইভিএম, ভোট কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীর প্রয়োজন পড়বে সেই বিষয়টি মাথায় রেখেও পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে এই বাই লেভেল কমিটিকে ৷ লোকসভা, বিধানসভা, পৌর নির্বাচন ও পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রে একই ইলেক্টোরাল রোল ব্যবহার করা যাবে রি না, তাও খতিয়ে দেখে সরকারকে পরামর্শ দেবে এই কমিটি ৷
আরও পড়ুন: 8 সদস্যের কমিটি গঠন, 'এক দেশ এক ভোট' নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চায় কেন্দ্র !
এক্ষেত্রে মাথায় রাখা প্রয়োজন লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনগুলি জাতীয় নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করলেও পৌর নির্বাচন ও পঞ্চায়েত ভোটের মতো স্থানীয় নির্বাচনগুলি রাজ্য নির্বাচন কমিশনেক তত্ত্বাবধানেই হয় ৷ এই সাংবিধানিক সংস্থারই কাজের এক্তিয়ার ও দায়িত্বের কথা আলাদাভাবে সংবিধানে বলা হয়েছে, ভোট একসঙ্গে হলে এই দুই নির্বাচন কমিশনের কর্মপন্থা কী হবে সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করবে রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি ৷ বর্তমানে দেশের যেকোনও নির্বাচন হয় 5 বছর মেয়াদের লক্ষ্যে ৷ সেক্ষেত্রে যদি সব ভোট একসঙ্গে করাতে হয় তাহলে কোনও বিধানসভার মেয়াদ কমাতে হবে অথবা ভোট স্থগিত রাখতে হবে ৷ স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি প্রযোজ্য ৷ কমিটিকে এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে ৷
এই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, 1951-52 সাল থেকে 1967 সাল পর্যন্ত লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনগুলি মোটামুটি একই সময়ে হত ৷ কিন্তু পরে নানা কারণে এই পরিস্থিতি পালটে যায় এবম বর্তমানে প্রায় প্রতিবছরই কোনও না কোনও রাজ্যে এক বা একাধিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৷ ফলে বিপুল সরাকারি অর্থ খরচ হয় ৷ উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগে একাধিকবার 'এক দেশ এক নির্বাচন'য়ের পক্ষে সওয়াল করেছেন ৷ সরকারি খরচের অপচয় বন্ধের যুক্তিও তিনি দিয়েছেন ৷ মনে করা হচ্ছে মূলত এই বিপুল আর্থিক বোঝা কমানোর বিষয়টিকে সামনে রেখেই 'এক দেশ এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর করতে চাইছে কেন্দ্র ৷ যদিও এর পিছনে বিরোধীরা অন্য গন্ধ পাচ্ছে ৷ বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার একসঙ্গে সব ভোট করিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ভেঙে ফেলতে চাইছে বলে বিরোধীদের আশঙ্কা ৷
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের 'এক দেশ এক ভোট' কমিটি থেকে সরে দাঁড়ালেন অধীর চৌধুরী
আগামী 18 থেকে 22 সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে ৷ মনে করা হচ্ছে এই অধিবেশনে 'এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে তাদের অবস্থান সংসদে জানাতে পারে কেন্দ্র ৷ হতে পারে তার আগেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দিয়ে দিল ৷ যদিও রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা কেন্দ্রের তরফে বেঁধে দেওয়া হয়নি ৷ যদি রিপোর্ট এর মধ্যে জমা দেওয়াও হয়, সেক্ষেত্রে এত সমস্ত দিক বিবেচনা করে, পরামর্শ-সহ তা কী করে দেওয়া সম্ভব সেই প্রশ্নও তুলছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ৷