নয়াদিল্লি, 20 জুলাই :সময় যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ পেগাসাসের (Pegasus spyware) দৌড় যে কতদূর, তা জেনে কার্যত চোখ কপালে উঠছে বিশেষজ্ঞদের ৷ সদ্য হাতে আসা তথ্য বলছে, যে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে একবার ঘাঁটি গাড়ে এই গুপ্তচর সফটওয়্য়ার, সেখানে থেকে আর সহজে নড়ে না সে ৷ এমনকী, সেই ডিভাইস রিস্টার্ট বা রিবুট করলেও লাভ হয় না কোনও ৷ এমনই কিছু সূত্র মিলেছে ইটিভি ভারতের হাতে আসা একটি নথিতে ৷
ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও গোষ্ঠীর (NSO Group) দাবি, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতেই পেগাসাস স্পাই সফটওয়্য়ারটি তৈরি করেছে তারা ৷ তাই, কেবলমাত্র বিভিন্ন দেশের সরকার ও সরকারি নজরদারি বা গোয়েন্দা সংস্থাকেই এই সফটওয়্য়ার বিক্রি করা হয় ৷ 2015 সালে আফ্রিকার একটি দেশকে পেগাসাস স্পাইওয়্য়ারটি বিক্রি করেছিল এনএসও গোষ্ঠী ৷ সেই চুক্তি হাতে এসেছে ইটিভি ভারতের ৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, পেগাসাসের নজরদারি ক্ষমতা এবং দৃঢ়তা অত্যন্ত উচ্চমানের ৷
আরও পড়ুন :Spyware Pegasus : গোপনে তথ্য চুরি করেই নিজেকে ধ্বংস করে দেয় পেগাসাস
2015 সালের ওই চুক্তিতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, যে ডিভাইসে এই সফটওয়্য়ার একবার ঢুকে যাবে, সেখানে থেকে একে আর উৎখাত করা যাবে না ৷ এক্ষেত্রে, সেই ডিভাসটিকে যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, রিস্টার্ট করা হয়, তার ব্য়াটারি যদি শেষ হয়ে যায়, অর্থাৎ কোনওভাবে যদি সেটিকে রিবুট করা হয়, তাহলেও কোনও সমস্যা নেই ৷ ঠিক একইভাবে সেই ডিভাইসটিকে ফ্যাক্টরি রিসেট করলে, বা ওই ডিভাইস থেকে কোনও আপগ্রেড প্রসেস ব্লক করে দেওয়া হলেও পেগাসাসকে আর হঠানো যায় না ৷
হিসাব মতো, কোনও ডিভাইস ফ্য়াক্টরি রিসেট করলে অথবা রিবুট করলে সেটি একেবারে নতুন কেনা ডিভাইসের মতোই হয়ে যায় ৷ সেক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার কেনার পর তাতে যেসমস্ত ফিচার যোগ করা হয়, সেগুলি নিজে থেকেই মুছে যায় ৷ কিন্তু পেগাসাসের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অকেজো ৷
সাধারণত, আমরা বিভিন্ন ধরনের যে সমস্ত মেসেজিং অ্য়াপ ব্যবহার করে একে অন্যকে বার্তা পাঠাই, সেগুলির নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে ৷ যাঁদের মধ্যে বার্তার আদান-প্রদান হচ্ছে, গোটা বিষয়টি তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে ৷ বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সেইসব মেসেজের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয় ৷ এমনকী, সংশ্লিষ্ট মেসেজিং সংস্থাও তার মধ্যে ঢোকে না ৷ পেগাসাস কিন্তু এই নিরাপত্তা ভেঙে দেয় ৷ যে সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ এই স্পাইওয়্য়ার কিনে সেটি ব্যবহার করে, তারা অনায়াসেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল বা স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার হ্যাক করে এই ধরনের মেসেজ খুলতে, দেখতে এবং পড়তে পারে ৷ এই তথ্যও 2015 সালের ওই চুক্তিপত্রে মিলেছে ৷
আরও পড়ুন :Pegasus Spyware Issue: শোয়ার ঘরে উঁকি মারার অধিকার কে দিয়েছে, পেগসাস ইস্যুতে চড়ছে পারদ
তাদের ক্রেতা বা গ্রাহকরা যাতে সহজেই নিজেদের কার্যোদ্ধারের জন্য পেগাসাস ব্যবহার করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে গ্রাহকের জন্য দু’সপ্তাহের একটি প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করে এনএসও গোষ্ঠী ৷ আরও একটা সপ্তাহ খরচ করা হয় গোটা প্রক্রিয়াটি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া জন্য ৷
যে কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনে পেগাসাস হামলা চালায়, প্রকৃত অর্থেই সেটির আগল পুরোপুরি খুলে যায় এই স্পাইওয়্য়ারের সামনে ৷ সংশ্লিষ্ট ডিভাইস থেকে যতগুলি পাসওয়ার্ড, কিস্ট্রোক ব্যবহার করা হয়, সেগুলির সমস্তটাই আত্মস্থ করে নেয় পেগাসাস ৷ এইসব তথ্য খুঁজে বের করার পাশপাশিই চলতে থাকে সেগুলিকে মজুত করার প্রক্রিয়াও ৷ যাতে সময় মতো তা ব্যবহার করা যায় ৷ ফলে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসে থাকা যাবতীয় নাম, নম্বর, ব্য়ক্তিগত ও গোপন তথ্য, মেসেজিং রেকর্ড, ভিডিয়ো কল-সহ সবকিছুরই নাগাল চলে যায় পেগাসাসের হাতে ৷
আরও পড়ুন :Pegasus 2 : আড়ি পাতা হয়েছে পিকের ফোনে, নিশানায় ছিলেন অভিষেকও !
আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হল, পেগাসাসে ‘আক্রান্ত’ কোনও ডিভাইসের মাইক্রোফোন অন করলে বা চালালে ‘রুম ট্য়াপ’ (Room Tap) শুরু হয়ে যায় ৷ কী এই প্রক্রিয়া ? আসলে মাইক্রোফোন সচল থাকাকালীন আশপাশে যত শব্দ হয়, তার সবটুকু পেগাসাস রেকর্ড করতে থাকে ৷ যাতে পরে সেগুলিকে বিশ্লেষণ করা যায় ! ফলে যে জায়গায় পেগাসাসে ‘আক্রান্ত’ ডিভাইসটি রয়েছে, তার আশপাশের সূক্ষাতিসূক্ষ তথ্যও পেগাসাসের হাতে চলে আসে ৷ আর সেই ডিভাইস ব্যবহারকারী এসব জানতেও পারেন না ৷ যে স্মার্টফোনের মাইক্রোফোন যত বেশি উন্নতমানের, সেই ডিভাইস থেকে শব্দের রেকর্ডিংও তত বেশি ভাল হয় ৷