COVID-19 এর জন্য লাগু করা লকডাউনের প্রভাব মহিলাদের উপর অনুপাতবিহীনভাবে পড়েছে । মহিলাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে । কারণ, চলতি বছরের 30 মার্চ পর্যন্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকায় ছিল না । আর 30 মার্চ ছিল ভারতে দেশব্যাপী লকডাউন জারি হওয়ার পর সপ্তম দিন । আরও একটা সমস্যা রয়েছে, যা প্যানডেমিকের অনেক আগে থেকেই হচ্ছে । তবে তা সম্প্রতি আবার সামনে চলে এসেছে । আর তা হল স্যানিটারি ন্যাপকিন সুরক্ষিতভাবে নষ্ট করার বিষয় । ঋতুস্রাবের বিষয়টি নিয়ে কীভাবে আলোচনা করা উচিত, তা নিয়ে মুক্ত মনোভাব তৈরি করতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ভারতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । আর পরিষ্কার সামগ্রী যাতে আরও বেশি করে পাওয়া যায় তার জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । তবে ঋতুস্রাবের সময়ে যে জিনিস ব্যবহার করা উচিত, তা নিয়ে সচেতনতা খুব বেশি ছড়ানো হয়নি । যা এখনও একটা সামাজিক ব্যাধি হিসেবে রয়ে গিয়েছে । থানের বস্তিতে মিউজ ফাউন্ডেশনের তরফে একটি সমীক্ষা করা হয় । তাতে দেখা গিয়েছে যে সেখানকার 71 শতাংশ মহিলা নষ্ট হয়ে যায় এমন স্যানিটারি ন্যাপকিন (DSN) ব্যবহার করেন । কোনও ডাস্টবিন উপলব্ধ না থাকায় 45 শতাংশ মহিলা তাঁদের স্যানিটারি বর্জ্য সুলভ শৌচালয়ে ফেলে দেন । ঋতুস্রাবের সময় ব্যবহৃত সুরক্ষিত সরঞ্জাম সংগ্রহ করার যে সমস্যা প্যানডেমিকের সময় হয়েছিল, তার সঙ্গে যদি ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন ও কাপড়ের প্যাডগুলি নষ্ট করার বিষয়টি যোগ করা যায়, তাহলে তার ফল কিন্তু যথেষ্ট চিন্তাজনক । এই পরিস্থিতি মহিলাদের জন্য খুবই তীব্র, শুধু তা তুলে ধরছে না । তার সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খারাপ হাল রোগ বৃদ্ধি করতে আর তা ছড়াতে সাহায্য করছে ।
মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ঋতুস্রাবের সময়ের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার বিষয়টি দেখার জন্য সারা বিশেষ ক্রমশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিন্তু অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টিতে নজর একেবারে দেওয়া হয় না, তা হল ঋতুস্রাবের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম নষ্ট করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি । প্রতি বছর ভারতে কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় 63 মিলিয়ন টন । অন্যদিকে 353 মিলিয়ন মহিলাদের ঋতুস্রাবের সময় ব্যবহৃত সরঞ্জাম থেকে বর্জ্যের পরিমাণ বছরে হয় 44 হাজার 125 মিলিয়ন কিলো টন । 2016 সালের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (SWM) আইন অনুযায়ী ঋতুস্রাবের সময় ব্যবহৃত সমস্ত রকমের বর্জ্য বড় আকারের বায়ো মেডিকেল বর্জ্য দাহন যন্ত্রে দিয়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে । তবে এই আইন বলবৎ করতে হলে এই বর্জ্য আলাদা করা, তা সংগ্রহ করা ও তা পরিবহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে । এটা প্রতিটি বাড়ি থেকে শুরু করতে হবে । আলাদা কাগজের ব্যাগে তা বর্জ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হবে । তাহলে তাঁরা বর্জ্য ফেলার সময় তা আলাদা ভাবে ফেলতে পারবেন । এর ফলে বর্জ্য জমা করার জায়গায় যখন তা পুড়িয়ে দেওয়া হয় সেটা আর হবে না । অথবা এর থেকে ভয়ঙ্কর কার্সিনোজেন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে ।
ফিনান্সিয়াল ইনক্লুসান ইমপ্রুভস স্যানিটেসন অ্যান্ড হেলথ (FINISH) সোসাইটি একটি সমীক্ষা করেছিল । সেই সমীক্ষা করা হয় ভারতের এক, দুই ও তিন নম্বর পর্যায়ের 243 জন ঋতুমতী মহিলার উপর । তাতে দেখা গিয়েছে যে মোট জনসংখ্যার 68 শতাংশ অপচনশীল প্যাড ব্যবহার করেন । অন্যদিকে 24 শতাংশ মহিলা পচনশীল স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন । সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে স্যানিটারি প্যাডে যেহেতু অপচনশীল প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, তাই তা নষ্ট হতে 500 থেকে 800 বছর সময় লাগে । আর এর ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ও পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হয় । অধিকাংশ মহিলা তাঁদের ঋতুকালীন সময়ে ব্যবহৃত সরঞ্জামের বর্জ্য বাড়ির কঠিন বর্জ্যের পাত্রে বা আবর্জনায় ফেলে দেন । যা শেষ পর্যন্ত কঠিন বর্জ্যে পরিণত হয় । UNICEF এর সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে ঋতুকালীন সুরক্ষার সরঞ্জাম নষ্ট করার বিষয়টি বরাবর নজরের আড়ালেই থেকে যায় । এর ফলে মেয়েরা ও তাদের পরিষেবার উভয়ের অপকার হয় । নষ্ট করার মতো অন্যান্য বিকল্প না পেয়ে ঋতুমতী মহিলারা অনেক সময় তাঁদের ঋতুকালীন বর্জ্য শৌচালয়েও ফেলে দেন । এতে তা সেপটিক ট্যাঙ্কের পাইপে আটকে গিয়ে অন্য পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে ।