শিলং, 25 নভেম্বর: এক রাতেই সব হিসেব নিকেশ উল্টে দিয়েছেন তিনি । কিন্তু এ ছাড়া কোনও উপায় ছিল না জানালেন মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা নব্য তৃণমূলী মুকুল সাংমা (Mukul Sangma in TMC) । তাঁর যুক্তি, শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ কংগ্রেস (Congress Failed as opposition) । দেশ বিকল্প চাইছে । তাই ভেবেচিন্তেই তৃণমূলের হাত ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।
তৃণমূলের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে মাসখানেক আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুকুল । তা সত্ত্বেও কংগ্রেস নেতৃত্ব সেই নিয়ে তেমন গরজ দেখাননি । কিন্তু বুধবার রাতে কার্যত বোমাই ফাটে মেঘালয়ের রাজনীতিতে। বিধানসভার স্পিকারকে চিঠি লিখে 17 জন কংগ্রেস বিধায়কের মধ্যে 11 জনকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা জানান তিনি । তাতে ভোটযুদ্ধে না গিয়েই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসে তৃণমূল (TMC becomes Main Opposition in Meghalaya) ।
রাতারাতি এমন পট পরিবর্তনে চমকে গিয়েছে রাজনৈতিক মহল । এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মুকুল এবং তাঁর সহযোগীরা । সেখানে মুকুল বলেন, ‘‘অত্যন্ত সচেতন ভাবেই তৃণমূলের হাত ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা । দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি । মানুষের সেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা । তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে ।’’
আরও পড়ুন:Mukul Sangma Joins TMC : উত্তর-পূর্ব ভারতে ঘাসফুল, তৃণমূলে মেঘালয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মুকুল সাংমা
মুকুল আরও বলেন,‘‘2018 সালে ভোটে জিতে ক্ষমতাদখলের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম আমরা ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷ একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এলেও, ভোটপরবর্তী সময়ে ঘোড়া বেচাকেনার শিকার হই ৷ তার জেরে কংগ্রেস বিধায়কের সংখ্যা 17-য় এসে ঠেকে ৷’’
কিন্তু ক্ষমতায় না এলেও, বিরোধী দল হিসেবেও কংগ্রেস মানুষের আশা-ভরসা তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছিল বলে দাবি করেন মুকুল ৷ তাঁর কথায়, ‘‘মেঘালয়ে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি আমরা ৷ সেই আস্থা এবং সম্মানের মর্যাদা রাখতেই হবে ৷ কিন্তু কংগ্রেসি হিসেবে বিরোধী দলের সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ আমরা ৷ দেশের নাড়ি টিপলেই বোঝা যাচ্ছে, বিরোধী দল হিসেবে শক্তিশালী বিকল্প খুঁজছেন মানুষ ৷’’
মেঘালয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের তরফে আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া মিলতে শুরু করেছে ৷ কিন্তু মুকুলের সাফ বক্তব্য, ‘‘দেশের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেস যে দায়িত্বপালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তা পরিষ্কার । তাই মেঘালয় তো বটেই, উত্তর-পূর্ব অংশ এবং গোটা দেশে একটি কার্যকরী বিরোধীপক্ষ তুলে ধরতেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে ।’’
আরও পড়ুন:Mamata will meet Uddhav-Pawar : মুম্বই যাচ্ছেন মমতা, দেখা করবেন উদ্ধব-পাওয়ারের সঙ্গে
মুকুলের সিদ্ধান্তে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এখনও তীব্র প্রতিক্রিয়া না মিললেও, গোটা ঘটনায় তৃণমূল এবং সর্বোপরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কাঠগড়ায় তুলেছেন বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury Attacks TMC over Meghalaya) । তাঁর কথায়, মুখে বিজেপি-র বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও, আসলে কংগ্রেসকে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । দলের প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে না গিয়ে, মেঘালয়ে বিরোধী দল হিসেবে তৃণমূলের উঠে আসাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনতে চান না তিনি ।