ছাতারপুর (মধ্যপ্রদেশ), 24 মে: অনন্য নজির গড়লেন বুন্দেলখণ্ডের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ৷ তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর স্মৃতিতে মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুরে একটি বিশাল 'রাধা-কৃষ্ণ' মন্দির নির্মাণ করলেন তিনি ৷ নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে এই মন্দির তৈরি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি ৷ আর সেই মন্দিরের মার্বেল পাথরে নিখুঁত কাজ ফুটিয়ে তুলেছেন রাজস্থানের বেশকয়েকজন মুসলিম শিল্পী ৷ এককথায় ভালোবাসা ও সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে এই মন্দির ৷
মধ্যপ্রদেশের বিপি চান্সোরিয়া ৷ যেদিন তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়, সে দিনই তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেন ওই ব্যক্তি ৷ তিনি ঠিক করেন, ছাতারপুরে একটি মন্দির নির্মাণ করবেন ৷ চান্সোরিয়া এই নিয়ে এএনআইকে বলেন, তাঁর স্ত্রী সবসময় চাইতেন যে ছাতারপুরে একটি রাধা-কৃষ্ণ মন্দির হোক ৷ সেই ইচ্ছে পূরণের জন্যই তিনি চিত্রকূটে মন্দিরটি তৈরি করেছেন ৷
তিনি বলেন, "2016 সালের নভেম্বরে স্ত্রীর মৃত্যুর পর আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, মন্দিরটি তৈরি করব । অবশেষে মন্দিরটি তৈরি করতে ছয় বছর সাত দিন সময় লাগে ৷ খরচ হয় 1.50 কোটি টাকা । রাধা-কৃষ্ণ প্রেমের প্রতীক, যা মানুষের শতাব্দী ধরে স্মরণ করা উচিত । এছাড়াও, রাধা-কৃষ্ণের সঙ্গে, রাধাজির বন্ধু ললিতা এবং বিশাখাকেও এখানে স্থাপিত করা হবে ৷"
চান্সোরিয়া আরও বলেন, এই মন্দিরটি 29 মে সমাজের জন্য উৎসর্গ করা হবে । বিয়ের পর ভালোবাসাই সব ৷ তাই ছোট খাটো সমস্যা হলেই প্রেমকে বা স্ত্রীকে ত্যাগ করা উচিত নয় - তরুণদের এই বার্তাই দিতে চান তিনি ৷
মন্দিরের স্থানীয় পুরোহিত পণ্ডিত রমেশ চন্দ্র দীক্ষিত বলেন যে, এই মন্দিরটি একটি উদাহরণ হিসাবে কাজ করবে যে, কীভাবে একজন সঙ্গীর মৃত্যুর পরেও তাঁর প্রতি ভালোবাসা অটুট থাকে । মন্দিরের কাজ একটানা ছয় বছর ধরে চলেছে ৷ 2010 সালে কিছু সময়ের জন্য থেমে গিয়েছিল, তবে পরে তা আবার শুরু হয় ৷ পুরোহিতের কথায়, "প্রেমের প্রতীক রাধা-কৃষ্ণ বিরাজ করবে এই মন্দিরে ৷ মানুষের জন্য এটি একটি উদাহরণ যে, কেউ বেঁচে না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তাঁর প্রতি সঙ্গীর কতটা ভালোবাসা থাকতে পারে ।" মন্দির প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান হতে চলেছে বলে জানান তিনি ৷
মন্দিরের কারুকাজের অন্যতম শিল্পী মহম্মদ আসিফ বলেন, আজকের প্রজন্মের কাছে এটি একটি 'তাজমহল'-এর মতো উদাহরণ । এক সময়, শাহজাহান তাঁর প্রয়াত স্ত্রী মমতাজের জন্য একটি তাজমহল তৈরি করেছিলেন এবং আজ বিপি চান্সোরিয়া তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর জন্য একটি মন্দির তৈরি করেছেন । তিনি জানান, মন্দিরের কাজ প্রায় শেষ এবং এটি দেখতেও খুব সুন্দর হয়েছে । স্থানীয়রাও এই মন্দির নিয়ে খুবই খুশি ও উচ্ছ্বসিত ৷ এই মন্দির প্রেম ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা ৷
আরও পড়ুন:সাক্ষী তাজমহল, হিন্দুমতে বিয়ে ইতালিয় দম্পতির