পটনা, 13 অগস্ট: মরিশাস থেকে 164 বছর পর পূর্বপুরুষের খোঁজে বিহারে এলেন এক ব্য়ক্তি ৷ তাঁর নাম ধর্মদেব নির্মল হরি ৷ গ্রামে পা রেখেই মাটিতে চুম্বন করেন তিনি ৷ তাঁকে খুব খুশি দেখাচ্ছিল এ দিন । তিনি জানান, তাঁর পিতৃপুরুষের জন্মগ্রাম বিশম্ভরপুর ৷ এখানে এসে মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুব ভালো লাগছে তাঁর । গ্রামের মাটির সঙ্গে একটা টান অনুভব করছেন তিনি । সেই সঙ্গে মানুষ যে ভালোবাসা দিয়েছে তা সব সময় স্মৃতিতে থেকে যাবে তাঁর । ধর্মদেব বলেন, "আমার পূর্বপুরুষরা 1859 সালে এখান থেকে মরিশাসে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসাবে গিয়েছিলেন ৷ তখন থেকে সেখানেই পরিবারের সমস্ত লোক বাস করতে শুরু করে ।"
গ্রামের মাটি নিয়ে ছোঁয়ালেন কপালে: মরিশাস থেকে বিহারের পটনার বিহতায় অবস্থিত বিষম্ভরপুর গ্রামে এসেছেন ধর্মদেব নির্মল হরি ৷ এসেই তিনি প্রথমে গ্রামের মাটি তুলে তা কপালে ছোঁয়ান । এখানে আসার পর তাঁর খুশির সীমা ছিল না । মানুষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি । তাঁর চোখ দিয়ে জল চলে আসে । তিনি বলেন, "গ্রামে আসার পর মনে হয় নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছি ।"
ধর্মদেব নির্মল হরিকে কেউ চিনতে পারেনি: ধর্মদেব নির্মল হরি তাঁর পূর্বপুরুষদের সন্ধানে গ্রামে এলেও তিনি হতাশ হয়েছেন ৷ কারণ হরি নামে একজন ব্যক্তিকে কেউ চিনতে পারেনি ওই গ্রামে ৷ যিনি 1859 সালে মরিশাসে গিয়েছিলেন । মরিশাসের কাছে বিগত বছরের মানুষের রেকর্ড থাকলেও বিহারে বসবাসকারী গ্রামের মানুষের কাছে তা নেই ।
গ্রামে এসে খুব খুশি:মরিশাসের ওই বাসিন্দা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সন্ধান না পেলেও তিনি খুশি যে অবশেষে এই গ্রামের সন্ধান পেয়েছেন, যেখান থেকে তাঁর পূর্বপুরুষরা মরিশাসে চলে যান । বিশম্ভরপুরের মানুষের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের কথা মনে করেন । মরিশাসে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধর্মদেব নির্মল হরি বলেন,"আমাদের বাপ-ঠাকুর্দার গ্রাম বিশম্ভরপুরে আসাটা দারুণ অনুভূতি । যদিও আমাদের বাপ-ঠাকুর্দার কোনও আত্মীয়-স্বজনই তাঁদেরকে চিনতে পারছেন না । এখান থেকে মরিশাসে অনেক স্মৃতি নিয়ে ফিরব ৷ ফিরিয়ে গিয়ে আমার পরিবারের সঙ্গে সেগুলি ভাগ করে নেব ।"
বাবার দাদু 1859 সালে মরিশাস গিয়েছিলেন: গ্রামের লোকজন কোনও ধরনের পরিচয় জানাতে না পারলেও পূর্বপুরুষদের বলা জায়গায় পৌঁছে ধর্মদেব নির্মল হরিকে বেশ আবেগঘন দেখা যায় । তিনি জানান, 1859 সালে তাঁর দাদুর দাদু এই বিহারের জমি থেকে একটি চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসাবে মরিশাস গিয়েছিলেন । তারপর মরিশাসে 10 বছর পর তুলসী নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন । তাঁর পরিবার সঙ্গে সেখানে থেকে যান তিনি ৷ আজ তাঁর 200 জন বংশধর মরিশাসে রয়েছেন ।
আরও পড়ুন:শিকড়ের টানে জৌনপুরের গ্রামে ভিনদেশি সুনীতি
স্মৃতি নিয়ে মরিশাস ফিরবেন: ধর্মদেব নির্মল হরি জানান, 2007 সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার মরিশাস সফরে এসেছিলেন । এ সময় তাঁর সঙ্গে এই মরিশাসের বাসিন্দার দেখা হয় ৷ তখন ধর্মদেব নির্মল হরি শিল্পকর্ম দেখে নীতীশ কুমার প্রশংসা করেন । একই সঙ্গে বিহারে এসে পূর্বপুরুষের গ্রাম খোঁজার জন্য আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন তিনি । সম্প্রতি বিহারে অনুষ্ঠিত G-20 সম্মেলনে বিভিন্ন স্থান থেকে বিদেশি অতিথিরা এসে ভিড় জমান । তাঁদের মধ্যে একজন হলেন মরিশাসের বাসিন্দা হরিও । যার পুরনো সম্পর্ক, যাকে বলে শিকড়ের টান রয়েছে বিহতার বিষম্ভরপুর গ্রামের সঙ্গে । এমনটাই দাবি তাঁর ৷