পানিপথ, 23 এপ্রিল: দেশজুড়ে যখন অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, তখন পানিপথে ধরা পড়ল এক অবাক করা 'গড়িমসি'র ছবি ৷ উত্তর ভারতের সবচেয়ে বড় অক্সিজেনের কেন্দ্র এয়ার লিক্যুইড প্ল্যান্টে রোজ 250 মেট্রিক টন অক্সিজেন তৈরি হয় ৷ সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় যে অক্সিজেন পাঠানো হবে, তার ট্যাঙ্কার 30 ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্ল্যান্টের বাইরেই অপেক্ষা করছে ৷ অথচ অক্সিজেন মিলছে না ৷
অপেক্ষায় রয়েছে হরিয়ানার কোম্পানি ৷ অক্সিজেনের অভাবে যে দিল্লির অবস্থা ভয়াবহ, তাদের ট্যাঙ্কারকেও অক্সিজেন দেরিতে দেওয়া হচ্ছে ৷ দু-তিন দিন বসিয়ে রাখা হয়েছে পঞ্জাবের ট্যাঙ্কারগুলিকেও ৷
বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা পৌনে দুটো ৷ সেই সময়ে পানিপথ থেকে 22 কিলোমিটার দূরের রিফাইনারির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে 13টি ট্যাঙ্কার ৷ দিল্লির 2টি, পঞ্জাবের 2টি, হরিয়ানার 4টি এবং উত্তরপ্রদেশ ও গাজ়িয়াবাদের একটি করে ট্যাঙ্কার ৷ কোনওটা দাঁড়িয়ে রয়েছে 5-6 ঘণ্টা, কোনওটা আবার 30-35 ঘণ্টা ৷
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর দিল্লির তিনটি ট্যাঙ্কারের মধ্যে একটি অক্সিজেন পায় ৷ ডিউটি ম্যাজিস্ট্রেটের দাবি, দিল্লির বদরপুর বৈভব অক্সিজেন সংস্থার পাঠানো তিনটি ট্যাঙ্কারের একটিতে 10 টন অক্সিজেন পাঠানো হয়েছে ৷ তবে দুটি ট্যাঙ্কার 21 এপ্রিল থেকে প্ল্যান্টের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷
পঞ্জাব থেকে অক্সিজেন নিতে গিয়েছেন রাজীব ও মিঠুন নামে দুই ব্যক্তি ৷ তাঁরা জানালেন, 21 এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটা থেকে তাঁরা প্ল্যান্টের বাইরে দাঁড়িয়ে ৷ গেটেই কুপন দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু অক্সিজেন কখন পাওয়া যাবে, তা 22 এপ্রিল দুপুর দুটো পর্যন্ত জানা যায়নি ৷
আরও পড়ুন: 25 রোগীর মৃত্যু, সঙ্কটে আরও 60 ! অক্সিজেন চেয়ে মিনতি দিল্লির হাসপাতালের
একই অবস্থা হরিয়ানার ট্যাঙ্কারেরও ৷ বৃহস্পতিবার দুপুর 1.47-এ প্ল্যান্টের গেট খুললে দু মিনিটের মধ্যে অক্সিজেনের দুটো ট্যাঙ্কার বেরিয়ে আসে ৷ কন্ডাক্টর জানালেন, ভিওয়ানি যাচ্ছেন ৷ এ দিকে, বুধবার পানিপথ রিফাইনারি থেকে 10 মেট্রিকটন অক্সিজেন নিয়ে ট্রাক সির্সার দিকে রওনা হলেও এখনও তা গন্তব্যে পৌঁছয়নি ৷ ড্রাগ ইনস্পেক্টর এই নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন ৷
তিনজন করে ডিউটি ম্যাজিস্ট্রেট সকাল 6টা থেকে সন্ধে 6টা পর্যন্ত রিফাইনারিতে তিন শিফটে কাজ করেন ৷ তবু কেন এক ট্যাঙ্কারকে অক্সিজেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ? এই প্রশ্নের জবাবে ডিউটি ম্যাজিস্ট্রেট এসডিও সন্দীপ কুমার দাবি করেন, রিফাইনারির বাইরে যে ট্যাঙ্কারগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে, সে গুলি যে গাড়িগুলি পাঠানো হবে বলে স্থির করা ছিল, সেই তালিকায় নেই ৷
কারণ যা-ই হোক, দেশজুড়ে যখন অক্সিজেনের অভাবে মানুষের জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে গিয়েছে, তখন এই বিষয়টিকে যদি আর একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখা যায়, তবে প্রাণগুলো যে বাঁচানো সম্ভব হয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই ৷