আগরতলা, 31 অক্টোবর : লক্ষ্য ত্রিপুরার মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ৷ আর সেই কারণেই ত্রিপুরার মাটিতে থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস ৷ আগরতলায় রবিবারের জনসভা থেকে এই বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee) ৷ আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ত্রিপুরার আসন্ন পৌরসভা এবং পৌরনিগম নির্বাচনে সবক’টি আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘাসফুল শিবির ৷ আর সেই ভোটপর্ব মিটলেই রাজ্যে আসবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ ত্রিপুরার বিবেকানন্দ ময়দানে সভা করবেন তিনি ৷
আরও পড়ুন :Rajib Banerjee : আগরতলায় অভিষেকের সভায় তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন রাজীবের
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপিকে হঠানোর পণ নিয়েছেন মমতা ৷ কিন্তু, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতা হাতে নিয়ে সেই লক্ষ্যভেদ সম্ভব নয় ৷ আর সেই কারণে, ত্রিপুরা, অসম, গোয়ার মতো রাজ্যগুলিকে পাখির চোখ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর কৌশল খুব স্পষ্ট ৷ 2024 সালের আগে যেক’টা রাজ্যে বিধানসভা ভোট হবে, সেগুলিতে যতটা সম্ভব তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়ে নিতে হবে ৷ যাতে জাতীয় স্তরে মমতাকেই মোদিবিরোধী প্রধান মুখ হিসাবে এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজেপিবিরোধী প্রধান শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় ৷
ত্রিপুরায় বিধানসভার ভোট হবে 2023 সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ ৷ এতদিন মনে করা হচ্ছিল, সেই নির্বাচনেই উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে পদ্ম হঠিয়ে ঘাসফুল ফোটানোর পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর ৷ কিন্তু, রবিবার আগরতলায় অভিষেক যে বক্তব্য রাখেন, তাতে অন্য বার্তা রয়েছে ৷ 2023-এর নির্বাচন যদি পরবর্তী লোকসভা ভোটের অন্যতম প্র্য়াকটিস ম্য়াচ হয়, তাহলে সেই প্র্য়াকটিস ম্যাচের ওয়ার্ম আপ সেশন শুরু হচ্ছে আগামী 25 নভেম্বর ৷ ওই দিনই ভোট হবে আগরতলা পৌরনিগম-সহ রাজ্য়ের মোট 20টি পৌরসভায় ৷
এদিন অভিষেক জানান, পৌর নির্বাচনে সবক’টি আসনেই প্রার্থী দেবে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তাঁর দাবি, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে বিজেপিকে ‘গো-হারা’ হারাবে তৃণমূল ৷ মনে করা হচ্ছে, এটা আসলে তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশল ৷ গত কয়েক মাসে ত্রিপুরায় যে তৃণমূলের গুরুত্ব আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ কিন্তু, এই শক্তিবৃদ্ধি আদতে কতটা হয়েছে ? বাকিই রয়েছে বা কতটা ? তাছাড়া, ত্রিপুরার পুলিশ, প্রশাসন রয়েছে বিজেপির হাতে ৷ তাই সেখানেই ভোটে জেতা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেকটাই কঠিন ৷ আর এই জায়গা থেকেই তড়িঘড়ি পৌরভোটে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এই ভোটের ফলাফল তৃণমূলকে পরবর্তী রণকৌশল স্থির করতে অনেকটাই সাহায্য করবে ৷ অন্তত এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷
আগরতলার এদিনের সভাকে ‘খুঁটিপুজো’ বলে উল্লেখ করেন অভিষেক ৷ যার বিসর্জন হবে তেইশের ফেব্রুয়ারিতে ৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরার মানুষ ইতিমধ্য়েই তৃণমূলের পক্ষে চলে এসেছে ৷ শুধু তাঁদের ভোট দেওয়ার অপেক্ষা ৷ আর বিজেপি সেটা বুঝতে পেরেছে বলেই ভয় পাচ্ছে ৷ এই কারণেই অভিষেককে সভা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না ৷ এমনকী তাঁকে আটকাতে জারি করা হচ্ছে 144 ধারা ৷ বদলে ফেলা হচ্ছে কোভিড সুরক্ষাবিধি ৷ অভিষেকের প্রশ্ন, তাঁকে আটকাতেই যদি এত কিছু করা হয়, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় এলে বিপ্লব দেবের সরকার কী করবে ? আর এই প্রসঙ্গেই অভিষেক জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই ত্রিপুরায় এসে সভা করবেন মমতা ৷
আরও পড়ুন :Goa TMC : লুইজিনহো-লিয়েন্ডার সহ একাধিক মুখ তৈরি গোয়া তৃণমূলে
সদ্য দু’দিনের সফরে গোয়া গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ ভিনরাজ্য হলেও তাঁর এই কর্মসূচি নিয়ে মানুষের উৎসাহ কম ছিল না ৷ এমনকী, মমতার উপস্থিতিতে স্বনামধন্যরা তৃণমূলে নামও লিখিয়েছেন ৷ ত্রিপুরাতেও একই ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷ তবে সংগঠন বিস্তারে আগ্রহী হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বা তাঁর দলের পশ্চিমবঙ্গের কোনও নেতা যে ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক ৷ তিনি সাফ জানিয়েছেন, আগামী দিনে তৃণমূলের সরকার গঠিত হলে কোনও ভূমিপুত্রই ত্রিপুরার সরকার চালাবেন ৷ ত্রিপুরার ভালমন্দের রিমোট দিল্লির সরকারের হাতে থাকবে না ৷ অভিষেকের দাবি, ডাবল ইঞ্জিন সরকারের নামে আসলে ত্রিপুরাকে নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রের সরকার ৷ বিপ্লব দেব রয়েছেন শুধুমাত্র কেন্দ্রের হুকুম তামিল করার জন্য ৷ কিন্তু, তৃণমূল তা কখনই করবে না ৷