নয়াদিল্লি, 27 জুলাই :কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আবহেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সারলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ অন্তত মমতা নিজে তেমনটাই দাবি করেছেন ৷ অথচ ওয়াকিবহাল মহলের হিসেব বলছে, একদিকে দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে নিজের এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ভিত পোক্ত করা এবং অন্যদিকে যত দ্রুত সম্ভব রাজ্য়ে উপনির্বাচনের পাট চুকিয়ে ফেলা, এই দুই-ই হল মমতার দিল্লি সফরের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ৷ কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে সংশ্লিষ্ট দু’টি বিষয় নিয়েই খুব বেশি কিছু বলতে শোনা গেল না তৃণমূল সুপ্রিমোকে ৷
আরও পড়ুন :Modi-Mamata : মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আরও ভ্যাকসিনের দাবি মমতার
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ৷ বৈঠক চলে প্রায় আধঘণ্টা ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, কোভিড আবহকে শিখণ্ডী করে বাংলায় উপনির্বাচন ঠেকিয়ে রাখার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের এনডিএ সরকার ৷ এর প্রধান কারণ অবশ্যই মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ কারণ, গোটা রাজ্যে তাঁর দল 213টি আসনে জয়লাভ করলেও মমতা নিজে নন্দীগ্রাম আসনে হেরে গিয়েছেন ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী পদ ধরে রাখতে হলে তাঁকে দায়িত্ব গ্রহণের ছ’মাসের মধ্যেই ভোটে জিতে আসতে হবে ৷ তা না হলে অন্য কারও হাতে ছেড়ে দিতে হবে বাংলার মসনদ ৷ যা মমতা কখনই চাইবেন না ৷
সূত্রের খবর, কোভিড আবহে ভোট করালে সংক্রমণ বাড়তে পারে ৷ এমন একটা যুক্তি নাকি খাড়া করার চেষ্টা চলছে কেন্দ্রের তরফে ৷ সেই মতো কাজে লাগানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকেও ৷ এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করছেন, এদিন মোদির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজ্য়ে উপনির্বাচন করানো নিয়ে চাপ দিতে পারেন মমতা ৷ যদিও তিনি নিজে তেমন কিছু বলেননি ৷ বরং মমতা বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, এদিনের সাক্ষাৎকার শুধুমাত্র সৌজন্য বিনিময়ের জন্যই তোলা ছিল ! যদিও এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য়ে সংক্রমণের হার যখন 33 শতাংশ ছিল, তখনই 294 টি আসনে ভোট হয়েছে ৷ আর এখন সংক্রমণের হার মাত্র 1 শতাংশ ৷ সেখানে মাত্র পাঁচটি আসনে উপনির্বাচন এবং দু’টি আসনে নির্বাচন করাতে কোনও সমস্যা হওয়ারই কথা নয় ৷ তবে সেটা করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আগেই যে সেরে ফেলতে হবে, তাও মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ অর্থাৎ, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যে উপনির্বাচনের বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে মরিয়া, সেটা স্পষ্ট ৷
আরও পড়ুন :Mamata Banerjee : মোদির পর ছাতা হাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি দিদি
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই এদিন মমতার সঙ্গে দেখা করে যান কংগ্রেসের দুই নেতা আনন্দ শর্মা ও কমলনাথ ৷ তবে কি কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই মোদি তথা বিজেপি বিরোধী জোট তৈরির কাজ শুরু করে দিলেন মমতা ? দিল্লি সফরের আগে স্পষ্টভাবে সেকথা বললেও এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর যেন একটু বেশিই সংযত মনে হল তৃণমূলনেত্রীকে ৷ তাঁর দাবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁর বন্ধু ! তবে কি এসবও সৌজন্য সাক্ষাতের অঙ্গ ?
এদিকে, এসবের মধ্যেই বুধবার কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গান্ধির (Sonia Gandhi) সঙ্গে দেখা করবেন মমতা ৷ সনিয়ার সঙ্গে ‘চায়ে পে চর্চা’ রয়েছে তাঁর ৷ দেখা করার কথা রয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal), এমনকী বলিউডের দুই প্রবীণ সদস্য জাভেদ আখতার (Javed Akhtar) ও তাঁর স্ত্রী শাবানা আজ়মির (Shabana Azmi) সঙ্গেও ৷ এছাড়া, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও (Ram Nath Kovind) মমতাকে বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছেন ৷ কিন্তু আরটিপিসিআর রিপোর্ট পেশের জট কাটিয়ে সেই সাক্ষাৎ আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মমতার ৷