হায়দরাবাদ: নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে সদ্য-সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি (BJP)-র সাফল্যে একটা বিষয় পরিষ্কার ৷ যা করলে আমজনতার মন পাওয়া যাবে সেটা খুব ভালোভাবে করতে পেরেছে গেরুয়া শিবির ৷ কখনও কখনও তা বৃহৎ রাজনৈতিক উদ্দেশেও করা হয়েছে ৷ সময় বিশেষে সেই উদ্দেশ্য আবার দলের নীতির ঊর্ধ্বে গিয়েও কাজ করেছে ৷ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, 2014 লোকসভা নির্বাচনের আগে নাগাল্যান্ডে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) মুখে নাগালিম স্লোগান ৷ যার অর্থ 'বৃহত্তর নাগাল্যান্ড' ৷ নাগালিম স্লোগান জপে সেই থেকে ধীরে ধীরে নাগাল্যান্ডবাসীর হৃদয়ে প্রবেশ করে গিয়েছিলেন নমো ৷
তবে এই গৈরিকীকরণ রাতারাতি হয়নি ৷ প্রাথমিক অবস্থায় এটি ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের উদ্যোগ ৷ দশকের পর দশক ধরে তার রাজনৈতিক শাখা অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য করে গিয়েছে সংঘ ৷ গোড়ার দিকে দেশজুড়ে সংঘের কয়েকশো শাখা থাকলেও বাড়তে বাড়তে আজ সংখ্যাটা 6 হাজারের মত ৷
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর-পূর্বের যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি-র ব্যাপক সাফল্য এসেছে আরএসএস (RSS)-এর দেখানো পথেই ৷ পাশাপাশি এ ব্যাপারে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর-পূর্বে নির্বাচনী সাফল্য লাভ করা রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের অন্দরে বরাবরই সমন্বয়ের অভাবের সাক্ষী থেকেছে আমজনতা ৷ আর সেখানেই সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরনোর চেষ্টা করে অবশেষে সাফল্য এসেছে পদ্ম শিবিরে ৷ অন্যদিকে দলের অন্দরে বিরোধ, সমন্বয়ের অভাবের ঊর্ধ্বে গিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থাভাজন হতে ব্যর্থ জাতীয় কংগ্রেস ৷ সাম্প্রতিকতম নির্বাচনী ফলাফলে সেই ছবি স্পষ্ট ৷
এতদিন উত্তর-পূর্বের বেশিরভাগ রাজ্যে নির্বাচনী রাজনীতির কোনও অর্থই বহন করত না ৷ কারণ, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন বয়কট করে কংগ্রেসকে ফাঁকা গোলে বল ঠেলে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ৷ আর এতেই আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ে তাঁরা ৷ বিরোধী শক্তিদের উৎখাত, রাজ্যে শান্তি ফেরানোর বার্তা নিয়ে এতদিন নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া কংগ্রেসকে কঠিন লড়াইয়ে সম্মুখীন হতে হয় যখন সেখানে প্রকৃত উন্নয়নের প্রয়োজন ছিল ৷ এমন সময় আসরে নামে বিজেপি ৷ ক্রমে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্তর-পূর্বে প্রবেশের পথ মসৃণ করে তারা ৷
তবে হিন্দুত্বের ধ্বজা ওড়ানো গেরুয়া শিবিরের পক্ষে খ্রিস্টান-অধ্যুষিত দুই রাজ্য নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ে কাজটা সহজ ছিল না ৷ তাই সাম্প্রতিক অতীতে এই দুই রাজ্য গেরুয়া শিবিরের আস্ফালন ভীষণই ইঙ্গিতপূর্ণ ৷ নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ে যথাক্রমে 88 শতাংশ এবং 75 শতাংশ খ্রিস্টান অধ্যুষিত মানুষের বসবাস ৷ তাই এই দুই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি-র সরকার গঠিত হলে পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক দল যেন পূর্ণতা পাবে ৷ 'বৃহত্তর নাগাল্যান্ড'ও গেরুয়াশিবিরের জন্য বড়সড় চ্যালেঞ্জ নাগাল্যান্ডে ৷