পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

BJP in Kerala: উত্তর-পূর্বে সাড়া জাগানোর পর কেরলেও কি এবার ফুটবে পদ্ম ! - BJP

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কেরলে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হলেও সংঘের হাত ধরে এখনও ঈশ্বরের আপন দেশেও ঘাঁটি শক্ত করার প্রয়াস জারি রেখেছে বিজেপি ৷ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোয় নির্বাচনী সাফল্যের পর কেরলে কোনপথে আসতে পারে গেরুয়ার সাফল্য, লিখলেন ইটিভি ভারত নেটওয়ার্কের এডিটর বিলাল ভাট (Bilal Bhat) ৷

Etv Bharat
উত্তর পূর্বে সাড়া জাগানোর পর পদ্ম কি এবার ফুটবে কেরলেও

By

Published : Mar 9, 2023, 10:49 PM IST

Updated : Mar 11, 2023, 3:18 PM IST

হায়দরাবাদ: নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে সদ্য-সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি (BJP)-র সাফল্যে একটা বিষয় পরিষ্কার ৷ যা করলে আমজনতার মন পাওয়া যাবে সেটা খুব ভালোভাবে করতে পেরেছে গেরুয়া শিবির ৷ কখনও কখনও তা বৃহৎ রাজনৈতিক উদ্দেশেও করা হয়েছে ৷ সময় বিশেষে সেই উদ্দেশ্য আবার দলের নীতির ঊর্ধ্বে গিয়েও কাজ করেছে ৷ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, 2014 লোকসভা নির্বাচনের আগে নাগাল্যান্ডে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) মুখে নাগালিম স্লোগান ৷ যার অর্থ 'বৃহত্তর নাগাল্যান্ড' ৷ নাগালিম স্লোগান জপে সেই থেকে ধীরে ধীরে নাগাল্যান্ডবাসীর হৃদয়ে প্রবেশ করে গিয়েছিলেন নমো ৷

তবে এই গৈরিকীকরণ রাতারাতি হয়নি ৷ প্রাথমিক অবস্থায় এটি ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের উদ্যোগ ৷ দশকের পর দশক ধরে তার রাজনৈতিক শাখা অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য করে গিয়েছে সংঘ ৷ গোড়ার দিকে দেশজুড়ে সংঘের কয়েকশো শাখা থাকলেও বাড়তে বাড়তে আজ সংখ্যাটা 6 হাজারের মত ৷

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর-পূর্বের যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি-র ব্যাপক সাফল্য এসেছে আরএসএস (RSS)-এর দেখানো পথেই ৷ পাশাপাশি এ ব্যাপারে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর-পূর্বে নির্বাচনী সাফল্য লাভ করা রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের অন্দরে বরাবরই সমন্বয়ের অভাবের সাক্ষী থেকেছে আমজনতা ৷ আর সেখানেই সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরনোর চেষ্টা করে অবশেষে সাফল্য এসেছে পদ্ম শিবিরে ৷ অন্যদিকে দলের অন্দরে বিরোধ, সমন্বয়ের অভাবের ঊর্ধ্বে গিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থাভাজন হতে ব্যর্থ জাতীয় কংগ্রেস ৷ সাম্প্রতিকতম নির্বাচনী ফলাফলে সেই ছবি স্পষ্ট ৷

এতদিন উত্তর-পূর্বের বেশিরভাগ রাজ্যে নির্বাচনী রাজনীতির কোনও অর্থই বহন করত না ৷ কারণ, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন বয়কট করে কংগ্রেসকে ফাঁকা গোলে বল ঠেলে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ৷ আর এতেই আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ে তাঁরা ৷ বিরোধী শক্তিদের উৎখাত, রাজ্যে শান্তি ফেরানোর বার্তা নিয়ে এতদিন নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া কংগ্রেসকে কঠিন লড়াইয়ে সম্মুখীন হতে হয় যখন সেখানে প্রকৃত উন্নয়নের প্রয়োজন ছিল ৷ এমন সময় আসরে নামে বিজেপি ৷ ক্রমে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্তর-পূর্বে প্রবেশের পথ মসৃণ করে তারা ৷

তবে হিন্দুত্বের ধ্বজা ওড়ানো গেরুয়া শিবিরের পক্ষে খ্রিস্টান-অধ্যুষিত দুই রাজ্য নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ে কাজটা সহজ ছিল না ৷ তাই সাম্প্রতিক অতীতে এই দুই রাজ্য গেরুয়া শিবিরের আস্ফালন ভীষণই ইঙ্গিতপূর্ণ ৷ নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ে যথাক্রমে 88 শতাংশ এবং 75 শতাংশ খ্রিস্টান অধ্যুষিত মানুষের বসবাস ৷ তাই এই দুই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি-র সরকার গঠিত হলে পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক দল যেন পূর্ণতা পাবে ৷ 'বৃহত্তর নাগাল্যান্ড'ও গেরুয়াশিবিরের জন্য বড়সড় চ্যালেঞ্জ নাগাল্যান্ডে ৷

আরও পড়ুন:ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ড দখলে রাখল বিজেপি, মেঘালয়ে সরকার গঠনে গেরুয়া শিবিরের দ্বারস্থ সাংমা

প্রাদেশিকতার ফায়দা তুলে স্থানীয় মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে 2014 লোকসভা নির্বাচনের আগে নাগাল্যান্ডে গিয়ে বৃহত্তর নাগাল্য়ান্ডের জিগির তুলে দেন ৷ ঠিক তার আগে 2013 সেখানে বিধানসভা নির্বাচনে হতাশাজনক ফলাফলকে 'ওয়েক আপ কল' হিসেবে দেখেছিল বিজেপি ৷ এরপরই সেখানে পদ্ম ফোটাতে আঞ্চলিক দলগুলির শরণাপন্ন হওয়া গেরুয়া শিবিরের উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত ৷ 2014 নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীত্বের মসনদে বসার পর রাজ্যগুলির প্রতি শেন দৃষ্টি রেখেছিল ৷ খ্রিস্টধর্মের মানুষের আধিক্য থাকায় ধর্মের তাস সরিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে যেনতেন প্রকারে সরকার গঠনে মরিয়া ছিল বিজেপি ৷

ফলশ্রুতি হিসেবে 2018 বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্ব বর্তায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তৎকালীন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আল্পোনস কামনাথানামের উপর ৷ খ্রিস্টানদের মন জিততে স্থানীয় গির্জাগুলিকে সংস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ৷ যার ফল মেলে ভোটব্য়াংকে ৷ কংগ্রেস বেশি আসন জিতে ক্ষমতাসীন হলেও বিকল্প অনুসন্ধান জারি ছিল সেখানে ৷ কারণ, কংগ্রেস স্থানীয় মানুষ, আঞ্চলিক সমস্যাগুলোর কথা কখনোই আলাদা করে গুরুত্ব দেয়নি ৷

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে জনসংযোগ বাড়াতে দলের তাবড় সমস্ত নেতাকে পাঠায় বিজেপি ৷ তেইশের নির্বাচনের আগে পাঁচ বছরে পঞ্চাশেরও বেশিবার উত্তর-পূর্বে সফর করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ সত্তরেরও বেশি বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা সেখানে গিয়েছে চারশোরও বেশিবার ৷ আর এভাবেই সেখানে ঘাঁটি শক্ত হয়েছে গেরুয়ার ৷

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর মতো কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের কোনও আঁতাত নেই ৷ অন্যান্য রাজ্যগুলো সেই পথে হেঁটে উল্লেখযোগ্য ফলাফল পেলেও দক্ষিণের বামশাসিত রাজ্য সে পথে হাঁটেনি এখনও ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কেরলে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হলেও সংঘের হাত ধরে এখনও তারা ঘাঁটি শক্ত করার প্রয়াস জারি রেখেছে ৷ অদূর ভবিষ্যতে যে কোনও সময় দক্ষিণের রাজ্য হাত বদল হয়ে বিজেপির দখলে আসতে পারে ৷ যদিও আরএসএস-এর প্রথাগত কিছু স্ট্র্যাটেজির বাইরে গিয়ে কেরলে পদ্ম ফোটাতে কংগ্রেস এবং বর্তমান বাম সরকারের ভুলভ্রান্তির দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে ৷

Last Updated : Mar 11, 2023, 3:18 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details