শ্রীকাকুলাম, 18 ডিসেম্বর: মানুষ যখন প্রযুক্তির সঙ্গে ঘর বাঁধছে, সে সময় একেবারে উলটো ছবি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি গ্রামে ৷ শ্রীকাকুলামের কুরমা গ্রামে বৈদিক যুগের বর্ণাশ্রম প্রথায় জীবন যাপন করছেন গ্রামবাসীরা ৷ দু'শো বছরেরও বেশি সময়ের পুরনো এই ঐতিহ্য, নিত্য অভ্যাস, খাবার, জামাকাপড় তো রয়েছে, এমনকী তার সঙ্গে পেশাও (Kurma village in the Srikakulam district of Andhra Pradesh follows Vedic era lifestyle) ৷
2018 সালের জুলাই মাসে 'ইন্টারন্যাশনাল কৃষ্ণা কনসিয়াসনেস অ্যাসোসিয়েশন'-এর (International Society for Krishna Consciousness) প্রতিষ্ঠাতা ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং তাঁর শিষ্যরা এই গ্রামের সূচনা করেন ৷ প্রথম দিকে হাতে গোনা কয়েকজন ছিলেন ৷ এখন সেখানে বাসিন্দাদের সংখ্যা 56 ৷ এর মধ্যে 12টি পরিবার, 16 জন গুরুকুল ছাত্র, এবং 6 জন ব্রহ্মচারী আছেন ৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছেন সনাতন ধর্ম এবং তার অংশ বর্ণাশ্রম প্রথা (Vedic Varnashrama) ৷ সেই চিরন্তনকে ফিরিয়ে আনতে এমন উল্টো দিকে হাঁটা ৷
আরও পড়ুন: চোল রাজত্বকালের দু'টি প্রাচীন মূর্তির সন্ধান মিলল চেন্নাইয়ে
আধুনিক জীবনে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করতে গিয়ে মানুষ জীবনের শান্তি খুইয়ে ফেলছে ৷ অসুস্থ হয়ে পড়ছে ৷ ভারতীয় সংস্কৃতিতে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেঁচে থাকে ৷ কুরমা গ্রাম তার প্রমাণ ৷ এখানে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষই ধনী পরিবারে জন্মেছেন এবং বড়ো হয়েছেন ৷ অনেকে বিশাল অঙ্কের টাকার চাকরিও করেছেন ৷ কিন্তু সেই জীবন যাপনে বিরক্ত হয়ে সব ছেড়েছুড়ে কুরমা গ্রামে চলে এসেছেন ৷ এখানে বাড়িগুলি মাটির তৈরি ৷ বাংলো, দামি গাড়ির থেকে ছোট্ট কুঁড়েঘর অনেক সুখের, জানাচ্ছেন গ্রামবাসী ৷ শুধু দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দারাই নয়, অন্য দেশগুলি থেকেও কুরমায় মানুষ আসছেন ৷ সেখানে থেকে ঈশ্বরের উপাসনা করছেন ৷
সহজ জীবন, কিন্তু উচ্চ চিন্তাধারায় বিশ্বাসী কুরমাবাসী ৷ শীতের কাপড়ে ব্যবহৃত উল আর কাপড় প্রকৃতি থেকেই পাওয়া সম্ভব ৷ এবছর গ্রামের বাসিন্দারা 198 বস্তা শস্য ফলিয়েছেন ৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক-সবজিও হয় এখানে ৷ বীজ বপন থেকে চাষ- কোনও কাজের জন্য অন্য় কারও উপর নির্ভর করে না কেউ ৷ গ্রামবাসীরা নিজেদের প্রিয় সবজিগুলি উৎপন্ন কোনও রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া ৷ পাশাপাশি থাকে পশুপালন ৷ ঘরবাড়ি নির্মাণে কোনও সিমেন্ট বা লোহা ব্যবহৃত হয় না ৷ বালি, লেবু, গুড়, তুর ডাল, করোলা, ভেষজ উদ্ভিদ মিশিয়ে ঘর তৈরির মিশ্রণ বানানো হয় ৷
বর্ণাশ্রম পদ্ধতিতে চলে কুরমা গ্রাম ৷ এখানে ছাত্ররা তেলেগু, সংস্কৃত, ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় সমান দক্ষ ৷ এই আশ্রমে ভোর 4.30টেয় দেবতার আরতি হয় ৷ সকালে ভজন এবং প্রসাদ বিতরণের পর নিত্যদিনের কাজ শুরু ৷ গ্রামবাসীরা চাষবাস, ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং ধার্মিক কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ৷ সন্ধ্যাতেও আধ্যাত্মিক কর্মসূচি থাকে ৷ বিনামূল্যে শিক্ষার বন্দোবস্ত রয়েছে এই গ্রামে ৷ পড়ুয়ারা বিজ্ঞান, বৈদিক শাস্ত্র-নির্ভর পড়াশোনা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শৃঙ্খলা, সুব্যবহার, কৃষি, হস্তশিল্প শেখে ৷ তাছাড়া বাবা-মা ও গুরুর সঙ্গে কী আচরণ করা উচিত- সে শিক্ষাও দেওয়া হয় ৷
আরও পড়ুন: অঙ্কে ভীতি ? পড়ুয়াদের নতুন দিশা দেখাতে পারে বৈদিক গণিতবিদ্যা