হায়দরাবাদ, 21 ফেব্রুয়ারি: ভাষা এমন কথা বলে বোঝাবে সকলে / রাজা উঁচা-নীচা ছোট বড় সমান । বাংলা বর্ণমালায় ছোট বা বড় হরফ নেই, প্রত্যেকটি বর্ণের গুরুত্ব সমান । ঠিক যেভাবে ভাষার কাছে সবাই সমান, সবার কাছে ভাষাও বোধহয় । যে ভালোবাসা থেকে মায়ের দেওয়া ভাষাকে বাঁচাতে একজোট হয়েছিল গোটা সমাজ । কিন্তু শুধুমাত্র ভাষার আভিজাত্য অটুট রাখার জন্য প্রাণ বাজি রেখে লড়াই ? নাকি মাতৃভাষাকে অন্য ভাষার উপর স্থান দেওয়ার প্রচেষ্টা ? 1952 সালের এই দিনেই মাতৃভাষার অলঙ্কার অক্ষুণ্ণ রাখতে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন রফিক উদ্দিন, আবদুল জব্বাররা (Bhasha Dibosh) ।
সাত দশক আগে সেই লড়াই দেখেছিল বিশ্ব । দেখেছিল ভাষার মান রক্ষার লড়াই কীভাবে মিলিয়েছিল ছোট বড় প্রত্যেককে । বাংলা ভাষার গরিমা রক্ষা করার যে প্রদীপ জ্বেলেছিলেন ধীরেন দত্ত, তারই ধ্বজা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিলেন শেখ মুজিবর রহমান, আবুল কাশেমরা । ভাষা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ধর্মীয় অচলায়তন । ভেঙে দিয়েছিল সমস্ত ভেদাভেদ । দেখিয়েছিল, কেবলমাত্র একটি ভাষাকে পুঁজি করে কীভাবে শাসকের চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায় (International Mother Language Day) ।
ভাষা আন্দোলন কী ?
সালটা 1948 । 23 ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে একটি সংশোধনী প্রস্তাব আনেন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত । তাতে বলা হয়, ইংরেজি-উর্দুর পাশাপাশি সংসদে বাংলায় বক্তৃতা এবং সরকারি কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু হোক । কিন্তু সেই দাবি নস্যাৎ করে দেয় পাক প্রশাসন । শুরু হয় প্রাক ভাষা-আন্দোলন পর্ব । তাতে ঘৃতাহুতি দেয় মহম্মদ আলি জিন্নাহ ও লিকায়ত আলি খানের বঙ্গদেশ সফর এবং কিছু 'আলটপকা' (রাজনীতিবিদরা সেরকমই বলেন) মন্তব্য ।
1952 সালে সেই আন্দোলনই চরম আকার নেয় । ভাষা আন্দোলন প্রাণ পায় ছাত্রদের উন্মুক্ত যোগদানে । দেশের প্রতিটি ভাষা শ্রমিক হয়ে ওঠেন তীক্ষ্ণ যোদ্ধা । যারা কলম বাঁচাতে তলোয়ার হাতে তুলে নিতে দ্বিধায় ভোগেন না । এরমধ্যে অন্যতম ভূমিকা নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা । তারপরেই আসে সেই দিন, 21 ফেব্রুয়ারি ।