পোরবন্দর, 2 অক্টোবর : গুজরাতের পোরবন্দর ৷ এখানেই জন্মেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ৷ সবার কাছে যিনি পরিচিত মহাত্মা গান্ধি নামে ৷ পুরাণ মতে, এখানেই জন্ম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বন্ধু সুদামারও ৷ সবরমতীর যে স্থানে অহিংস আন্দোলনের প্রতীক মহাত্মা গান্ধি জন্মেছিলেন তা কীর্তি মন্দির নামে পরিচিত ৷
এই জায়গাটি 2 ভাগে বিভক্ত ৷ একটি মহাত্মা গান্ধির জন্মস্থান ও অপরটি হল কীর্তি মন্দির, যা মূলত বাপুকে শ্রদ্ধা জানাতে তৈরি করা হয়েছে ৷ 1869 সালের 2 অক্টোবর পোরবন্দরে জন্ম মহাত্মা গান্ধির ৷ যে বাড়িতে তিনি জন্মেছিলেন সেটি 1777 সালে একজন ব্রাহ্মণ মহিলার থেকে কিনেছিলেন গান্ধিজির প্রপিতামহ ৷ পরে গান্ধিজির ঠাকুরদা উত্তমচাঁদ গান্ধি, যিনি ওটা গান্ধি নামে পরিচিত, বাড়িটিকে তিনতলা করেন ৷ তৎকালীন পোরবন্দর রাজ্যের দিওয়ান ছিলেন ওটা গান্ধি ৷ জন্মের পর মাত্র সাত বছর গান্ধিজি পোরবন্দরে ছিলেন ৷ এরপর পড়াশোনার জন্য তিনি রাজকোটে চলে যান ৷ 1882 সালে মাত্র 13 বছর বয়সে গান্ধিজির বিয়ে হয় পোরবন্দরের বাসিন্দা নগরশেঠ গোকুলদাস মাকানজির কন্যা কস্তুরবার সঙ্গে ৷
কীর্তি মন্দিরে গান্ধিজির ঘরের নীচে বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য একটি বড় জলাধার রয়েছে ৷ এছাড়াও ঘরের দরজাতেও রয়েছে নানা কারুকার্য ৷ বাপুর জন্মস্থানে আঁকা রয়েছে একটি স্বস্তিক চিহ্ন ৷ রয়েছে একটি চরকাও ৷ ঘরের উল্টোদিকে গান্ধিজি ও তাঁর মা পুতলি বাইয়ের তিনটি ছবি রয়েছে ৷ গান্ধিজির মা বৈষ্ণব ধর্ম মেনে চলতেন এবং তিনি আলাদা রান্না ঘরে রান্না করতেন ৷ এই ঘরগুলিও রং করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Gandhi Jayanti 2021 : বাপুর মন্ত্র লাখো মানুষকে শক্তি জোগায়, গান্ধি জয়ন্তীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য মোদির
1944-45 সালে গান্ধিজি যখন আগা খান প্রাসাদ থেকে মুক্তি পান তখন পোরবন্দরের শেঠ ননজি কালিদাস মেহতা তাঁকে পঞ্চগিনিতে থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন ৷ পরে বাপুকে নিয়ে মানুষের ভাবাবেগের কথা ভেবে পোরবন্দরের মহারাজাও গান্ধিজির জন্মস্থানে একটি স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন ৷ গান্ধিজি তাতে সম্মতি দিলে 1947 সালে সেখানে স্মৃতিসৌধটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন দরবার সাহেব গোপাল দাস দেশাই ৷ 2 বছরে 5 লক্ষ টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয় কীর্তি মন্দির ৷ 79 বছর বয়সে যখন গান্ধিজির মৃত্যু হয় তখন, সমাজ থেকে গরিবি ও অন্ধকার দূর করতে তাঁর লড়াইকে শ্রদ্ধা জানাতে এই স্মৃতিসৌধটির মাথায় 79টি মাটির প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়েছিল ৷ এখানে প্রধান 6টি ধর্মের প্রতীকও রাখা রয়েছে ৷ পোরবন্দরের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নারায়ণ খেরের আঁকা গান্ধিজি ও কস্তুরবা বাইয়ের ছবিও রয়েছে এখানে ৷
বাপু বলতেন, "আমার জীবন খোলা বইয়ের মতো ৷ আমি ভগবান হতে চাই না ৷" গান্ধিজি শর্ত দিয়েছিলেন তাঁর ছবির সামনে যেন কখনও ধূপ, আলো দেখানো না হয়, এখানে সেটাই মেনে চলা হয় ৷ এখানে তাঁর ছবির নীচে লেখা রয়েছে, 'সত্য এবং অহিংসা, শুধুমাত্র পুষ্পার্ঘ্য দিন'৷ 1950 সালের 27 মে এই স্মৃতিসৌধটিকে জাতির উদ্দেশে সমর্পণ করেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ৷
আজও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন কীর্তি মন্দিরে ৷ মনোজ কুমার ঝা নামে রাজস্থানের এক পর্যটক ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমরা 70 জন এখানে এসেছি ৷ এখানে এক শান্তি আছে ৷ আমরা আজ যে ভারতে আছি সেই ভারতের কথা বলতেন গান্ধিজি ৷"
গান্ধিজির ছোটবেলা প্রসঙ্গে গান্ধি বিশেষজ্ঞ ডক্টর সুরেখাবেন শাহ জানিয়েছেন, গান্ধিজির ব্যক্তিত্বে বহু মানুষ, পরিবেশ ও তাঁর অভিভাবকদের প্রভাব পড়েছিল ৷ কথা দিলে সে কথা রাখা গান্ধির চরিত্রের একটা বড় গুণ ছিল ৷ তাঁর মা একজন ধর্মপ্রাণ মহিলা ছিলেন ৷ তিনি ছোটবেলায় ছেলেকে ছেলেকে নিয়ে যেতেন প্রণামী মন্দিরে ৷ এভাবেই মায়ের থেকে তিনি ভগবানের প্রতি বিশ্বাস রাখতে ও রামনাম শিখেছিলেন ৷ ছোটবেলায় যখন অন্ধকারে ভয় পেতেন বাপু তখন রম্ভা নামের এক মহিলা তাঁকে বলেছিলেন, রামনাম করতে ৷ ভয় কেটে যায় ৷ গান্ধিজি এটা কোনও দিন ভোলেননি ৷
ছোটবেলায় পোরবন্দরের এক প্রাথমিক স্কুলে পড়তেন মহাত্মা ৷ পরে সাত বছর বয়সে আরও পড়াশোনার জন্য তিনি রাজকোট চলে যান ৷ গান্ধি জয়ন্তীতে পোরবন্দরের জেলা কালেক্টর অশোক শর্মা জানিয়েছেন, কীর্তি মন্দিরে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এবছর এখানকার নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে ৷ এছাড়াও, 'মোহন সে মোহন তক' নামে বই প্রকাশের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে ৷