দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ জম্মু ও কাশ্মীরের দৃষ্টিহীন ইনশা শোপিয়ান (জম্মু ও কাশ্মীর), 11 জুন: গুলিতে দুচোখ হারিয়েও বিজ্ঞান বিভাগে ফার্স্ট ডিভিশনে পেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মেয়ে ইনশা মুশতাক ৷ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মিশ্র অনুভূতি 18 বছর বয়সি এই কন্যের ৷ তিনি বলেন, "প্রথমে আমি কেঁদেছিলাম, তারপর খুব খুশি হয়েছি । আমার বাবা-মা আমাকে বলেছেন, দৃষ্টি থাকার সত্ত্বেও অনেকে আমার মতো নম্বর পায়নি ।"
পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলে কোনও বাধাই যে বড় নয় ৷ তাই যেন আরও একবার প্রমাণ করলেন ইনশা ৷ 2016 সালে তাঁর জীবনে নেমে আসে চিরতরে অন্ধকার ৷ ওই বছরে একটি বিক্ষোভ চলাকালীন গুলি লাগে তাঁর চোখে ৷ তারপরেই তিনি সারাজীবনের মতো হারিয়ে ফেলেন তাঁর দৃষ্টিশক্তি ৷ তবে পৃথিবীর আলো আর দেখতে পাবেন না যেনও ইনশা হাত ছাড়েননি বইয়ের ৷ পড়াশোনাকে সম্বল করেছেন তিনি ৷ বই খাতাকে আকড়ে ধরে আবারও শিক্ষার মাধ্যমে আলো জ্বালিয়েছেন সমাজে ৷
আরও পড়ুন:শান্তিনিকেতনের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রথম মাধ্যমিক পাশ, নজির গড়ল চার আদিবাসী কন্যা
দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলার সেদো গ্রামের বাসিন্দা ইনশা মুশতাক ৷ শুক্রবার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে তাঁর । ফার্স্ট ডিভিশন-সহ 319 নাম্বার পেয়ে পাশ করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি ৷ অল্প বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারানো সত্ত্বেও ইনশা কখনোই প্রতিকূলতার সামনে হার মানেননি ৷ তাঁর মনোবল কমেনি ৷ বরং তিনি আরও বেশি নিজেকে মনোযোগী করেছেন পড়াশোনার প্রতি ৷ যা তাঁকে আজ সাফল্য এনে দিয়েছে ৷ ইনশা জানান, গুলি লাগার পর থেকে তিনি অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন ৷ কিন্তু হাল ছাড়েননি এবং ওই সমস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন ।
11 জুলাই 2016 সালের সেই দিনের ঘটনার কথা মনে করে ইনশা বলেন, "নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের গ্রামে বিক্ষোভ হয়েছিল । আমি আমাদের বাড়ির জানালায় বসে ছিলাম । আমি জানালা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখে গুলি লেগে যায় ৷ এরপরেই আমি অন্ধ হয়ে যাই ।" ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে ইনশা জানান, তিনি আপাতত প্রথমে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করতে চান । আজকের প্রজন্মকে ইনশা পরামর্শ দেন, "তরুণ প্রজন্মকে বলব জীবনে যাই বাধা আসুক ৷ সেটার মুখোমুখি হও এবং তাকে মোকাবিলা কর ৷"
আরও পড়ুন:প্রথম দুবার প্রিলিমে ব্যর্থ, তৃতীয় প্রচেষ্টায় দেশের সেরা; সক্রিয় ক্রীড়াবিদ ঈশিতাকে জানুন
ইনশার বাবা মুশতাক আহমেদের জানান, জীবনের প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর মেয়ে পরীক্ষায় এত ভালো ফল করায় পুরো পরিবার ও আত্মীয়রা খুব খুশি । তিনি বলেন, "আমরা তাঁকে একজন আইএএস অফিসার হিসাবে দেখতে চাই ৷"