নয়া দিল্লি, 21 জুন : পেট্রল, ডিজেলের আকাশছোঁয়া দামে নাভিশ্বাস দেশবাসীর ৷ এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমলেও ভারতে তা বেড়ে চলেছে ৷ এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে বর্তমান মোদি সরকারকে ৷ কিন্তু, বিজেপির দাবি, মোদির কিছু করার নেই, কারণ এর জন্য দায়ী ইউপিএ জমানার (2004-14) মনমোহন সিংয়ের সরকারের "অয়েল বন্ড" নীতি ৷
আরও পড়ুন : ‘কর উসুলে পিএইচডি’, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রকে খোঁচা রাহুল গান্ধির
অয়েল বন্ড কী?
তেলের বাণিজ্যিক সংস্থা (OMCs) , সারের কোম্পানি, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (FCI), এদের বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ভরতুকি দেওয়া হয় ৷ যা "সরকারি নিরাপত্তা" (government securities)-র সমান ৷ এই বন্ডগুলির মেয়াদ 15-20 বছর পর্যন্ত হতে পারে ৷ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অপরিশোধিত তেল কিনে কম দামে দেশের বাজারে বিক্রি করবে তেল কোম্পানিগুলি ৷ এতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লেও দেশে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে ৷ আর তেল কোম্পানিগুলির যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে দেবে সরকার এই বন্ডের মাধ্যমে ৷ এর জন্য সংস্থাগুলিকে সুদ দিতে হবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ৷ কিন্তু কেন্দ্র সরাসরি নগদ অর্থ দেয় না সংস্থাগুলিকে ৷ অয়েল বন্ডগুলি থেকে নগদ টাকা পেতে বিমা কোম্পানি, ব্যাঙ্ক আর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে বিক্রি করা হয় ৷ সাধারণত ভরতুকিকে রাজস্ব খাতে রাখা হলেও এই বন্ডগুলিকে বাজেটের বাইরে রাখা হয় ৷
2005-2009 পর্যন্ত দেশে জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কংগ্রেস শাসিত ইউপিএ সরকার তেল সংস্থাগুলিকে ভরতুকির এই অয়েল বন্ড দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল ৷ 2008-এ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও 2.9 লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণে 1.4 লক্ষ কোটি টাকার বন্ড দিয়েছিল মনমোহন সরকার ৷ সেই সময় এভাবে দেশে জ্বালানির দামের বৃদ্ধি থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছিল ইউপিএ ৷ আরেক দিকে দেশবাসীর কাছে নিজেদের জনকল্যাণমূলক রাজনৈতিক ভাবমূর্তি বজায় রেখেছিল কংগ্রেস ৷
2015 সালে তেল সংস্থাগুলি থেকে আসল 3,500 কোটি টাকা পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এবছর 1,30,701 কোটি টাকা পাওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের, আর সুদের পরিমাণ 10,000 কোটি ৷ গত 7 বছরে মোদি সরকার 70000 কোটি টাকা সুদ দিয়েছে, আর এবছরে 35000 কোটি টাকা শুধু প্যানডেমিকের জন্যেই বরাদ্দ করতে হয়েছে ৷ সূত্রের মতে, এই বিপুল ঘাটতির চাপে বর্তমান সরকারকে না-চাইতেও অনেক কিছু করতে হচ্ছে ৷ ইউপিএ সরকারকে দায়ী করে একটি লেখা পোস্ট করে টুইট করেন বিজেপির আইটি সেল-এর জাতীয় প্রেসিডেন্ট অমিত মালব্য ৷
যদিও বিজেপি-র এই ব্যাখ্য়া নস্যাৎ করে একে "অগ্রহণযোগ্য" বলে টুইট করেন কংগ্রেস নেতা অমিতাভ দুবে ৷ তিনি টুইটে লেখেন, "অগ্রহণযোগ্য ৷ ভারতীয়রা 3 কোটি মেট্রিক টন পেট্রল আর 7 কোটি 30 লক্ষ মেট্রিক টন ডিজেল বা 2019-20 সালে 14,228 কোটি লিটার জ্বালানি ব্যবহার করেছে ৷ 20,000 কোটি টাকার বন্ডের "ড্রামরোল"-এ প্রতি লিটারে 1.40 টাকা পর্যন্ত ভরতুকি দিতে পারে ৷ যেখানে, মোদি সরকার শুধুমাত্র গত ছ'সপ্তাহে প্রতি লিটারের দাম বাড়িয়েছে 7 টাকা ৷" উল্লেখ্য, অমিতাভ দুবে দিল্লিতে প্রফেশনালস' কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ৷
শেষমেশ, ইউপিএ-বিজেপি উভয় সরকারের দায় মেটাতে হচ্ছে সেই জনসাধারণকে ৷