পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

Child Malnutrition in India: শিশুদের অপুষ্টি, দেশের উন্নতির পথে বড় বাধা - Child Malnutrition in India

সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের তালিকার 125টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হয়েছে 111 ৷ দেশে অপুষ্টি ও শিশুদের অপর্যাপ্ত বৃদ্ধি আরও স্বাধীন ভারতে একটি বড় সমস্যা ৷

ETV Bharat
ফাইল ছবি

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 14, 2023, 8:56 PM IST

হায়দরাবাদ : স্বাধীনতার 75 বছর পরেও দেশের বহু মানুষের কাছে একটি সুষ্ঠু জীবন এখনও অধরা ৷ খাদ্যের অপুষ্টি জনিত সমস্যায় ভুগছেন দেশের বহু মানুষ, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা আজও অনেকের কাছে দূরতম স্বপ্ন ৷ লাখ লাখ শিশুর ভালো থাকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই অপুষ্টির প্রভাব, জন্মের পর থেকেই এই সমস্যায় ভুগছে বহু শিশু ৷ আমাদের দেশের অপুষ্টি জনিত সমস্যা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তার কিছুটা ছবি ধরা পড়েছে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার ইনডেক্সে (WHI) ৷

2020 সালে আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকের এই তালিকায় ভারত ছিল 94 তম স্থানে ৷ কিন্তু এরপর বছর যত গড়িয়েছে এই সূচকের নিরিখে ভারতের স্থান তত দুর্বল হয়েছে ৷ 101, 107 নম্বর স্থান পেরিয়ে বিশ্বের 125টি দেশের মধ্যে এবছর ভারতের স্থান আরও নেমে হয়েছে 111 নম্বর ৷ অপুষ্টি, শিশুর বেড়ে ওঠা, শিশু মৃত্যু ইত্যাদি নানা মাপকাঠির উপর ভিত্তি করে এই সূচক তৈরি করা হয় ৷ যদিও, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই এই সমীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলে একে ক্ষুধার ভুল পরিমাপ বলে আখ্যা দিয়েছে ৷ কেন্দ্রের দাবি, ভারতের সঠিক চিত্র এই সমীক্ষায় প্রতিফলিত হয়নি ৷

যদিও, 2016-18 জাতীয় পুষ্টি সমীক্ষাতে (ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভে) সতর্ক করা হয়েছিল, দেশে পর্যাপ্ত আহারের সমস্যা বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের বাইরে অন্যত্রও ছড়িয়েছে ৷ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, 5 বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে থাকা অপুষ্টির সমস্যা বাড়ছে ৷ যা দেশের স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভালো ছবি নয় ৷ সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড অনভায়রনমেন্ট (CSE) ৷ তাদের রিপোর্টে ধরা পড়েছে, দেশের 71 শতাংশ নাগরিকত অপুষ্টি জনিত সমস্যায় ভুগছে ৷ যার কারণে প্রতি বছর 1.7 মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে দেশে ৷ যেখানে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে 5 বছরের কম বয়সি দেশের 68 শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে সেখানে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের রিপোর্টকে খারিজ করা কেন্দ্রের বৃথা চেষ্টা বলা যায় ৷

এটাও দুর্ভাগ্যজনক যে, দেশের মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতা ও শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির জন্য এখনও এদেশে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে ৷ ডা: বিনয় সহস্র বুদ্ধের নেতৃত্বাধীন সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির দেওয়া রিপোর্ট বলছে, অপুষ্টি দূর করতে কেন্দ্রের তরফে যে পোষণ অভিযান ও প্রধানমন্ত্রী মাত্রু বন্দনা যোজনা চালানো হচ্ছে তার অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না ৷ হৃদয় বিদারক তথ্য হল, দেশ অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির পথে এগোলেও এখনও এখানে খেতে না পেয়ে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে ৷ যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে সম্ভব রেশন পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টও ৷ উঠে আসা এই সমস্ত তথ্য ও পরিসংখ্যাণ মাথায় রেখে মানবিকতার স্বার্থে সরকারের উচিত পর্যাপ্ত পদক্ষেপ করা ৷

আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব ক্ষুধা দিবস, উদ্দেশ্য থেকে ইতিহাস জেনে নিন বিস্তারিত

পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের রিপোর্ট থেকেও এটা পরিষ্কার যে, দেশের উন্নতির পথে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি জনিত সমস্থা একটি বড় বাধা ৷ এই বিষয়টিকে মান্যতা দিয়ে, নীতি আয়োগও বলেছে পর্যাপ্ত মাতৃদুগ্ধ পান শিশুদের বেড়ে ওঠাকে 60 শতাংশ পর্যন্ত তরান্বিত করতে পারে ৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন যিনি নিজেই রক্তাল্পতা জনিত সমস্যায় ভুগছেন তিনি কীভাবে তাঁর সন্তানকে পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রদান করবেন ? যেসব দেশ এই সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে সেগুলির সমাধানে পদক্ষেপ করেছে, তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে ৷ এক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হল নেপাল ৷ পর্যাপ্ত পুষ্টি পরিকল্পনা ও মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ছোট দেশটি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি করেছে ৷ এই তালিকায় রয়েছে ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশও ৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা উদাহরণযোগ্য ৷ মাত্র 25 বছর আগেও শিশুদের অপর্যাপ্ত ওজনজনিত সমস্যা নিয়ে জেরবার ছিল এই দেশটি ৷ কিন্তু, পরিচ্ছন্নতা, অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে এক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে সফল হয়েছে বাংলাদেশ সরকার ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে এই ছবিটি উদ্বেগজনক ৷

ভারতের 18.7 শতাংশ শিশুর ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম, কম তাদের উচ্চতাও, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য যথেষ্ট উদ্বেগের ৷ ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (NFHS) এই সমস্যার ব্যাপকতা অনুধাবন করেছে ৷ 19.3 শতাংশ ছেলে-মেয়ে এই সমস্যার শিকার ৷ এছাড়াও, সঠিকভাবে বিকাশ না হওয়া এই দেশের 35 শতাংশ শিশু অপুষ্টির পরিণাম ভোগ করছে ৷ দেশে প্রায় 14 লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলির কাজ হল প্রায় 10 লক্ষ বাচ্চা ও মায়েদের কাছে পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দেওয়া ৷ যদিও এই উদ্যোগও সঠিক পরিকাঠামো, কর্মীর অপ্রতুলতা ও নজরদারির অভাবে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না ৷ এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি কথা প্রযোজ্য, নতুন ভারত নির্মাণ করা তখনই সম্ভব হবে যখন দেশের সম মানুষ পর্যাপ্ত পুষ্টি ও আহার পাবেন ৷ তাই সরকারের উচিত এই লক্ষ্যে পদক্ষেপ করার ৷ খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি কোনওরূপ ভেদাভেদ ছাড়াই লাগু করা উচিত ৷ দেশর আগামী নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত না করলে ধেশের ভবিষ্যত যে উজ্জ্বল হবে না, এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details