হায়দরাবাদ, 7 সেপ্টেম্বর: ইন্ডিয়া না ভারত ? এটাই এখন নানা মহলের আলোচ্য বিষয় ৷ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নামসম্বলিত জি20 নৈশভোজের আমন্ত্রণে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’ হিসাবে উল্লেখ করা আসিয়ানের (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সংগঠন) সরকারী নোট যাবতীয় জল্পনার সূত্রপাত করেছে ৷
এই অবস্থায়, একটি মতামত ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে যে ব্রিটিশরা দেশটির নামকরণ করেছিল 'ইন্ডিয়া' ৷ নামটি একটি ঔপনিবেশিক দলিল । সত্যিই কি তাই ? 'ইন্ডিয়া' নাম নিয়ে নেতিবাচক প্রচারের মধ্যে, ইতিহাসে চোখ বুলিয়ে নেওয়া প্রয়োজন । সিন্ধু সভ্যতা বিশ্বের তিনটি প্রাচীনতম সভ্যতার একটি । ইতিহাস বলছে, ‘ইন্ডিয়া’ নামের শিকড় সেই সভ্যতার মধ্যে নিহিত যা যিশু খ্রিস্টের জন্মের 3,000 বছর আগে বিকাশ লাভ করেছিল ।
ইতিহাস কী বলছে ?
যেহেতু ‘স’ ধ্বনি দিয়ে শুরু হওয়া শব্দগুলি তাদের ভাষায় বিরল, প্রাচীন পারসিকরা সিন্ধু নদীকে হিন্দ হিসাবে উচ্চারণ করত । গ্রিকরা একে ‘ইন্দাস’ উচ্চারণ করত । খ্রিস্টপূর্ব 440 নাগাদ, গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস সিন্ধুপাড়কে 'হে হিন্দিকে ছোরে' অর্থাৎ সিন্ধুভূমি বলে অভিহিত করেছেন । গ্রিক পরিব্রাজক মেগাস্থিনিস, 300 খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাঁর কাজকে 'ইন্ডিকা' হিসাবে শিরোনামাঙ্কিত করেন । সে সময় ব্রিটেন বলে কিছুর অস্তিত্ব ছিল না । 1707 খ্রিস্টাব্দে ‘ট্রিটি অফ ইউনিয়ন’-এর পর ‘ব্রিটিশ’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।
ফলে ইতিহাস তলিয়ে দেখলে ইন্ডিয়া নামকরণের কৃতিত্ব ব্রিটিশদের কোনওভাবেই দেওয়া যায় না ৷ ভারতে ইংরেজদের রাজত্ব শুরুর আগে অন্তত 2,000 বছর ধরে এই ভূমি ‘ইন্ডিয়া’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ছিল । দেশ হিসেবে ভারতের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে । ইন্ডিয়া নামটি সিন্ধু সভ্যতার গভীরে নিহিত ৷ এটি 140 কোটি মানুষের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের প্রতীক।
'ভারত' শব্দটি যেভাবে ‘আ সেথু হিমাচলমের’ সঙ্গে যুক্ত তা বেশ আকর্ষণীয় । ভারত শব্দটি ঋগবেদীয় যুগে ব্যবহৃত হত । দশজন রাজার ঋগবেদীয় যুদ্ধে বিজয়ী রাজা সুদাস ছিলেন ভরত বংশের । ভরতদের সঙ্গে সেই সময়ে পুরু, যদু, তুর্বাস প্রভৃতি গোষ্ঠীও উপস্থিত ছিল । ‘ভারত ভূমি’ এবং ‘ভারতবর্ষ’র মতো শব্দগুলি মহাভারত এবং বিষ্ণু পুরাণে একটি অঞ্চল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল । ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরের কাছে পাওয়া জনপ্রিয় হাতি গুম্ফা শিলালিপিতেও 'ভারতবর্ষ' শব্দটির ব্যবহার রয়েছে ।
আরও পড়ুন: 'সংবিধান বলছে যা ইন্ডিয়া, তাই ভারত', মন্তব্য বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের
প্রাচীন কলিঙ্গ রাজা খারভেলের নামে খোদাই করা শিলালিপিতে বলা হয়েছে, খারভেলা 'ভারতবর্ষ' দখল করতে তার বাহিনী পাঠিয়েছিলেন । সেই শিলালিপি অনুযায়ী, 'ভারতবর্ষ' ছিল গাঙ্গেয় সমভূমিকে ঘিরে থাকা ভৌগলিক এলাকা । একইভাবে, 'ভারতবর্ষ' শব্দটি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রীষ্টাব্দের প্রথম শতাব্দীর মধ্যে কোথাও খারাভেলার মাধ্যমে যুগে প্রবেশ করে ।
তার অনেক আগেই গ্রীক ঐতিহাসিকদের রচনার মাধ্যমে 'ইন্ডিয়া' নামটি অন্যান্য দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । জওহরলাল নেহরু তাঁর ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’তে লিখেছেন, ‘‘আমি আমার শ্রোতাদের সঙ্গে আমাদের এই ভারত, হিন্দুস্তান এবং ভারত সম্পর্কে কথা বলতাম ৷ জাতিটির পৌরাণিক প্রতিষ্ঠাতা থেকে প্রাপ্ত সংস্কৃত নাম ।’’ তিনি তাঁর রচনায় দেশের তিনটি নামই উল্লেখ করেছেন ভারত, হিন্দুস্তান এবং ভারত । সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, “ইন্ডিয়া, অর্থাৎ ভারত...” । ফলে ইন্ডিয়া নাম নিয়ে শাসকদলের কোনও আপত্তি থাকলে ভারত নামটি ব্যবহার করতেই পারে । এতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় । কিন্তু কেন্দ্র যদি সম্পূর্ণভাবে নামটি মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় ।
(সেপ্টেম্বর 7, এনাডু’তে প্রকাশিত সম্পাদকীয়’র অনুবাদ)