1962 সালে একজন তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভারতের তৃতীয় লোকসভা নির্বাচনে আমার প্রথম অংশগ্রহণ, তার পর 1967-এ, তখন কালেক্টর ছিলাম ৷ এর পরে 1984 সাল থেকে একজন নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে বিধানসভা আর লোকসভা, দুটো নির্বাচনেই সরাসরি যুক্ত হই ৷ দেশে ভোট জালিয়াতি, হিংসাত্মক ঘটনার জন্য বিখ্যাত বিহার আর ঝাড়খণ্ড, এই দুই রাজ্য থেকে আমার সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট পরিচালনা ৷
বিগত দশ বছর ধরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় রয়েছেন ৷ এটা তো স্বাভাবিক যে, তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার জন্য তিনি রাজ্যবাসীর সমর্থন চাইবেন ৷ বাম আর কংগ্রেস দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজেপিকে জায়গা করে দিয়েছে, আজ তারাই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ গত নির্বাচনে তারা মাত্র তিনটে আসন পেয়েছিল, কিন্তু মাঝের পাঁচটা বছরে তারা তাদের বিশাল টাকা আর গায়ের জোর কাজে লাগিয়ে (অথবা অপব্যবহার) করে বাংলায় আসল বিরোধী দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ৷ আর সবক্ষেত্রে যেমন হয়, তারা এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনটাকে একটা যুদ্ধে রূপান্তরিত করেছে ৷ ভারতে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব ইলেকশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার, যার অবস্থান নিরপেক্ষ হওয়া উচিত ৷ নির্বাচন কমিশনের এই শর্ত বিঘ্নিত হলে কোনো ভাবেই আর নির্বাচন মুক্ত, স্বচ্ছ আর নিরপেক্ষ হবে না ৷ দুর্ভাগ্যবশত, অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থাগুলির মতো আজ কমিশনও তার সক্রিয়তা হারিয়েছে ৷ সংবিধানে কমিশনের যে গুরুত্ব, তা আজ আর নেই ৷ 24 ঘণ্টার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার মতো নির্বোধ পদক্ষেপের পর তো এই সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷
কমিশনের ইতিহাসে একটা নজিরবিহীন ঘটনা ৷ তিনি তাঁর উচ্চারিত শব্দ, কথার জন্য শাস্তি পেয়েছেন ৷ আমি সে নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলছি না ৷ প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তার থেকে তৃণমূলনেত্রীর কথা অনেক কম প্ররোচনামূলক ৷ আমি এ বিষয়ে সচেতন যে, কোনো সম্প্রদায়, জাত, ধর্ম অথবা অঞ্চলের নাম করে ভোট চাওয়া উচিত নয় ৷ কিন্তু ভোটের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী বাংলাদেশে গিয়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মন্দির, দেবতা দেখে ভারতে ফিরে আসেন ৷ এখানে সেই সম্প্রদায়ের মানুষকে খোলাখুলি বাংলাদেশে তার শোষণের কথা বলেন ? তিনিও কি খোলাখুলি আর নির্লজ্জ ভাবে জাতপাতের ভিত্তিতেই তাদের কাছ থেকে ভোট চাইছেন না ? বিজেপির ভোটের মিছিলে 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দিয়ে মানুষের ধর্মীয় আবেগকে প্রভাবিত করা হয় না ? সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহিত করার জন্যই প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোলাখুলি তৃণমূলের লোকজনকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন ৷ এ ভাবে নির্দেশ দিয়ে তাঁরা বেশির ভাগ মানুষের কাছ থেকে ভোট চাইছেন না ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ অন্য সব বিজেপি নেতাদের রোড-শোতে বহু মানুষ হিন্দু দেব-দেবী সাজেন ৷ সেখানে কি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের নামে ভোট চাওয়া হচ্ছে না ? নাকি, এই মানুষগুলো এতটাই শক্তিশালী যে নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না ?
আরও পড়ুন: পঞ্চম দফায় 20% প্রার্থী কোটিপতি, কোন দলের সম্পদ বেশি ?