নয়াদিল্লি, 21 সেপ্টেম্বর: নারী শক্তি বন্ধন অধিনিয়ম 2023 বা মহিলাদের আসন সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিল বুধবার পাশ হয়েছে লোকসভায় ৷ বৃহস্পতিবার এই বিল পেশ হল রাজ্যসভায় ৷ তার পর এই বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সংসদের উচ্চকক্ষে ৷ মনে করা হচ্ছে যে এ দিনই আলোচনা শেষে এই বিল রাজ্যসভায় পাশ করানো হবে ৷
1996 সালে প্রথমবার এই বিল নিয়ে আসা হয় ৷ তার পর একাধিকবার সংসদের দুই কক্ষে এই বিল পেশ হলেও, তা পাশ করিয়ে কার্যকর করা যায়নি ৷ তাই দীর্ঘদিন ধরে আইনসভায় লিঙ্গসাম্য তৈরিতে এই বিল পাশ করানোর দাবি বারবার উঠেছে ৷ গত মঙ্গলবার এই বিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে লোকসভায় পেশ করা হয় ৷ ওই দিন সংসদের নতুন ভবনে প্রথমবার অধিবেশন বসে ৷ সেই অধিবেশনে প্রথম বিল হিসেবে এটাকে পেশ করা হয় ৷
সোমবার থেকে শুরু হওয়া সংসদের বিশেষ অধিবেশনের তৃতীয় দিন লোকসভায় এই বিল নিয়ে আলোচনা হয় ৷ শেষে ভোটাভুটিতে এই বিল পাশ হয় ৷ বিলের পক্ষে ভোট দেন 454 জন ৷ আর বিপক্ষে ভোট দেন 2 জন সাংসদ ৷ এবার রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হলেই তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকবে না ৷
রাজ্যসভায় এই বিলের উপর সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতেই বলেন সাংসদ তথা বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ৷ এছাড়াও এই বিলের পক্ষে সংসদের উচ্চকক্ষে বলবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ৷ এছাড়াও বিজেপির পক্ষ থেকে আরও 13 জন মহিলা সাংসদ ও মন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন এই বিল নিয়ে আলোচনায় ৷ এঁদের মধ্যে তিনজন ওবিসি সম্প্রদায়ের এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায় থেকে দু’জন করে মহিলা সাংসদ থাকবেন ৷
আরও পড়ুন:লোকসভায় পাশ হল মহিলা সংরক্ষণ বিল, বিপক্ষে ভোট পড়ল মাত্র 2টি
যদিও লোকসভায় বিলটি পাশ হওয়া একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ৷ তবে এর বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে ৷ বিলে বলা হয়েছে যে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ শুধুমাত্র ডিলিমিটেশনের পরই কার্যকর করা হবে ৷ 2027 সালে এই আসন পুনর্বিন্যাস হওয়ার কথা ৷ তার আগে জনগণনা হবে ৷
সেই জনগণনার উপর ভিত্তি করে ডিলিমিটেশন হবে ৷ সেই আসন পুনর্বিন্যাসের উপর নির্ভর করে মহিলাদের আসন সংরক্ষণের বিষয়টি নির্ধারিত হবে ৷ ফলে 2029 সালের আগে এই বিলের কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম ৷ তাছাড়া ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের আওতার বাইরে থাকার বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছে ৷ লোকসভার আলোচনায় এই বিষয়টি তুলে ধরা হয় ৷ রাজ্যসভাতেও বিরোধীরা সেই বিষয়ে বিরোধীরা সরব হবেন বলে মনে করা হচ্ছে ৷
কংগ্রেসের সংসদীয় দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধি বুধবার লোকসভায় বলেন, "গত 13 বছর ধরে ভারতীয় মহিলারা তাঁদের রাজনৈতিক দায়িত্বের জন্য অপেক্ষা করছেন, এবং এখন তাঁদের আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে - দুই বছর, চার বছর, ছয় বছর, আট বছর ।" অন্যদিকে রাহুল গান্ধিও প্রশ্ন তোলেন এই বিল কার্যকর করার সময়সীমা নিয়ে ৷
যদিও বুধবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন যে 2024 সালের লোকসভা ভোট মিটলে জনগণনা হবে ৷ তার পর আসন পুনর্বিন্যাস হবে ৷ তাই এই নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি না করার জন্য বিরোধীদের কাছে আর্জি জানান তিনি ৷
আরও পড়ুন:বিজেপি ও মোদি নীতিগতভাবে নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে, লোকসভায় বললেন অমিত শাহ
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিল পাশ হওয়ার পর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, "নারী শক্তি বন্ধন অধিনিয়ম একটি ঐতিহাসিক আইন, যা নারীর ক্ষমতায়নকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মহিলাদের আরও বেশি অংশগ্রহণ করতে সক্ষম করবে ৷" বিল পাশ করানোর জন্য তিনি সাংসদদের ধন্যবাদও জানান ৷