জে এম মুরার, জে এম শ্যাফার, এস রুপার এবং এ কার্লির নামে কয়েকজন গবেষক হিমালয়ের হিমবাহগুলি নিয়ে গবেষণা করেন । তাতে দেখা গিয়েছে যে 2000 সাল থেকে 2016 সালের এই সময়কালে হিমালয়ের হিমবাহগুলি থেকে বরফ ভাঙার ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে । এই গবেষকরা এসেছিলেন লামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরি ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রেনমেন্টাল সায়েন্স থেকে । উভয়ই কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সঙ্গে যুক্ত । এই গবেষকরা 1975 সাল থেকে 2000 সাল এবং 2000 সাল থেকে 2016 সালের মধ্যে বরফ ভাঙার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন । তাঁদের অনুসন্ধান হিমালয় ও উপ-হিমালয় এলাকার জন্য একটি সতর্কবার্তা তৈরি করেছিল । গবেষণায় এর জন্য একাধিক কারণ উঠে এসেছিল । সেগুলি হল - বায়ুমণ্ডলীয় উষ্ণায়নের মতো পরিবেশগত ভাবে ধ্বংসাত্মক ঘটনা, তুষার এবং বরফের উপর অ্যানথ্রোপোজেনিক ব্ল্যাক কার্বন জমা হওয়া এবং অবিরাম বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের কারণে আলবেডো প্রভাব ।
এই গবেষণাটি নিখুঁতভাবে পরিবেশগত কারণগুলির ভিত্তিতে করা হয়েছিল । এই কারণগুলির ফলে বরফ ভাঙার পরিমাণ বৃদ্ধি করে । অন্যান্য বহু গবেষণায় দূষণের অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক উৎসগুলির প্রভাবকে সমন্বিত করে, হিমালয় পর্বতের অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং পর্যটন সম্পর্কিত উন্নয়নমূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করেছিল যে ভয়ঙ্কর কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । ঠিক যেমন সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে ঘটেছে ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে অমরনাথ যাত্রা, বদ্রীনাথ এবং কেদারনাথ যাত্রা, কৈলাস মানসারোবর যাত্রা এবং চারধাম যাত্রার মতো ধর্মীয় পর্যটনে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এই পার্বত্য অঞ্চলে যান । পর্যটন সংক্রান্ত পরিকাঠামো এই পর্যটকদের কোনও রকম কঠোর বিধিনিষেধ ছাড়াই উপরে উঠতে সাহায্য করে । অনিয়ন্ত্রিত মোটর চালিত যানবাহন চলাচল এলাকার দূষণকে বাড়িয়ে তোলে এবং এই ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রে মানুষের দ্বারা তৈরি হওয়া দূষণও একটা ভূমিকা পালন করে । যখন অর্থনৈতিক কারণের জন্য উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তখন বনভূমি নিধন অবধারিত ভাবে শুরু হয়ে যায় । পর্যটনের সুবিধার জন্য এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য হিমালয়ের রাজ্যগুলিতে বেশ কয়েক বর্গ কিলোমিটার স্থায়ী বন পরিষ্কার করা হয়েছে । এই বনগুলিতে কার্বন প্রাকৃতিক ভাবে জমা হত এবং বন কেটে ফেলার জন্য এই ব্ল্যাক কার্বন হিমবাহের বরফে জমা হওয়া শুরু হয়েছে ।
অস্থির প্রোগ্লেসিয়াল হ্রদ সম্প্রসারণের ফলে বরফ ভাঙার ঘটনা বেড়ে যেতে থাকায় বন্যার ঝুঁকি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । উত্তরাখণ্ডের ভয়ঙ্কর ঘটনার পিছনে এটাই অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে । বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন যখন পরিবেশগত ভাবে ভঙ্গুর অঞ্চলগুলির ক্ষতি করছে, তখন মানুষের দ্বারা অবৈজ্ঞানিক উন্নয়নের কাজ বিষয়টিকে আরও ধ্বংসাত্মক করে তুলছে । গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে হিমালয়ের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা 1945 সাল থেকে 2000 সালের তুলনায় 2000 সাল থেকে 2016 সালের মধ্যে 0.4 ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে 1.4 ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে । এই উষ্ণতর তাপমাত্রার জন্যই তুষার আরও দ্রুত পাতলা হয়ে যাচ্ছে ।
এখানে দেশকে এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশগত ভাবে ভঙ্গুর হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল (এইচএমএ) - কে রক্ষা করার জন্য । আর এই নিয়ে একটি পরিকল্পনাও তৈরি করতে হবে । কারণ, এই অঞ্চল হিমালয় ও উপ-হিমালয় এলাকার জীবন ও জলবায়ুর বৃহত্তম প্রাকৃতিক সম্পদ । সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের হাইড্রোলজি হিমালয়ের হিমবাহের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে । যদিও ভারত সরকার একটি সুরক্ষিত হিমালয় প্রকল্প চালু করেছে, তবুও এই অঞ্চলের মানুষের জীবন এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বাস্তবতার ভিত্তিতে টেকসই বিকাশকে রক্ষা করার জন্য খুবই কম কাজ করা হয়েছে ।
এতে কোনও রকম সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করতে হবে এবং যত্ন নিতে হবে । একটি টেকসই পর্যটন যা পরিবেশ বান্ধব হবে, কৃষি হবে জৈব পদ্ধতিতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পুনর্নবীকরণ এবং বন বৃদ্ধির প্রকল্পই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে এই সংবেদনশীল অঞ্চলটিকে সুরক্ষিত করা যায় । আর স্থানীয়দের কাছে মূল উপকারক হিসাবে সম্পদের মনিটাইজেশনের বিষয়টির যত্ন নিতে হবে ।