তৃতীয় চন্দ্রযানের সফ্ট ল্যান্ডিং কীভাবে ? ব্যাখ্যা করলেন ইসরোর প্রাক্তন বিজ্ঞানী মনীষ ভিলওয়ারা (রাজস্থান), 22 অগস্ট: চাঁদের মাটিতে নামবে তৃতীয় চন্দ্রযান ৷ দেশবাসীর নজর এখন চাঁদের দিকেই ৷ বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে 'সফ্ট ল্যান্ডিং' করবে চন্দ্রযান ৷ এই প্রথম কোনও দেশ চাঁদের এই মেরুতে মহাকাশযান পাঠিয়েছে ৷ তবে চ্যালেঞ্জটা কোনও ঝাঁকুনি ছাড়া হালকাভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ ৷ এই ল্যান্ডিংয়ে সফল হলে বিশ্বের মহাজাগতিক ক্ষেত্রে ইতিহাস তৈরি করবে ভারত ৷ চন্দ্রযানের এই সফ্ট ল্যান্ডিংয়ের প্রক্রিয়াটি ইসরোর প্রাক্তন বিজ্ঞানী মনীষ পুরোহিত ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করে বোঝালেন ৷
তিনি দ্বিতীয় চন্দ্রযান এবং মঙ্গলযান প্রজেক্টে ইসরোর বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেছেন ৷ মনীষ বলেন, "ভারতীয় মহাকাশযান তৃতীয় চন্দ্রযান চাঁদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে ৷ এবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফ্ট ল্যান্ডিং করবে ৷ এটি সফল হলে ভারতই প্রথম দেশ হবে ৷ আমাদের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত ৷ এই মিশন ভারতকে দুনিয়ার কাছে আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরবে ৷"
আরও পড়ুন: চাঁদের মাটি ছোঁয়ার অপেক্ষায় চন্দ্রযান, অভিযানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলেন ইসরো বিজ্ঞানী
চন্দ্রপৃষ্ঠে কীভাবে অবতরণ করবে চন্দ্রযান 3 ?
মনীষ পুরোহিত ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির কাছে সেই পদ্ধতিটির ব্যাখ্যা করলেন ৷ চারটি ধাপে চাঁদের মাটিতে সফ্ট ল্যান্ডিং করবে তৃতীয় চন্দ্রযান ৷
'পাওয়ার ডিসেন্ট' বা শক্তি হ্রাসের শুরু- 23 অগস্ট চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে তৃতীয় চন্দ্রযানের দূরত্ব মাত্র 25 কিমি হবে ৷ সেই সময় 'পাওয়ার ডিসেন্ট' বা শক্তি ক্ষয় প্রক্রিয়া আরম্ভ হবে ৷ ল্যান্ডার বিক্রমের চারটি ইঞ্জিন গতি কমাবে ৷ এতে বিক্রমের অবস্থানেরও পরিবর্তন হবে ৷
সফ্ট ল্যান্ডিংয়ে ক্যামেরাগুলির ভূমিকা- ল্যান্ডার বিক্রম উল্লম্ব অবস্থায় থেকে ল্যান্ডিংয়ের জায়গার ছবি পাঠাবে ৷ সেন্সরগুলি চাঁদের মাটি থেকে ল্যান্ডারের উচ্চতা পরিমাপ করবে ৷ এরপরই তৃতীয় চন্দ্রযানের সফ্ট ল্যান্ডিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷ তারপর তৃতীয় চন্দ্রযানের অবতরণের প্রক্রিয়াটি শুরু হবে ৷ পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় 17 মিনিট সময় লাগবে ৷
অবতরণের ধাপ এবং ছবি- তিনটি ধাপে চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে নামবে ৷ প্রথম, ল্যান্ডার বিক্রমের গতিবেগ এক চতুর্থাংশ হয়ে যাবে ৷ দ্বিতীয়, ল্যান্ডারটি চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি পাঠাবে ৷ তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে ল্যান্ডারের গতি শূন্য করা হবে ৷ এটি চাঁদের মাটি থেকে 800 মিটার উপরে ভাসমান অবস্থায় থেকে অবতরণের জায়গার হিসেবনিকেশ কষবে ৷ এইভাবে ল্যান্ডারটি যখন 150 মিটার উচ্চতায় থাকবে, তখন পরিষ্কার দেখা যাবে ল্যান্ডিংয়ের জায়গাটিতে কোনও গর্ত, পাথর আছে কি না ৷ যদি এসব না থাকে তাহলে সেখানে হালকা অবতরণ অর্থাৎ সফ্ট ল্যান্ডিং করবে তৃতীয় চন্দ্রযান ৷
আরও পড়ুন: চন্দ্রযানের অবতরণ দেখবে পড়ুয়ারা, যোগীরাজ্যে সন্ধ্যাতেও স্কুল খোলা রাখার নির্দেশ
দ্বিতীয় চন্দ্রযানের সফ্ট ল্যান্ডিং নিয়ে কী বলছেন মনীষ ?
মনীষ বলেন, "দ্বিতীয় চন্দ্রযান সফ্ট ল্যান্ডিং করতে ব্যর্থ হয়েছিল ৷ সেই ঘটনা থেকে আমরা আমাদের ভুলগুলি জানতে পেরেছি ৷ এবার 100 শতাংশ নিশ্চিত যে, চাঁদের মাটিতে সফ্ট ল্যান্ডিং হবেই ৷ এবার ল্যান্ডার বিক্রম আরও শক্তিশালী ৷ তৃতীয় চন্দ্রযানের খুব ছোটখাটো খুঁটিনাটি বিষয়গুলিতেও প্রচুর পরিশ্রম করা হয়েছে ৷ তাই ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ এতটা আশাবাদী ৷"