পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

Independence Special : ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে লড়েছিলেন রামগড়ের রানি অবন্তী বাঈ

বাবা-মা নাম রেখেছিলেন অন্ত বাঈ ৷ কম বয়সেই তরোয়াল চালনা, তীরধনুক ছোড়া, সামরিক কৌশল, কূটনীতি এবং রাজ্যের শাসনকাজ পরিচালন পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধহস্ত ছিলেন ৷ 1848 সালে রামগড়ের রাজ পরিবারে বিয়ে হয় তাঁর ৷ সেখানে তাঁর নতুন পরিচয় হয় অবন্তী বাঈ নামে ৷

Forgotten heroes
Forgotten heroes

By

Published : Aug 22, 2021, 6:04 AM IST

রামগড়, 22 অগস্ট : আমরা সকলেই রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের গল্প শুনেছি ৷ ঝাঁসির রানি 1857 সালে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু ভারতের ইতিহাসে এমন আরও অনেক চরিত্র আছে যাঁদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমান অবদান রয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে একজন হলেন এক রানি যিনি তরোয়াল হাতে তুলে নিয়েছিলেন, নিজের রাজত্বকে পরাধীনতার হাত থেকে বাঁচাতে ইংরেজ সৈন্যদের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিলেন ৷

1947 সালে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর বীজ বপন হয়েছিল তার থেকেও নয় দশক আগে ৷ সেটা হল 1857 সালে ৷ এর নেপথ্যে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বর্তমান মধ্যপ্রদেশের রামগড়ের রানি অবন্তী বাঈ ৷ যদিও তাঁর বিপ্লবকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশরা তবুও তাঁর লড়াই একটি বার্তা দিতে পেরেছিল ৷ তা হল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেও সূর্য অস্ত যেতে পারে ৷

যুদ্ধের কলাকৌশলে দক্ষ অবন্তী বাঈ ব্রিটিশ সেনাদের হারিয়ে দিয়েছিলেন

1831 সালের 16 অগস্ট অবন্তী বাঈয়ের জন্ম ৷ সিওনি জেলার মানকেহাদি গ্রামের মালিক রাও জুঝর সিংয়ের মেয়ে তিনি ৷ তাঁর বাবা-মা নাম রেখেছিলেন অন্ত বাঈ ৷ কম বয়সেই তরোয়াল চালনা, তীরধনুক ছোড়া, সামরিক কৌশল, কূটনীতি এবংং রাজ্যের শাসনকাজ পরিচালন পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধহস্ত ছিলেন ৷ 1848সালে রামগড়ের রাজ পরিবারে বিয়ে হয় তাঁর ৷ সেখানে তাঁর পরিচয় হয় অবন্তী বাঈ নামে ৷

1851 সালে রামগড়ের রাজা এবং অবন্তী বাঈয়ের শ্বশুর লক্ষ্মণ সিংয়ের মৃত্যু হয় ৷ এরপর রামগড়ের রাজ সিংহাসনে বসেন প্রিন্স বিক্রমাদিত্য সিং ৷ কিন্তু কয়েকবছরের মধ্যেই নতুন রাজা অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ তাঁর দুই ছেলে অমন সিং এবং শের সিং তখনও ছোটো ৷ এই অবস্থায় রাজত্বের ভার নিজের হাতে তুলে নেন রানি ৷ কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির অন্য পরিকল্পনা ছিল ৷ কুখ্যাত স্বত্ববিলোপ নীতির মাধ্যমে রামগড়কে নিজেদের কব্জায় নিয়ে এসেছিল ব্রিটিশরা ৷ এই নীতি তৈরি করেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ৷ এই নীতি অনুসারে কোনও দেশীয় অধিরাজ্যের রাজা যদি অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তবে সেই রাজ্য সামন্ত রাজ্য হিসেবে ব্রিটিশ ভারতের অধীনস্থ হবে এবং দেশীয় রাজ্যের মর্যাদা হারাবে ।

বীরাঙ্গনা রানি অবন্তী বাঈ

আরও পড়ুন : Independence Special : আজও শহিদ ক্ষুদিরামের স্মৃতিতে বুঁদ মুজফ্ফরপুর

বিক্রমাদিত্য সিং লোধির দুই ছেলে তখন খুবই ছোটো ৷ সেই সুযোগে রামগড় দখল করার সুযোগ পেয়ে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি ৷ অবন্তি বাঈকে শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে ব্রিটিশরা ৷ এবং কুখ্যাত স্বত্ববিলোপ নীতি জারি করে রামগড় নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয় তারা ৷ এই সিদ্ধান্তে অপমানিত এবং ক্ষুব্ধ অবন্তী বাঈ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ৷

ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি প্রথমবার যুদ্ধ করেছিলেন খেরী গ্রামে ৷ যুদ্ধের কলাকৌশল সম্পর্কে দক্ষ অবন্তী বাঈ ব্রিটিশ সেনাদের হারিয়ে দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু খুব শীঘ্রই মান্ডালার ডেপুটি কমিশনার ওয়েডিংটনের সাহায্যে বড় সংখ্যায় সৈন্য নিয়ে রামগড় দুর্গের উপর আক্রমণ করে ব্রিটিশরা ৷ রানি ও তাঁর সৈন্যরা সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করলেও দেবারিগড় পাহাড়ের গভীর জঙ্গলের পালাতে বাধ্য হয় ৷ ব্রিটিশদের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত ও অবরুদ্ধ হলেও অবন্তী বাঈ হাল ছাড়েননি ৷ জেনেরাল ওয়েডিংটনের ক্যাম্পে গেরিলা আক্রমণ করেন তিনি ৷ কিন্তু শক্তিশালী ব্রিটিশ সেনার কাছে তাঁর ছোটো সেনার দলের তুলনাই হয় না ৷ জঙ্গলে শেষবারের মতো যুদ্ধ হয় ৷ রানি এবং তাঁর সেনাদের ঘিরে ফেলে ব্রিটিশরা ৷

শুনুন রানি অবন্তী বাঈয়ের কাহিনি

শত্রুপক্ষের কাছে যেকোনও সময় ধরা পড়ে যেতে পারেন এটা জেনেও আত্মসমর্পণ করতে চাননি সাহসী রানি অবন্তী বাঈ ৷ 1858 সালে 20 মার্চ শেষবারের মতো তরোয়াল হাতে তোলেন রানি ৷ নিজের তলোয়ার দিয়ে আত্মবলিদান দেন অবন্তী বাঈ লোধি ৷ নিজের শর্তে জীবন শেষ করে দেন ৷ নিজের শর্তে মৃত্যুবরণ করেন ৷ যুদ্ধক্ষেত্রে হেরে গেলেও স্বাধীনতার লক্ষ্যে অবন্তী বাঈ যে মশাল জ্বালিয়েছিলেন তা নিভে যায়নি ৷

আরও পড়ুন :Netaji Subhas Chandra Bose : নজরবন্দি হয়েও অপ্রতিরোধ্য নেতাজি, গোপন চিঠি পাঠাতেন পাউরুটির স্লাইসে

ABOUT THE AUTHOR

...view details