রামগড়, 22 অগস্ট : আমরা সকলেই রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের গল্প শুনেছি ৷ ঝাঁসির রানি 1857 সালে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু ভারতের ইতিহাসে এমন আরও অনেক চরিত্র আছে যাঁদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমান অবদান রয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে একজন হলেন এক রানি যিনি তরোয়াল হাতে তুলে নিয়েছিলেন, নিজের রাজত্বকে পরাধীনতার হাত থেকে বাঁচাতে ইংরেজ সৈন্যদের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিলেন ৷
1947 সালে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর বীজ বপন হয়েছিল তার থেকেও নয় দশক আগে ৷ সেটা হল 1857 সালে ৷ এর নেপথ্যে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বর্তমান মধ্যপ্রদেশের রামগড়ের রানি অবন্তী বাঈ ৷ যদিও তাঁর বিপ্লবকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশরা তবুও তাঁর লড়াই একটি বার্তা দিতে পেরেছিল ৷ তা হল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেও সূর্য অস্ত যেতে পারে ৷
1831 সালের 16 অগস্ট অবন্তী বাঈয়ের জন্ম ৷ সিওনি জেলার মানকেহাদি গ্রামের মালিক রাও জুঝর সিংয়ের মেয়ে তিনি ৷ তাঁর বাবা-মা নাম রেখেছিলেন অন্ত বাঈ ৷ কম বয়সেই তরোয়াল চালনা, তীরধনুক ছোড়া, সামরিক কৌশল, কূটনীতি এবংং রাজ্যের শাসনকাজ পরিচালন পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধহস্ত ছিলেন ৷ 1848সালে রামগড়ের রাজ পরিবারে বিয়ে হয় তাঁর ৷ সেখানে তাঁর পরিচয় হয় অবন্তী বাঈ নামে ৷
1851 সালে রামগড়ের রাজা এবং অবন্তী বাঈয়ের শ্বশুর লক্ষ্মণ সিংয়ের মৃত্যু হয় ৷ এরপর রামগড়ের রাজ সিংহাসনে বসেন প্রিন্স বিক্রমাদিত্য সিং ৷ কিন্তু কয়েকবছরের মধ্যেই নতুন রাজা অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ তাঁর দুই ছেলে অমন সিং এবং শের সিং তখনও ছোটো ৷ এই অবস্থায় রাজত্বের ভার নিজের হাতে তুলে নেন রানি ৷ কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির অন্য পরিকল্পনা ছিল ৷ কুখ্যাত স্বত্ববিলোপ নীতির মাধ্যমে রামগড়কে নিজেদের কব্জায় নিয়ে এসেছিল ব্রিটিশরা ৷ এই নীতি তৈরি করেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ৷ এই নীতি অনুসারে কোনও দেশীয় অধিরাজ্যের রাজা যদি অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তবে সেই রাজ্য সামন্ত রাজ্য হিসেবে ব্রিটিশ ভারতের অধীনস্থ হবে এবং দেশীয় রাজ্যের মর্যাদা হারাবে ।