পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

আগল ভেঙে পথের দিশারী কাদম্বিনী

পরিবর্তন চলছিল সে যুগেও ৷ ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা ৷ ব্রাহ্ম সমাজ সংস্কারকদের স্বাধীন, কুসংস্কারমুক্ত চিন্তাভাবনায় বদলাচ্ছিল সমাজ, মেয়েদের জীবন ৷ তেমনই একটা সময়ে নিজেকে রীতিমতো পেশাদার মহিলা চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তবে এক্ষেত্রে তাঁর উত্থানের পিছনে ছিলেন তাঁর স্বামী ব্রাহ্ম সমাজসংস্কারক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় ৷

By

Published : Jul 18, 2021, 11:49 AM IST

Updated : Jul 18, 2021, 12:57 PM IST

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়
কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা, 18 জুলাই : সময়টা উনিশ শতক ৷ একজন মহিলা চিকিৎসক চেম্বার খুলে রোগী দেখছেন, অস্ত্রোপচার করছেন, রাতের অন্ধকারে ফিটন গাড়িতে চেপে রোগীর বাড়ি যাচ্ছেন ৷ এ যুগের মহিলাদের চিকিৎসক হওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এমন একটি সময়, যখন মহিলাদের বাড়ির বাইরে পা রাখাটাও চর্চার বিষয় ছিল ৷ আর লেখাপড়া তো কয়েক আলোকবর্ষ দূরে ৷

উনিশ শতক বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণের সময় ৷ দেশের সমাজ সংস্কার, ধর্ম সংস্কার আন্দোলন আর মহিলাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্রাহ্ম সমাজের ভূমিকা শুধুমাত্র উল্লেখযোগ্যই নয়, অবিস্মরণীয় ৷ কাদম্বিনী তেমনই একটি ব্রাহ্ম পরিবারে 1861 সালের 18 জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ৷ তাঁর বাবা ব্রজকিশোর বসু বিহারের ভাগলপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ৷ সেখানে তিনি অভয়চরণ মল্লিকের সঙ্গে একযোগে মহিলাদের সামাজিক অধিকারের পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন, এমনকি স্থাপন করেন ভাগলপুর মহিলা সমিতি ৷ তাই ছোট থেকে সংস্কারমুক্ত স্বাধীন আবহাওয়ায় বেড়ে উঠছিলেন কাদম্বিনী ৷ হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু তাঁর ৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তথা ভারতের প্রথম দু'জন গ্র্যাজুয়েট মহিলা তিনি ও চন্দ্রমুখী বসু ৷ গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ডাক্তারি পড়তে 1883 সালে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ৷ এই সময় তাঁর জীবনে আসেন ব্রাহ্ম সমাজসংস্কারক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ শিক্ষক দ্বারকানাথের অনুপ্রেরণা তাঁকে প্রভাবিত করে ৷ 39 বছরের বিপত্নীক দ্বারকানাথকে বিয়ে করেন 22 বছরের কাদম্বিনী বসু ৷ উল্লেখ্য, দ্বারকানাথের প্রথম স্ত্রীর কন্যা বিধুমুখীর সঙ্গে বিয়ে হয় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ৷

আরও পড়ুন : তিনি ধন্বন্তরী, পশ্চিমবঙ্গের রূপকার; 'পথের পাঁচালী' তৈরির পিছনেও তিনি

1886-তে বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পান "গ্র্যাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ" উপাধি ৷ বিয়ের পর আটটি সন্তানের জন্ম দেন কাদম্বিনী ৷ ব্যতিক্রম এখানেও, যা আজকের যুগেও বিরল ৷ সন্তানদের দেশে রেখে স্বামী দ্বারকানাথের উৎসাহে 1893 সালে বিলেতে গিয়েছিলেন ডাক্তারিতে ডিপ্লোমা করতে, আর একাই গিয়েছিলেন ৷

শুধু ডাক্তারি নয়, সক্রিয় রাজনীতিতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন ৷ 1889-এ কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে ছ'জনের মধ্যে তিনি অন্যতম নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন, কংগ্রেসের প্রথম মহিলা বক্তাও তিনি ৷ পরে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন ৷ কবি কামিনী রায়ের সঙ্গে সেই সময় বিহার ও ওডিশার নারীশ্রমিকদের দুর্দশার তদন্তে গিয়েছিলেন তিনি ৷

সমাজের বিপরীত স্রোতে হাঁটা এই পথিকৃতের জীবন মসৃণ ছিল, এমনটা নয় ৷ সে যুগের বাংলা পত্রিকা "বঙ্গবাসী"তে তাঁর সমালোচনা করা হয় অত্যন্ত খারাপ ভাষায় ৷ তার জবাবে মামলা করে জিতেছিলেন চিকিৎসক কাদম্বিনী ৷ 100 টাকা জরিমানা আর ছ'মাসের জেল হয়েছিল পত্রিকার সম্পাদকের ৷

1923 খ্রিস্টাব্দে 3 অক্টোবর একটি অস্ত্রোপচার সেরে বাড়ি ফিরে মৃত্যু হয় চিরস্মরণীয় মহিলা চিকিৎসকের ৷

আজ তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ৷ গুগল তাদের ডুডলের মাধ্যমে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে এই মহিয়সী নারীকে ৷

Last Updated : Jul 18, 2021, 12:57 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details