পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

কৃষি আইন এবং দুই 'আর' নিয়ে সরকারের অস্বস্তি - কৃষকদের বিক্ষোভের সমর্থনে টুইট

একদিকে কৃষকদের সমর্থনে রিয়ানার একটি টুইট যেমন বিশাল সমর্থন পেয়েছিল এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিরা এতে যোগ দেন । অন্যদিকে টিকায়েতের অশ্রুপূর্ণ ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ।

top 11
top 11

By

Published : Feb 7, 2021, 3:08 PM IST

Updated : Feb 7, 2021, 7:35 PM IST

হায়দরাবাদ : তিনটি নতুন কৃষির আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিক্ষোভের সমর্থনে টুইট করার পর পপ সুপারস্টার রিয়ানা মঙ্গলবার ইন্টারনেটে ঝড় তুলে দিয়েছিলেন । দিল্লিতে সাধারণতন্ত্র দিবসে হিংসার পর কৃষকদের প্রতিবাদ ভাঙতে শুরু করেছিল এবং বিশ্বাসযোগ্যতাও হারাচ্ছিল । কিন্তু কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের কান্না সেই প্রতিবাদ নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে । যিনি আবেগের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জানান যে তিনি আত্মহত্যা করবেন । তবুও প্রতিবাদ থামিয়ে দেবেন না ।

কৃষকদের সমর্থনে রিয়ানার একটি টুইট যেমন বিশাল সমর্থন পেয়েছিল এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিরা এতে যোগ দেন, তেমনই টিকায়েতের অশ্রুপূর্ণ ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কয়েক হাজারেরও বেশি মানুষ মিরাট, হাপুর, মুজাফফরনগর, শামলি ও উত্তর প্রদেশের পশ্চিম অংশের অন্যান্য এলাকা থেকে রাস্তায় নেমে পড়েন, আর গাজিপুর সীমানায় কৃষকদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন ।

মজার বিষয়, 27 জানুয়ারি পুলিশ এবং সিআরপিএফ প্রতিবাদকারীদের ওই জায়গা থেকে সরে যেতে বলেন । তারপর গাজিপুরের প্রতিবাদস্থল ক্রমশ ফাঁকা হতে শুরু করে । কিন্তু মধ্যরাতের মধ্যে কৃষক ও সমর্থকরা নতুন করে জড়ো হয়ে আবার বিষয়টিকে জাগিয়ে তোলেন । বিক্ষোভকে থামিয়ে দিতে সমস্ত সীমানাতেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল । রেজারের তারের স্পুল, ভারী ধাতব ব্যারিকেড, পাথরের বোল্ডারের একাধিক স্তর এবং সারি সারি কংক্রিটের ব্যারিকেড গাজিপুর, সিঙ্ঘু এবং টিকরি সীমানায় প্রধান সড়কগুলির উপর রেখে দেওয়া হয় । কংক্রিটের স্ল্যাব রাখা হয় যাতে কৃষকরা সেখানে উপস্থিত না হয় । আর রাস্তায় পেরেক পুঁতে দেওয়া হয়, যাতে কৃষকরা সেখানে বসে বিক্ষোভ দেখাতে না পারেন ।

তবে রাকেশ টিকায়েত ও রিয়ানা, এই দুই আর সরকারের পরিকল্পনা পুরোপুরি উল্টে দিয়েছে এবং সরকারকে সকলের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । রিয়ানার টুইটগুলি কৃষকদের প্রতিবাদের প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলে মনে হচ্ছে ।"আমরা কেন এই বিষয়ে কথা বলছি না?" বার্বাডোজের সঙ্গীত শিল্পী টুইটারে তাঁর 101 মিলিয়ন ফলোয়ারের উদ্দেশ্যে এই পোস্ট করেছেন । সরকার যখন এই প্রতিবাদকে বাস্তবে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল, তখন কিছু অ্যাকাউন্ট ব্লক করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী নেতা ও সেলিব্রিটিদের পোস্টের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তাতে তারা স্পষ্টতই হার অনুভব করছে ।

এর পরে যা ঘটেছিল তা অত্যন্ত অস্বাভাবিক ছিল : বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয় । সেখানে কৃষকদের বিক্ষোভ সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য বিদেশিদের কড়া নিন্দা করা হয় । বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, "স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলি এই বিক্ষোভের বিষয়ে তাঁদের অ্যাজেন্ডা কার্যকর করার চেষ্টা করছে এবং এটাকে লক্ষ্যচ্যূত করছে । এটা দুর্ভাগ্যজনক ।" মন্ত্রকের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়, “এই জাতীয় বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য তাড়াহুড়ো করার আগে আমরা অনুরোধ করব যে সত্যতা যাচাই করে দেখা উচিত এবং বিষয়গুলি ভালো ভাবে বোঝা উচিত । সংবেদনশীল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাশট্যাগ ও মন্তব্যের প্রলোভন যখন তা বিশেষ করে সেলিব্রিটি এবং অন্যদের তরফ থেকে আসে, তখন সঠিকও হয় না আর দায়িত্বপূর্ণও হয় না ।” বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্যে দু’টি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাশট্যাগও ছিল : ‘# ইন্ডিয়াটুগেদার’ এবং ‘#ইন্ডিয়াএগেনস্টপ্রোপাগান্ডা’, যা তখন বেশিরভাগ ভারতীয় বলিউড সেলিব্রিটি এবং অন্যান্য নেতারা ব্যবহার করেছিলেন । বহু ভারতীয় সেলিব্রিটি এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন, যাতে মানুষ এই ‘প্রোপাগান্ডায়’ পা না দেয় ।

রিয়ানার এই টুইটের পরে কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ, জলবায়ু নিয়ে একজন আন্দোলনকারী এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভাগ্নি আইনজীবী লেখক মীনা হ্যারিসও কৃষক বিক্ষোভের সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন ।

আরও পড়ুন: ঈশ্বরের পতন ! "সব শ্রদ্ধা হারালাম" জানিয়ে দিলেন ভক্তরা

সীমানায় কংক্রিটের বাধা তৈরি থেকে শুরু করে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া পর্যন্ত সরকার বিক্ষোভ থামাতে অনেক প্রচেষ্টা করেছিল । কিন্তু তা ইতিমধ্যেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে । বিষয়টি সামলাতে গিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের জারি করা বিবৃতির ফল উল্টো হয়ে যায় । অনেক নাগরিক এই ভেবে বিস্মিত হয়েছেন যে সরকারের যদি কোনও এক ব্যক্তির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিবৃতি দিতে হয়, তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কেন কিছু বলা হয়নি ? বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক কে সি সিং টুইট করেছেন : “বিদেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন মুখপাত্র হিসেবে আমি এর মধ্যে যথার্থতার অভাব দেখে দুঃখিত । স্পষ্টতই এটার খসড়া অন্য কোথাও করা হয়েছে এবং নির্দেশ অনুসারে জারি করা হয়েছে ।”

আরও পড়ুন: এবার 'সুর সম্রাজ্ঞী', 'বেসুরো' ভাষায় আক্রমণ ভক্তদের, ভারতরত্ন নিয়ে উঠল প্রশ্ন

অনেক পর্যবেক্ষক ও রাজনীতিবিদরা সরকারের এই অবস্থানের সমালোচনা করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে এটি ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক তভলিন সিং বলেছেন : "ভারত সরকার যদি মায়ানমারের অভ্যুত্থানের নিন্দা করে, তবে তা কি সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হবে? গতকাল রিয়ানার বিরুদ্ধে যে ভারতীয় সেলিব্রিটিরা বক্তব্য রেখেছিল, তাঁদের অবশ্যই এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতে হবে ।"

আরও পড়ুন: ভেবেচিন্তে কথা বলুন, সচিনকে পরামর্শ পাওয়ারের

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলনকারী গ্রেটার বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভূক্ত করা হয়েছে । এতে বিষয়টি আরও বৃদ্ধি পেয়ে যায় । কিন্তু দিল্লি পুলিশ স্পষ্ট জানিয়েছে যে কৃষকদের প্রতিবাদ নিয়ে টুলকিটের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই টুলকিটই টুইটারে শেয়ার করেন গ্রেটা ।

আরও পড়ুন : সচিন, লতাদের টুইট করতে বলা উচিত হয়নি সরকারের; মন্তব্য রাজ ঠাকরের

উল্টো প্রতিক্রিয়া হওয়ার পর অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন যে ওই টুইটগুলির বিষয়ে সরকারের দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়া আদৌ দরকার ছিল কি না । এমন একটি সময় যখন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে, সিএএ ও এনআরসি-র মতো আইন হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের উপর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নিয়ে ভারত বিশ্বব্যাপী সমালোচনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে । তখন কৃষকদের বিক্ষোভ, যা এখনই শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই । তা নিয়ে এই কাজ বিশ্বব্যাপী বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই করা হয়েছে ।

Last Updated : Feb 7, 2021, 7:35 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details