নয়াদিল্লি, 19 নভেম্বর :রাহুল গান্ধি (Rahul Gandhi) থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal), কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করতেই উচ্ছ্বসিত অবিজেপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ৷ এমনকী, বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও (Yogi Adityanath) কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ৷
শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় ওই তিনটি কৃষি আইন বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ৷ তার কয়েক ঘণ্টা পরই এই প্রসঙ্গে একটি টুইট করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি ৷ তাতে সরাসরি নরেন্দ্র মোদির সরকারকেই নিশানা করেন তিনি ৷ লেখেন, ‘‘দেশের অন্নদাতাদের সত্যাগ্রহ অহঙ্কারের মাথা হেঁট করে দিয়েছে ৷ অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন ! জয় হিন্দ, হিন্দের কৃষকের জয় !’’ প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস ৷ দলের নেতারা বহুবার বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সরব হয়েছেন ৷ তাই, স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের এদিনের পদক্ষেপকে কংগ্রেস তার নৈতিক জয় হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে ৷ অন্তত এমনটাই মনে করছে, ওয়াকিবহাল মহল ৷
অন্যদিকে, পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোৎ সিং সিধুর (Navjot Singh Sidhu) বক্তব্য হল, গুরুনানকের জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন ৷ পঞ্জাবের উচিত ক্ষমা করে দেওয়া ৷ কারণ, নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে ৷ সিধু মনে করেন, কোনও রাজনৈতিক দলের এই ঘটনার জন্য কৃতিত্ব নেওয়া উচিত নয় ৷ কারণ, যা হয়েছে, সেটা শুধুমাত্র সংযুক্ত কিষান মোর্চার আন্দোলনের ফল ৷ কৃষক আন্দোলনকে ভেস্তে দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে ৷ কিন্তু, আন্দোলনকারীরা তাঁদের লড়াই থেকে সরেননি ৷
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নির (Charanjit Singh Channi) বক্তব্য, দেরিতে হলেও সুমতি হয়েছে কেন্দ্রের ৷ কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি ৷ পাশাপাশি, এই আন্দোলনে যে কৃষকরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণেরও দাবি তুলেছেন চরণজিৎ ৷
আরও পড়ুন :Farm Laws Repeal : আইন প্রত্যাহারের ঘোষণায় সিঙ্ঘু-টিকরি বর্ডারে মিষ্টি বিতরণ কৃষকদের
তবে কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষিত হওয়ার পর একজনের মন্তব্য বিশেষভাবে নজর কেড়েছে ৷ তিনি পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেসত্যাগী রাজনীতিক ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং (Amarinder Singh) ৷ এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অমরিন্দর বলেন, ‘‘আমি তো তিনমাস ধরেই বলছিলাম ৷ আমি বলেছিলাম, কৃষকস্বার্থ সবার আগে ভাবতে হবে, তারপরই আসন সমঝোতা নিয়ে আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব ৷’’ প্রসঙ্গত, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী পদে এবং পরে কংগ্রেসের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন অমরিন্দর ৷ এমনকী, তাঁর বিজেপিতে যাওয়া নিয়েও একটা সময় গুঞ্জন শুরু হয়েছিল ৷ পরে অবশ্য অমরিন্দর জানান, নতুন দল গড়তে চলেছেন তিনি ৷
মোদির কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণায় বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
সরকারের পদক্ষেপে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিরোমণি অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কউর বাদলও (Harsimrat Kaur Badal) ৷ তিনি বলেন, ‘‘আজ এমন একটা দিন, যা ইতিহাসে লেখা থাকবে ৷ আজ এমন একটা দিন, যখন সেই 800 কৃষককে স্মরণ করা হবে, যাঁরা কৃষি আইন বাতিলের জন্য নিজেদের জীবন দান করেছেন ৷ আমরা তাঁদের কোনও দিন ভুলতে পারব না ৷ আমরা কখনও তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারকে ধন্যবাদও জানাতে পারব না ৷’’ প্রসঙ্গত, নয়া তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদেই মোদির মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন হরসিমরত ৷ যার জেরে পরে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়েও যায় শিরোমণি অকালি দল ৷ ভেঙে যায় দীর্ঘদিনের জোট ৷
আরও পড়ুন :Farm Laws Repeal : সংসদে কৃষি আইন প্রত্যাহার হলেই আন্দোলনে ইতি, জানালেন রাকেশ টিকায়েত
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ৷ তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র যে মানুষের কথা শুনতে বাধ্য, তা কৃষকরা প্রমাণ করে দিলেন ৷ জলকামান, লাঠি সব ভোঁতা হয়ে গিয়েছে ৷ কৃষকদের দৃঢ়তার সামনে পেরেকও গলে গিয়েছে ৷ আন্দোলন বন্ধ করতে সরকার সবরকম চেষ্টা করেছে, কিন্তু কৃষকরা হার মানেননি, তাঁরা খুব ভাল লড়াই করেছেন ৷’’
তবে শুধুমাত্র বিরোধীরা নন, নয়া তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও ৷ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তাঁর পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছি ৷ যদিও বহু মানুষই মনে করেন, ওই তিন আইন কার্যকর করা হলে কৃষকদের রোজগার বৃদ্ধিতে তা বড় ভূমিকা পালন করত ৷ কৃষক সংগঠনগুলি যখন এই আইনের প্রতিবাদ করে, তখন সরকার সবরকমভাবে তাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টাও করেছিল ৷’’ প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে হরিয়ানার বিজেপি সাংসদ (রাজ্যসভা) দুষ্যন্ত কুমার গৌতমের গলাতেও ৷