নয়াদিল্লি, 5 অক্টোবর:হিমবাহের হ্রদ উপচে বন্যা বা গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড (GLOF)-এর কারণে সিকিমের চুংথাম বাঁধে জলের বিস্ফোরণের সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা ৷ তাঁরা বলেছিলেন, পাহাড়ি এই রাজ্যে ভূমিকম্পপ্রবণ ওই এলাকায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কারণে ঘনিয়ে আসতে পারে এমন ভয়াবহ বিপদ ৷
চুংথাম বাঁধ সিকিমের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প । এটি 1,200 মেগাওয়াটের তিস্তা স্টেজ থ্রি হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রজেক্টের অংশ । 25,000 কোটি টাকার এই প্রকল্পের 60 শতাংশের কিছু বেশি রয়েছে সিকিম সরকারের আওতায় ৷ বাঁধটি উত্তর সিকিমের মঙ্গন জেলায় অবস্থিত । এটি 2017 সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয় এবং প্রত্যাশিত ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর গত বছর থেকে লাভ করা শুরু করে । দুটি হিমবাহ-প্রবাহিত নদী লাচুং ও লাচেন, চুংথামের দক্ষিণ প্রান্তে মিলিত হয়ে তিস্তা নদী গঠন করেছে । এখানেই চুংথাম বাঁধ নির্মিত হয়েছিল ।
গত চার অক্টোবর ঠিক কী ঘটে ? এটি উত্তর-পশ্চিম সিকিমে অবস্থিত দক্ষিণ লোনাক হ্রদের জিএলওএফ ছিল অর্থাৎ গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড । সিকিম হিমালয় অঞ্চলের দ্রুততম প্রসারিত হ্রদগুলির মধ্যে অন্যতম এই লোনাক হ্রদ ৷ এটি 14টি সম্ভাব্য বিপজ্জনক হ্রদের মধ্যে একটি হিসাবে পরিচিত, যেগুলি জিএলওএফ-এর জন্য সংবেদনশীল । হ্রদটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 5,200 মিটার (17,100 ফুট) উপরে অবস্থিত । লোনাক হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে এটি তৈরি হয়েছে । লোকেরা প্রাথমিকভাবে ভেবেছিল যে, মেঘ ভাঙা বৃষ্টিরর কারণে হড়পা বানের ফলে এই বন্যা পরিস্থিতি ৷ তবে সেটা ছিল আসলে গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড ৷
জিএলওএফ কী ? জিএলওএফ হল জলের বিস্ফোরণের কারণে এক ধরনের বন্যা, হিমবাহে জল বাধা পেলে এটা ঘটে ৷ হিমবাহের সম্মুখভাগ দ্বারা আটকানো জলাশয়কে প্রান্তিক হ্রদ বলা হয় ৷ হিমবাহ দ্বারা আবদ্ধ জলাশয়কে উপ-হিমবাহী হ্রদ বলে । যখন একটি প্রান্তিক হ্রদ ফেটে যায় বা উপচে পড়ে, তখন এটিকে প্রান্তিক হ্রদ নিষ্কাশনও বলা যেতে পারে ।
আরও পড়ুন:জলপাইগুড়িতে তিস্তায় ভেসে ওঠা 17 দেহ কি নিখোঁজ জওয়ানদের !
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে দক্ষিণ লোনাক হ্রদ তৈরি হচ্ছে । এই তথ্য পাওয়ার পরে, সিকিম সরকার হ্রদের জল নিষ্কাশনের জন্য একটি দল পাঠায় । কিন্তু যেহেতু হ্রদটি অস্বাভাবিকভাবে তৈরি হচ্ছে, তাই দলটির পক্ষে জল বের করা খুব কঠিন ছিল । এলাকায় বিদ্যুৎ না-থাকায় সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প ব্যবহার করা যাচ্ছে না । দলটি সাধারণ কিছু জল শুষে নেওয়ার পাইপ সেখানে স্থাপন করেছিল, কিন্তু এগুলি যথেষ্ট ছিল না ।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বুধবার দক্ষিণ লোনাক হ্রদের 28 সেপ্টেম্বর থেকে 4 অক্টোবরের মধ্যে তোলা স্যাটেলাইট চিত্রের ভিত্তিতে একটি বিবৃতি জারি করেছে । 17 সেপ্টেম্বর, 28 সেপ্টেম্বর এবং 4 অক্টোবরে হ্রদ এলাকায় অস্থায়ী পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছে।