কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে লকডাউন জারি করা হয়েছিল । এর ফলে অসংখ্য পরিশ্রমী মানুষের জীবনে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয় । অতিমারীর কারণে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জেরে আচমকা যে অবস্থার পরিবর্তন হয়, তাতে প্রায় 270 কোটি মানুষ জীবিকা হারিয়েছেন । রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্টে এমনটাই উঠে এসেছে । তাঁদের বেশিরভাগই অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে কাজ হারিয়েছেন । লকডাউনের ফলে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যাঁরা কোনও না কোনও ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন, তাঁদের এক তৃতীয়াংশ জীবিকা হারিয়েছেন । এমনকী 2020 সালের অক্টোবর ও ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের অন্তত 20 শতাংশের অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি । আজ়িম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয় এই তিক্ত তথ্য সামনে তুলে ধরেছে । এর জন্য তারা অন্য ছয়টি সংস্থার সহযোগিতায় একটি গবেষণা চালায় ।
তেলাঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক, মধ্য প্রদেশ, গুজরাত, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে এই সমীক্ষা করা হয় । ওই রাজ্যগুলিতে হতাশাজনক পরিস্থিতির তীব্রতা প্রকাশ্যে চলে এসেছে । বিপিএল পরিবারের বেশিরভাগই এই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশস্য জোগাড় করতে পারেননি । এর ফলে এই অংশের মানুষের মধ্যে পুষ্টির ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে । এই সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে যে গ্রামীণ অঞ্চলে 15 শতাংশ পরিবার এবং শহরাঞ্চলে 28 শতাংশ পরিবার তাদের খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারেননি । এমনকী, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি । এর জন্য তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন । এই করুণ পরিস্থিতি বদল ঘটাতে গেলে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।
দীর্ঘদিন থেকে কাজের দিনের সংখ্যা সম্পর্কে কোনও রকম বাধা ছাড়াই কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দাবি উঠছে । বিপুল সংখ্যক দেশবাসী ক্ষিদের জ্বালায় জ্বলছেন । তাই আগামী কেন্দ্রীয় বাজেটে এমএনআরইজিএস এবং আরবান এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিমগুলিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার দাবি উঠেছে । আর এই দাবিও যুক্তি সঙ্গত ।
এড়ানো সম্ভব নয়, এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্যই লকডাউন জারি করা হয়েছিল । আর তার জেরে নগর অঞ্চলের প্রায় 12 কোটি মানুষ এবং গ্রামীণ অঞ্চলের 28 কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছে । প্রায় ছয় মাস আগে এই চাঞ্চল্যকর বিশ্লেষণ প্রকাশ্যে আসে । লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেও অতিমারীর প্রভাব যে রয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে । কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিক লকডাউনের সময়ে তাঁদের গ্রামে ফিরে এসেছিলেন । তাঁদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য হয়েছে গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে । এই প্রকল্প গ্রামীণ অঞ্চলে বহু শিক্ষিত ব্যক্তিকেও স্বস্তি দিয়েছে । এই প্রকল্পে গত বাজেটে 61 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল । কিন্তু এই প্রকল্প এতটাই জনপ্রিয় হয় এবং একটা বড় অংশের মানুষকে এই প্রকল্পের অধীনে আনতে পারা যাওয়ায়, পরে এই প্রকল্পে আরও 41 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় ।
অতিরিক্ত বরাদ্দ করা সত্ত্বেও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে এই প্রকল্পের জন্য তহবিলের ঘাটতি হয়েছে । সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে এমনটাই ইঙ্গিত করা রয়েছে । এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ়িম প্রেমজি ফাউন্ডেশন এই প্রকল্পে আরও 1 লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করার এবং 200 দিনের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছে ।
আরও পড়ুন : লকডাউনের পরে চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় 73 শতাংশ ভারতীয়
অন্যদিকে পরিযায়ী শ্রমিকরা ধীরে ধীরে শহরে ফিরে আসছেন । দেশের অর্থনীতি ক্রমশ ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে । সেই কারণেই পরিযায়ী শ্রমিকরা শহরে ফিরতে শুরু করেছেন । সরকারি তরফ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্মাণ শিল্পে যুক্তদের মধ্যে 75 শতাংশ, খাদ্য পরিষেবা সংক্রান্ত ক্ষেত্রের যুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে 86 শতাংশ এবং রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে 53 শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন । সতর্কতার সঙ্গে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে । পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক সংকট কাটিয়ে তোলার জন্য শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিও চালু করতে হবে তাদের । প্রকল্পের বাছাই, প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং তার পরিদর্শনের কাজ যদি ত্রুটিহীন ভাবে করা যায়, তাহলে এই ধরনের উদ্যোগ কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের মধ্যে নতুন জীবনের সন্ধান দিতে পারে এবং তাঁরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন ।