নয়াদিল্লি, 20 মে: দিল্লির প্রশাসনে কার নিয়ন্ত্রণ থাকবে, নির্বাচিত অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের নাকি উপ-রাজ্যপাল বা বকলমে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ৷ এই বিতর্ক কিছুতেই মিটছে না ৷ শুক্রবার রাতে কেন্দ্র সরকার দিল্লি সরকারের প্রশাসনে আমলাদের নিয়োগ ও বদলি নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করায় সেই বিবাদ নয়া মাত্রা পেয়েছে ৷ শনিবার কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন্দ্রের এই অর্ডিন্যান্স জারির সিদ্ধান্তকে 'অসাংবিধানিক ও বেআইনি' বলে উল্লেখ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ৷ বিষয়টিকে সংবিধানের মূল কাঠামোর উপর আঘাত ও সরাসরি সুপ্রিম কোর্টকে চ্যালেঞ্জ বলে বর্ণনা করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই অধ্যাদেশ নিয়ে যাতে সুপ্রিম কোর্টের রোষের মুখে পড়তে না-হয় সে কারণে শুক্রবার বিকেল 4টের সময় শীর্ষ আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই অধ্যাদেশ জারি করেছে কেন্দ্র ৷ শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, "যে কোনও সরকারের কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারি অফিসারদের সেই নির্বাচিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ৷ আদালতও বিষয়টিকে মান্যতা দিয়েছে ৷ সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার বিকেলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রাত 10টায় ওই অধ্যাদেশ জারি করেছে কেন্দ্র ৷" উল্লেখ্য, শনি ও রবিবার এমনিতেই বন্ধ থাকে আদালতের কাছ ৷ তার উপর গ্রীষ্মবকাশ পড়ে যাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে স্বাভাবিক কাজকর্ম আবার শুরু হবে 3 জুলাই ৷ আম আদমি পার্টির অভিযোগ, এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এই সময়ে এই অর্ডিন্যান্স জারি করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার ৷
পরিকল্পনা করে তাঁর নেতৃত্বে দিল্লির নির্বাচিত সরকারকে হেনস্থা করতে কেন্দ্র এই পদক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ তাঁর কথায়, "কেন্দ্র চাইলে আগে এই অধ্যাদেশ আনতে পারত ৷ কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকার অপেক্ষা করছিল আদালত বন্ধ হওয়ার ৷ এটা দেশের গণতন্ত্র, দেশের মানুষ, দিল্লির 2 কোটি মানুষের সঙ্গে একটি নিষ্ঠুর রসিকতা ৷"
উল্লেখ্য, দিল্লির প্রশাসনে আমলাদের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিবাদ চলছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে দিল্লির আপ সরকারের ৷ এই মামলায় 11 মে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ৷ প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ওই বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আমলাদের রদবদল-সহ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের ৷ ভূমি বিষয়ক ও পুলিশ বিভাগ-সহ কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র ছাড়া দিল্লির প্রশাসনে কেন্দ্র বা উপরাজ্যপাল হস্তক্ষেপ করতে পারে না ৷ দিল্লি যে অন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো নয়, তাও স্পষ্ট করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট ৷ শীর্ষ আদালতের নির্দেশের এই নির্দেশের পরেও শুক্রবার রাতে একটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা জানায় কেন্দ্র ৷ যার অর্থ, আমলাদের নিয়োগ ও বদলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এই কমিটি ৷ দিল্লি সরকারের অধিকার খর্ব করে বলা হয়েছে এই কমিটির চেয়ারপার্সন হবেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ থাকবেন মুখ্যসচিব ও প্রিন্সিপাল স্বারাষ্ট্র সচিব ৷ তবে আমলাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোনও বিরোধ হলে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন দিল্লির উপ-রাজ্যপাল ৷ যিনি আনতে কেন্দ্রের প্রতিনিধি ৷
আরও পড়ুন: কংগ্রেসের হাইকমান্ডের হাতের পুতুল সিদ্দারামাইয়া, কটাক্ষ বিজেপির